অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে খেলার অনিয়ম-অসঙ্গতি তুলে ধরুন

ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ক্রীড়া উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশে পরিবর্তনের জোয়ার বইছে। অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করতে সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দেশের সব উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল সোমবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অডিটরিয়ামে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মতবিনিময়কালে ক্রীড়াঙ্গনের অনিয়ম, অসঙ্গতি তুলে ধরতে ক্রীড়া সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সভার শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক লেনদেনের অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিভাবক হয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে ক্রিকেট বোর্ডে আলাদা করে অডিটের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। প্রতি বছর মহিলা ক্রীড়া সংস্থার পেছনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়। এর বিপরীতে ক্রীড়াঙ্গনে সেভাবে কোনো প্রাপ্তি নেই। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার বিলুপ্তির পরামর্শও এসেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অবকাঠামো খাতে টেন্ডার প্রক্রিয়া ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি দলের প্রভাব ছাড়াও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকার অভিযোগ বেশ পুরানো। ফেডারেশনের সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনিয়ম তদন্তের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আয়ের অন্যতম উৎস স্টেডিয়ামে দোকান ভাড়া। সেই দোকান থেকে ইজারাদার অনেক অর্থ পেলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পায় খুবই সামান্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভাড়া দেয়া দোকানের প্রকৃত মালিকের নাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশের দাবি উঠেছে আলোচনা সভায়। পাশাপাশি স্টেডিয়ামে দোকান খাত থেকে রাজস্ব না পাওয়ার বিষয়টিও উঠেছে। দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশন মিলিয়ে সংখ্যা ৫৫। ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য ফেডারেশনে গত ১ মাসে খেলাধুলা একেবারেই নেই। ফেডারেশনগুলো সচল করে আগে খেলাধুলার মাঠে গড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আরো অনেক বিষয় নিয়ে কথা উঠেছে।

ক্রীড়া সাংবাদিকদের মতামত, পর্যবেক্ষণ ও অভিযোগ শুনে সবার শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আমরা পর্যালোচনা করবো। ক্রীড়াঙ্গনে আপনারা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছেন। আপনাদের পর্যবেক্ষণকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। এজন্য সার্চ কমিটিতে দুই জন এবং জেলা পর্যায়েও ক্রীড়া সাংবাদিক প্রতিনিধি রেখেছি। সার্চ কমিটি ফেডারেশনগুলো পর্যালোচনা করে আমাদের প্রতিবেদন দেবে। আমরা এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’ এরপর দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে নানান ব্যাখ্যা দিয়েছেন উপদেষ্টা, ‘দুর্নীতি মূলত হয় সিন্ডিকেট গঠন করার কারণে। প্রতিটি জায়গায় যাদের দায়িত্ব দেয়া হয় তারা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে ফেলে। সেভাবেই নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে যেটা বলা হয় আর কি... পরিচালনা করে। সিন্ডিকেট যাতে না হতে পারে সেরকম একটা ব্যবস্থা... আমরা তো প্রতিটি জায়গায়...কিংবা উপজেলায় ধরে ধরে ঠিক করতে পারবো না। সেই জায়গায় সিন্ডিকেট যেন না হতে পারে সেই ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক, ছাত্র প্রতিনিধি রেখেছি। উপজেলাগুলোতে যারা ছাত্র প্রতিনিধিরাই ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কাজ করে। তাদের রাখা হচ্ছে। আমাদের নির্দেশনা সাবেক ক্রীড়া সাংবাদিকও যেন থাকে। প্রতিটি জায়গায় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।’ ক্রীড়া উপদেষ্টা সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা এর আগে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। আশা করি সামনেও করবেন। শুধু খেলোয়াড় কী করলেন, কী খেলেন এর বাইরেও খেলার অনিয়ম-অসঙ্গতি অনুসন্ধান প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে আনবেন। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দিকটিও নিয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘দর্শক হিসেবে আগে দেখেছি থাম্বলাইন ও শিরোনাম এক রকম আর কন্টেন্ট অন্যরকম। অনেক প্রতিবেদন দেখেছি অনুমাননির্ভর। যা খেলার আগে খেলোয়াড়দের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।’ উপদেষ্টা বক্তব্য শেষ করার পর দুইজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধু ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের পরিবেশের বিষয়টি উথাপন করেন। ক্রীড়া উন্নয়নের আগে ক্রীড়া পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। এর প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমি বাইরের কোনো মানুষ নই। এই সমাজেরই একজন। স্টেডিয়াম এলাকায় এর আগেও গিয়েছি। এখনও আসছি। আমি খবর না দিয়ে আকস্মিক পরিদর্শন পছন্দ করি। এতে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।’ মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্রীড়া বিভাগের প্রধান, যুগ্ম ক্রীড়া সম্পাদকসহ শীর্ষ ক্রীড়া সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন। সময় স্বল্পতায় অনেকে বক্তব্য রাখতে না পারলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে মেইলের মাধ্যমেও মতামত প্রদানের অনুরোধ করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।