ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ কামনা

হিমালয় জয় করে দেশে ফিরলেন যুবারা

হিমালয় জয় করে দেশে ফিরলেন যুবারা

দেশের বাইরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণের সফলতা খুব একটা চোখে পড়ে না। প্রতিবার বিদেশ সফর শেষে মুখ ভার করে দেশে ফিরতে হয় লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদদের। কিন্তু এবার গাল ভরা হাসি নিয়ে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশের যুবা ফুটবলাররা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ভিআইপি গেট দিয়ে বাইরে আসতেই অর্ধশতাধিক সাংবাদিকদের মুখোমুখি মেহেদী হাসান, মিরাজুল ইসলাম, পিয়াস আহমেদরা। নেপাল যাওয়ার আগে যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হওয়ায় খুশি কোচ মারুফুল হক। তার কথা, ‘টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই নেপালে গিয়েছিলাম। তবে তার আগে শক্তিশালী ভারতকে হারাতে হবে। নেপালের সঙ্গে গ্রুপ পর্বে আমরা হেরে যাওয়ায় সেমিফাইনালেই ভারতের সঙ্গে ম্যাচ পড়ে গিয়েছিল। ওরা অনেক আক্রমণ করছিল। কিন্তু কখনই মনে হয়নি আমরা হেরে যাবো। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কারণ এটা নিয়ে ছেলেদের বিশেষ প্রস্তুতি ও লক্ষ্য ছিল। আমার বাড়তি কাজ করতে হয়েছে, যাতে ওরা মাথা ঠান্ডা রেখে খেলে।’ ফাইনালে নেপালের খেলা সম্পর্কে কোচ বলেন, ‘নেপালের দুর্বলতা দুই ধরনের ছিল। আমি দেখেছি ওরা ওদের প্লেয়িং স্টাইল খুব একটা পরিবর্তন করেনি। আগের তিনটা ম্যাচ যেভাবে খেলেছে, সেই ধারাতেই খেলেছে। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল আমরা মাত্র ১৫ দিন ট্রেনিং করে ওখানে গিয়েছি। অনেকগুলো ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ফাইনালের আগে মাত্র একদিন রিকভারি টাইম ছিল।

চেষ্টা করেছি যাতে ম্যাচের আগে শতভাগ রিকভারি করে ছেলেদের মাঠে নামাতে পারি। তাদের বলা ছিল, অনেক গরম ছিল এবং টার্ফ থেকেও অনেক গরম বের হচ্ছিল। দলের অনেকেই আসলে টার্ফে খেলে অভ্যস্ত না। তাদের বলা ছিল, আমরা ধীরে ধীরে অ্যাটাকে যাব। আগে ওদের অ্যালাউ করব। তারপর আমরা কাউন্টার অ্যাটাকে যাব।’ তিনি যোগ করেন, ‘প্রথম ১০ মিনিটে দেখেছি ওরা অনেক মিস করছে এবং ওরা মানসিকভাবে অনেক চাপে ছিল মনে হয়েছে। স্বদেশি সমর্থকদের চিৎকার চেচামেচি নেপালি খেলোয়াড়রা নিতে পারছিল না। তখন কৌশল পরিবর্তন করে পজেশনালি এবং অ্যাটাকিং খেলতে বলি এবং এটারই রেজাল্ট আমরা পেয়েছি।’ নিজের মিশনের কথা বলতে গিয়ে মারুফুল হকের কথা, ‘দুইটা মিশন ছিল আমার কাছে। একটা সাফ টুর্নামেন্ট। আরেকটি এফফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাই। এখন একটা শেষ হয়েছে। ওটায়ও প্রাথমিক লক্ষ্য বাছাই উতরে চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া। এজন্য প্লেয়াররা ও আমরা প্রস্তুত আছি।’

গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবনের কথা, ‘আসলে এই ট্রফিটা অধরা ছিল। সেই প্রত্যাশা এখন পূর্ণ হলো। বিদেশে অনেক খেলোয়াড়কে ট্রফি নিয়ে ঘুমাতে দেখেছি। তাই গত (বুধবার) রাতে ট্রফি নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। আসলে সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে পেরেছি বলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।’ সর্বাধিক গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা মিরাজুল ইসলামের কথা, ‘খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এখন খুব খুশি।’ জাতীয় দলে সুযোগ পেলে খুশি হবে বলে জানান মিরাজ, ‘কোচ যদি বলেন আমি রেডি কি না, তাহলে আমি প্রস্তুত। জাতীয় দলের সঙ্গে ভুটান যেতে পারলে আমি অনেক খুশি হব। আমার ইচ্ছে ছিল ছোট থেকে জাতীয় দলে খেলা। বাইরের দেশে ১৯ বছর থেকে দেশের বাইরে খেলে। আমার ইচ্ছা পূরণ হলে খুশি হব।’ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে মিরাজুল বলেন, ‘ওই দিনটা বলে বুঝানো যাবে না। পানি ছেড়ে দিয়ে যেভাবে আমাদের কষ্ট দিয়েছে ভারত, আমরাও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তাদের টুর্নামেন্ট থেকে বের করে দিয়ে সেভাবেই কষ্ট দেব।’

সেরা গোলকিপার আসিফের কথা, ‘দেশের মাটিতে আনিসুর রহমান ভাইকে দেখেছি টাইব্রেকারে ট্রফি জিততে। বিদেশের মাটিতে আর্জেন্টাইন গোলকিপার মার্তিনেজকেও দেখেছি। তাই নিজেকেও সেভাবে প্রস্তুত করেছিলাম।’ ফরোয়ার্ড পিয়াস আহমেদ বলেন, ‘টুর্নামেন্টের প্রত্যেকটি ম্যাচই আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলাম। গ্রুপে নেপালের কাছে কিছু ভুলের কারনে হেরেছিলাম। পরে গ্রুপ স্টাডি করে দ্বিগুণ প্রচেষ্টা করে ফাইনালে জিতেছি। এখন আমাদের বেশি বেশি খেলতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখার আকুতি জানিয়ে পিয়াস বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে প্রথম ট্রফি এনেছি আমরা। নতুন সরকারের কাছে চাওয়া- যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, তাদের যেন দেখেন। তাছাড়া আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাই। যদি উনি কথা বলেন, তাহলে আমরা উজ্জীবিত হব।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত