লাতিন আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন, সেইসঙ্গে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচজুড়ে নিজেদের ছায়া হয়ে রইল তারা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিলো কলম্বিয়া। গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে আলবিসেলেস্তেদের কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল কলম্বিয়ার। প্রায় দুই মাস পর ফের মুখোমুখি সাক্ষাতে পেরে উঠল না লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ব্রাজিলের আর্জেন্টিনার অজেয় যাত্রা থামিয়ে পুরোনো ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিলো কলম্বিয়ানরা। চোটের কারণে অনেকদিন ধরেই আর্জেন্টিনার দলে নেই লিওনেল মেসি। চিলির বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেছেন ডি মারিয়া। দুই অভিজ্ঞ ফুটবলারকে ছাড়া তারুণ্যে ভরপুর এক দল সাজিয়েছিলেন লিওনেল স্ক্যালোনি। তবে কোচের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তরুণ ফুটবলাররা। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে হুলিয়ান আলভারেজ-লাউতারো মার্টিনেজদের। গত মঙ্গলবার রাতে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ম্যাচে প্রতিপক্ষের মাঠে ২-১ গোলে হেরেছে আর্জেন্টাইনরা। ইয়ের্সন মসকেরা স্বাগতিকদের এগিয়ে নেয়ার পর সমতা টানেন নিকোলাস গঞ্জালেজ। এরপর লড়াইয়ে ব্যবধান গড়ে দেন হামেস রদ্রিগেস। নিজে জাল খুঁজে নেয়ার আগে সতীর্থকে অ্যাসিস্টও করেন তিনি।
এই হারে টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত (১১ জয় ও এক ড্র) থাকার যাত্রা থামল আর্জেন্টিনার। শেষবার তারা হেরেছিল গত বছরের নভেম্বরে নিজেদের মাঠে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে। সেটিও ছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। আর কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেই ২৩ বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল কলম্বিয়ার। পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাসে টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডেরও ইতি ঘটেছিল। মেত্রোপলিতানো স্টেডিয়ামে প্রায় ৪৭ হাজার দর্শকের সামনে বল দখলে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে নির্বিষ ছিল আর্জেন্টিনা। ৫৩ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে গোলমুখে ১৩টি শট নিয়ে স্রেফ একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। বিপরীতে, গোলপোস্টে কলম্বিয়ার নেয়া ৯টি শটের পাঁচটিই ছিল লক্ষ্যে। প্রথমার্ধের ২৫তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতে কলম্বিয়া। কর্নারের পর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হামেস উঁচু ক্রস করেন দূরের পোস্টে। ডি-বক্সে জটলার মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেড করে জাল কাঁপান ডিফেন্ডার মসকেরা। পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া সফরকারীরা স্কোরলাইন ১-১ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। হামেসের ভুল পাসে মাঝমাঠের কাছে বল পেয়ে দ্রুতগতিতে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন উইঙ্গার নিকোলাস। সঙ্গে লেগে থাকা মসকেরার চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাসের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে গোল করেন তিনি। জয়সূচক গোল পেতে এরপর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি নেস্তর লরেঞ্জোর দলকে। ৬০তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিশানা ভেদ করেন হামেস। স্পট-কিক ঠেকাতে বিশেষজ্ঞে পরিণত হওয়া গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের পক্ষে সম্ভব হয়নি শট রুখে দেয়া। ডি-বক্সে কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার দানিয়েল মুনোজ ফাউলের শিকার হলে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি বাজিয়েছিল পেনাল্টির বাঁশি। তাকে ফাউল করেছিলেন চোটগ্রস্ত লিওনেল মেসির পরিবর্তে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দেয়া নিকোলাস ওতামেন্দি। বাকি সময়ে কলম্বিয়া পারেনি ব্যবধান বাড়াতে। আর্জেন্টিনাও পারেনি সমতায় ফিরতে। তবে দুই দলের সামনেই সুযোগ এসেছিল গোলের। কলম্বিয়ার স্ট্রাইকার জন দুরান সরাসরি শট নেন গোলরক্ষক বরাবর, বদলি স্ট্রাইকার জন কর্দোবার ভলি চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজ ডি-বক্সে ঢুকেও ঠিকমতো শট নিতে ব্যর্থ হন, বদলি ফরোয়ার্ড পাওলো দিবালার দূরপাল্লার শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। চলমান বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার এটি দ্বিতীয় হার। তবে আট ম্যাচে ছয় জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে তারা। দুইয়ে উঠে আসা কলম্বিয়া এখনও কোনো ম্যাচ হারেনি বাছাইয়ে। আট ম্যাচে চারটি করে জয় ও ড্রয়ে তাদের অর্জন ১৬ পয়েন্ট।
