ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাফুফে নির্বাচন ২০২৪

সরে দাঁড়ালেন কাজী সালাউদ্দিন

সরে দাঁড়ালেন কাজী সালাউদ্দিন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশে অনেক কিছুই বদলে গেছে। সচিবালয় থেকে ক্রীড়াঙ্গণ সব জায়গায় পরিবর্তনের জোয়ার বইছে। তবে কিছু জায়গা আছে যেখানে চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এ দু’টি সংস্থা তাদের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী চলে। হয় নির্বাচন, নয়তো পদত্যাগের মাধ্যমে পবিবর্তন সম্ভব। বিসিবিতে পরিবর্তন এসেছে আগের সভাপতি পদত্যাগ করে চলে যাওয়ায়। কিন্তু বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজ সিদ্বান্তে অনড়। তিনি পদত্যাগ করবেন না। যদিও তার পদত্যাগ চেয়ে মানববন্ধন করেছে সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকরা। পদ ছাড়তে দেয়া হয়েছে আল্টিমেটামও। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। উল্টো পঞ্চম দফা সভাপতি পদে নির্বাচন করতে অনড় ছিলেন সালাউদ্দিন। গত মাসেই তিনি বলেছিলেন, ‘হারি বা জিতি, নির্বাচন করবই।’ আগামী ২৬ অক্টোবরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা। তার মাত্র কয়েক দিন আগে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন কাজী সালাহউদ্দিন। ঘোষণা দিলেন নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার। গতকাল শনিবার বাফুফে ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত জানান সালাহউদ্দিন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতি পদে আছেন। গতকাল হঠাৎ করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে বার্তা দেন সালাউদ্দিন।

বার্তায় তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমাদের বাফুফের নির্বাচন আগামী ২৬ অক্টোবর। এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কিছু মানুষের চাওয়া ছিল, নির্বাচনটা যেন কিছুটা পেছায়, তো সেই অনুরোধ অনুযায়ী আমরা ফিফাকে চিঠি দিয়েছিলাম, ফিফা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে যে, নির্বাচন কোনোভাবে একদিনও পেছানো যাবে না।’ কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি আপনাদের সাথে বসেছি, আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে, আমি চার মেয়াদে আপনাদের সাথে ছিলাম। এই সুযোগ যে আমার জীবনে এসেছে, এজন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ২৬ অক্টোবের যে নির্বাচন আসছে, সেখানে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এটা আপনাদের জানানোর জন্য এসেছি।’ সালাউদ্দিনের সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বারবার গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার হতাশা পেরিয়ে গত আসরে সেমি-ফাইনাল খেলেছিল দল। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে দলের ব্যর্থতায় তাকেও সমালোচিত হতে হয়েছে সারাক্ষণ। কিছুদিন আগে অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এই তৃপ্তি নিয়ে বিদায়ের কথাও বললেন সালাউদ্দিন। মাঝের সময়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে নানা ইস্যুতে বাহাসের ঘটনাও মনে রাখতে চান না সাবেক এই তারকা ফুটবলার। ‘আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ এই ১৬ বছর আমার সাথে কাজ করার জন্য। এই সময়ে অনেক বিষয়ে আন্ডারস্ট্যান্ডিং, মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে, এটা হতেই পারে, আমি মন থেকে সেটা ভুলে যেতে চাই, আশা করি, আপনারাও মনে কিছু রাখবেন না। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ, আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য। আশা রাখি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের যেন আরও উন্নতি হয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং ফুটবল যেন ভবিষ্যতে ভালোভাবে থাকে। অন্তত আমার একটা খুশি আছে যে, সবশেষ অনূর্ধ্ব-২০ দলকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখতে পেরেছি আমি। ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার জন্য ভালো অনুভূতির। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’ কোনো চাপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, কোনো সংশয় রাখতে চান না বলেই আগে-ভাগে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন তিনি।

‘আমি আগেই এই ঘোষণা দিয়ে দিলাম যেন, কারো কোনো বিষয়ে কনফিউশন না থাকে। কারো কোনো আপনারা দেখছেন- কারো কোনো সংশয় যেন না থাকে। আমি যা বলার, বলে দিয়েছি। আমি আপনাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিব না। আমি আমার মতামতটা দিয়ে দিয়েছি যে, আমি কোনো নির্বাচন করব না। ধন্যবাদ।’

২০০৮ সালে প্রথমবার বাফুফে সভাপতি হন সালাহউদ্দিন। এরপর ২০১২ সালে তিনি ফের নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে। তারপর ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়লেও জিতে যান।

আর ২০২০ সালের সবশেষ নির্বাচনে বাদল রায় ও শফিকুল ইসলাম মানিককে হারিয়ে চতুর্থবার সভাপতি হন কাজী সালাহউদ্দিন। সাম্প্রতিক সময়ে শারীরিক অসুস্থায় খুব একটা ফেডারেশনের না এলেও দায়িত্ব চালিয়ে গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত