বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারে চোখ মিরাজের

৮ নম্বরের সেরা ব্যাটসম্যান হতে চাই না, উপরের দিকের সেরা ব্যাটসম্যান হতে চাই

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

এতদিন দলে সাকিব আল হাসানের ছায়া হয়েই ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আস্তে আস্তে সেই ছায়া থেকে বেড়িয়ে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছেন তিনি। ব্যাটে-বলে নিজেকে উজার করে দিয়ে দলের সেরা পারফর্মারের তকমা আদায় করে নিচ্ছেন। এই ছন্দ ধরে রেখে শীর্ষে উঠার সুযোগ এই অলরাউন্ডারের সামনে। কারণ, ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় অবস্থান করছেন সাকিব। সামনে আর খুব বেশি দিন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের সার্ভিস পাবে না বাংলাদেশ। সেই শঙ্কার মধ্যেই আশা দেখাচ্ছেন মিরাজ। গত এক বছরে টেস্ট সংস্করণে দেশের সেরা পারফরমার তিনি। তবে দেশের সেরাতে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না মিরাজ। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে অগ্রজ সাকিব আল হাসানের মতো অর্জন করতে চান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মুকুট। পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে বড় কারিগর মিরাজ। দুই টেস্টেই ব্যাট হাতে খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। বোলিংয়েও দুই ম্যাচে প্রয়োজনের সময় এনে দেন মূল্যবান উইকেট। সব মিলিয়ে দুই ইনিংসে ১৫৫ রান ও বল হাতে ১০ উইকেট নিয়ে তিনিই জেতেন সিরিজসেরার পুরস্কার। শুধু বোলার পরিচয় থেকে বেরিয়ে ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার ছাপটা বেশ ভালোভাবেই রাখছেন মিরাজ। গত এক বছরে ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে বেশ সফল তিনি। এই সময়ে দেশের হয়ে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ৩২৬ রান তার। আর বোলিংয়ে নেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ উইকেট। সব মিলিয়ে নিখুঁত অলরাউন্ডার হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠছেন তিনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আসছে দলের আরেক অলরাউন্ডার সাকিবের প্রসঙ্গ। দীর্ঘ দিন তিন সংস্করণেই আইসিসি র?্যাংকিংয়ের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন সাকিব। এখন তার ক্যারিয়ারের শেষ দিকে ব্যাটে-বলে উত্থান ঘটছে মিরাজের। ভারত সফরের প্রস্তুতি শুরুর আগে গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মিরাজ জানালেন, তার নিজেরও আশা একসময় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়ার। ‘একটা দলে যদি দুইটা অলরাউন্ডার খেলে, দলের জন্য অনেক সুবিধা থাকে। যেহেতু আমার ব্যাটিং ভালো হচ্ছে। শুরুতে আমার ব্যাটিং এতটা ভালো ছিল না, দল এতটা পায়নি আমি বোলার হিসেবেই খেলেছি। যেহেতু এখন আমি নিজে অবদান রাখতে পারছি ভালো লাগছে। অবশ্যই অনুশীলন করতে হবে। এটা এক দুই দিনে সম্ভব না (বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার হওয়া)। লম্বা সময় ভালো খেলতে হবে। যদি আমি লম্বা সময় যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে অলরাউন্ডার (বিশ্বসেরা) হতে পারব।’ শুধু সবশেষ সিরিজই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে নিজের সেরা ছন্দ থেকে অনেকটাই দূরে সাকিব। আর এই সময়ে মিরাজের পারফরম্যান্স ঠিক বিপরীত। তাই বলা যায়, প্রাসঙ্গিকভাবেই শুরু হয়েছে সাকিবের ছায়া থেকে তার বের হওয়ার আলোচনা। এ ছাড়া সাকিবের বয়স হয়ে গেছে ৩৭ বছর। ক্যারিয়ারের শেষের অংশটাও হয়তো শুরু হয়ে গেছে তার। মিরাজের বিশ্বাস, সাকিবের বিদায়ের পর দলের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তিনি। ‘এখন আমরা দুজনই খেলছি, দুজনই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি। সবারই একটা পর্যায়ে অবসরে যেতে হয়। সব দলেই কিন্তু এমন আছে যে বদলি ক্রিকেটার আসা। সাকিব ভাই যখন খেলবে না, তখন হয়তো আমার দায়িত্বটা আরো গুরুত্বপূর্ণ হবে দলের জন্য।’ অভিষেকের পর থেকেই টেস্টে বোলার হিসেবে দলের নিয়মিত সদস্য মিরাজ। তবে পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছে মূলত ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক হওয়ার পর থেকে। ৮ নম্বরে নেমে গত কয়েক বছর ধরেই কার্যকর সব ইনিংস খেলছেন মিরাজ। ২০২০ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৮ নম্বরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ৬৭৩ রান করেছেন তিনি। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে এই সময়ে তার ফিফটি চারটি। আর কারো নেই ৫টি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস। তবে ৮ নম্বরে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার ইচ্ছা নেই মিরাজের।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ওপরের দিকের বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান হতে চান। তাই তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কত নম্বরের সেরা হতে চান তিনি? উত্তরে নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যাটিং পজিশনের কথা অবশ্য বলেননি মিরাজ। ‘হ্যাঁ! ৮ নম্বরের সেরা হতে চাই না। কারণ ৮ নম্বরে ব্যাটিং করা অনেক চাপ (হাসি)। অনেক সময় পরিস্থিতি থাকে, দল অনেক ভালো খেলেছে, তারপর আমার ৮ নম্বরে নামতে হয়। আবার এমন পরিস্থিতিও থাকে, দলের সব ব্যাটসম্যানরা খারাপ করেছে, তারপর আমার চাপের মধ্যে নামতে হয়। জিনিসটা ওই ইঙ্গিতে আমি বলেছিলাম, যে ৮ নম্বরের সেরা ব্যাটসম্যান হতে চাই না, ওপরের দিকের সেরা ব্যাটসম্যান হতে চাই।’