অনুভূতি প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না শান্ত

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে পাকিস্তানি পেসারদের আঁতুড়ঘর বলা হয়। একই সঙ্গে দেশটির সাবেক তারকা পেসার শোয়েব আকতারের হোম ভেন্যুও এটি। আর সেখানেই সেখানেই ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের পেসাররা। বাংলাদেশের পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে একেবারে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে স্বাগতিক ব্যাটারদেরা। বোলাররা যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন, ব্যাটার-ফিল্ডারদের পারফরম্যান্সও ছিল অবিশ্বাস্য ভালো। সম্মিলিত পারফরম্যান্সে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। অথচ পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে কখনোই কোনো টেস্ট ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে এটা শুনে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, এই ধারা এবার বদলে দিতে চান তারা। কথা রেখেছেন তিনি। কথা রেখেছে তার দল। শুধু টেস্ট জয় নয়, ইতিহাস গড়েছেন তারা সিরিজ জিতে। এমন সাফল্যের পর অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করতে উপযুক্ত ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। পাকিস্তানের বিপক্ষে এবারের সিরিজের আগে ১৩ টেস্টে বাংলাদেশের সম্বল ছিল স্রেফ একটি ড্র। হারতে হয়েছিল বাকি ১২ টেস্টেই। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে জয় ছিল কোনো সংস্করণেই। এবার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে জিতেই তাই একটা ইতিহাস গড়া হয়ে যায় শান্তদের। এরপর চ্যালেঞ্জে ছিল ইতিহাসের নতুন সীমানায় পা রাখার। দেশে-বিদেশে আগেও এমন হয়েছে, প্রথম টেস্টে স্মরণীয় জয়ের পর প্রত্যাশায় টইটম্বুর বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে পরের টেস্টে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে স্মরণীয় সেই জয়ের পর ক্রাইস্টচার্চে হারতে হয়েছে বাজেভাবে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই গত বছর সিলেটে জয়ের পর হারতে হয়েছে মিরপুরে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৭ সালে মিরপুরে জয়ের পর পরাজয় এসেছে চট্টগ্রামে। তবে এবার ভেন্যু যেমন রয়ে গেছে একই, ফলও রয়ে গেছে তেমনই। বাংলাদেশের আরো একটি জয় এবং ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা। ম্যাচের পর সেই উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল শান্তর কণ্ঠে। দলের সবাইকে জয়ের কৃতিত্ব দিলেন অধিনায়ক। ‘এটি আমাদের কাছে অনেক কিছুৃ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। সত্যিই খুব খুশি আমরা। এখানে আসার আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল জয়। সবাই যেভাবে নিজেদের কাজটা করেছে, তাতে খুবই খুশি আমি।’ নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, সবাই অবদান রেখেছে এই সিরিজে। দলীয় পারফরম্যান্সে এই সাফল্য এসেছে। যারা খেলার সুযোগ পায়নি, তারাও মাঠের বাইরে অনেক পরিশ্রম করেছে। আমরা সবসময় তাদের কথাই বলি যারা রান করে বা উইকেট নেয়। কিন্তু সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জয় এসেছে।’

ম্যাচের চতুর্থ দিনে সোমবার তরুণ দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদের আগুনে বোলিংয়ে উজ্জ্বল হয় বাংলাদেশের স্বপ্ন। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা দুই পেসার গুঁড়িয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটিং। তাদের প্রশংসা করতে গিয়ে অধিনায়ক তুলে ধরলেন মাঠের বাইরে তাদের পরিশ্রমের কথা, শোনালেন গোটা দলের জয়ের তাড়নার কথা। ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের ওয়ার্ক এথিক। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে কাজ করেছে তারা, সেটির ফল পেয়েছে। সবাই নিজের প্রতি সৎ থেকে কাজ করেছে।

জিততে মরিয়া ছিল সবাই। সেটিই দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আশা করি, এটা ধরে রাখতে পারব আমরা।’

সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেয়েছিল মাহমুদুল হাসান জয়ের চোটে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে প্রথম টেস্টে দারুণ ব্যাট করে জয়ের ভিত গড়ে দেন সাদমান ইসলাম। আরেক ওপেনার জাকির হাসান গোটা সিরিজে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও শেষ ইনিংসে তার ক্যামিও দলকে জোগায় রান তাড়ার সাহস। তাদের কথাও আলাদা করে বললেন শান্ত। ‘জয়ের খানিকটা চোট ছিল বলে খেলতে পারেনি। কিন্তু সাদমান যেভাবে ব্যাট করেছে, বিশেষ করে প্রথম টেস্টে ৯৩ রানের ইনিংসটি ছিল দুর্দান্ত। জাকির গতকালকে যেভাবে ৬-৭ ওভারে ব্যাট করেছে, মোমেন্টাম আমাদের পক্ষে চলে এসেছে। ওদের কাছ থেকে আমরা এমন কিছুই চাই।’ দুই টেস্টেই দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। অধিনায়কের আশা, এই মাসের ভারত সফরে আরও ভালো কিছু পাওয়া যাবে অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। ‘পরের সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরিজ আমাদেরকে দারুণ আত্মবিশ্বাস জোগাবে। মুশি ভাই, সাকিব ভাই, লিটন, মুমিনুল, তারা অনেক খেলেছে এবং দারুণ অভিজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতা তারা মেলে ধরেছে এখানে। আশা করি, ভারতে তারা আরো ভালো খেলবে।’

মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে আলাদা করে বলতে হতোই। দুই টেস্টে মহামূল্য দুটি ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতে বিরুদ্ধ উইকেট ও কন্ডিশনেও দারুণ পারফরম্যান্স তার। ম্যান অব দা সিরিজের পুরস্কারও পেয়েছেন তাই তিনি। অধিনায়কের আশা, ভারতের বিপক্ষে সিরিজেও একই রূপে দেখা যাবে এই অলরাউন্ডারকে। ‘এই কন্ডিশনে যেভাবে প্রথম ইনিংসে বল করেছে সে, তা দারুণ ছিল। যেভাবে কাজ করেছে সম্প্রতি, কোচদের সঙ্গে কথা বলেছে, সবই দারুণ। আশা করি, ভারতের বিপক্ষে এটা ধরে রাখবে।’