ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ বাংলাদেশের ভারত ‘পরীক্ষা’ শুরু

আজ বাংলাদেশের ভারত ‘পরীক্ষা’ শুরু

পাকিস্তানের মাটিতে তাদের হোয়াইটওয়াশ করে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দল। যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল এখন টাইগাররা। কিন্তু এবার তাদের সামনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত। টেস্ট ক্রিকেটে যাদের আধিপত্য সম্পর্কে কারও অজানা নয়। তার ওপর ঘরের মাঠে তারা কতটা শক্তিশালী সেটাও সবার জানা। সেই দলটির বিপক্ষে চেন্নাইতে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে আজ ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে শান্ত-মুশফিকরা। দুই সপ্তাহ আগেই পাকিস্তানকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা জয়ের কীর্তি হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

পাকিস্তানের চেয়ে স্বাগতিক ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী হলেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারফরমেন্সে ধারাবাহিক হতে চায় টাইগাররা। বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট দলটি অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। যে কোনো দেশের বিপক্ষে বিশ্বের যে কোনো কন্ডিশনে পারফরম্যান্স করতে পারে তারা। যদিও দলে সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের মধ্যে দু’জন স্বীকৃত অলরাউন্ডার আছে। তাদের জন্যই একাদশে দু’জন করে অতিরিক্ত বোলার এবং ব্যাটার নিতে পারে টাইগাররা। তবে এই মুহূর্তে দলের পেস আক্রমণের দুর্দান্ত পারফরমেন্স সবাইকে অবাক করছে। পাকিস্তান সিরিজে নিজের গতির প্রমান দিয়েছেন তরুণ সেনসেশন নাহিদ রানা। তার সাথে পেস আক্রমণে আছেন তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ। গত দুই বছরে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিতে নিজেদের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। পাকিস্তানের পর ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছে দল। এই টেস্ট দলকে তার দেখা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। মোটেও বাড়িয়ে বলেননি তিনি। কারন হার্শা ভোগলে, আকাশ চোপড়ার মত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও বাংলাদেশের শক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে ভারতকে সতর্ক করেছেন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ আর সেই দল নেই যা ৫ বছর আগে ছিল। সর্বশেষ দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টিম ইন্ডিয়া। এ সিরিজের দুই ম্যাচই ইনিংস ব্যবধানে এবং আড়াই দিনের মধ্যে জিতেছিল ভারত। দুই বছর আগে ঘরের মাঠে সর্বশেষ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতের কাছে হেরেছিলো বাংলাদেশ। তবে এবার দলে অতিরিক্ত ব্যাটার-বোলার থকায় বাংলাদেশ দল বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। যে কারণে ভারতের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক পেসার নিয়ে এসেছি এবং ভালো মানের পেস বোলার পেয়েছি। আমরা সত্যিই ভালো অভিজ্ঞ স্পিন আক্রমণ পেয়েছি। পাশাপাশি ব্যাটিংও ভালো। দু’টি কারণে আমাদের ব্যাটিং গভীরতা আছে। এক. আমাদের দুই স্পিনার স্বীকৃত ব্যাটার। যাদের টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। এরপর দুই উইকেটরক্ষক, যারা আমাদের প্রধান ব্যাটার। তাই এই সিরিজের জন্য দলের ভারসাম্য সত্যিই ভালো এবং এটি আসলে আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। যাতে আমরা সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।’

এখন পর্যন্ত ১৩টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে ১১টিতে ভারতের জয় ও ২টি টেস্ট ড্র হয়। বৃষ্টির কারনে বেশিরভাগ সময় খেলা না হওয়ায়, ড্র হয়েছিলো টেস্ট দু’টি। তবে এবার ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের ব্যাপারে দলের সকলেই আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু কাজটি কঠিন হবে। কারণ ৪ হাজার দিন ধরে ঘরের মাঠে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি ভারত। গত ১২ বছরে ঘরের মাঠে টানা ১৭টি টেস্ট সিরিজ জিতেছে। এই সময় মাত্র চারটি টেস্ট ম্যাচ হেরেছে ভারত। ভারত মাটিতে খেলাটা কঠিন হলেও, সদ্যই পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ।

হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি মনে করি, এই সময়ে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলে ভারত সফর থেকে সাফল্য পাওয়া সম্ভব।’ তিনি আরো বলেন, ‘অবশ্যই, পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। সিরিজের ফলাফলের কারণে নয়, আমরা ঐ সিরিজে যেভাবে খেলেছি, বেশ কিছু পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিয়েছিলাম। আমরা দুই টেস্ট ম্যাচেই ব্যাকফুটে ছিলাম। এরপর আমরা ঘুড়ে দাঁড়িয়েছি এবং বিভিন্ন সময়ে অনেকেই অবদান রেখেছে। যা এই সিরিজে আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।’

২০১৯ সালে সর্বশেষ ভারত সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দু’টি ম্যাচই আড়াই দিনের মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে এবার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে, তাই প্রত্যাশার চাপও বেশি। চাপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন হাথুরুসিংহে, ‘এই চাপকে সুবিধা হিসেবে দেখছি। আমার মনে হয়, এটা আমাদের অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করে এবং আরও বেশি সামনে তাকানোর সুযোগ করে দেয়। তখন আমরা নিজেদের শক্তি, সীমাবদ্ধতা ও অবস্থান সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারি। কিন্তু আমরা ভারতের মত বিশ্ব সেরা দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে খেলতে আসলে সত্যিই উৎসাহিত হই। এখনকার ক্রিকেটে এটা সেরা চ্যালেঞ্জ।’ ভারতের বিপক্ষে দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান জ্বলে উঠবেন বলে আশা করছেন হাথুরুসিংহে।

তিনি জানান, সাকিবের অলরাউন্ড দক্ষতার কারণে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ব্যাটার এবং অতিরিক্ত বোলার নিয়ে খেলতে পারছে। হাথুরুসিংহে বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সবসময়ই বড় ভূমিকা পালন করে সাকিব। আমাদের দলে ভারসাম্য রাখেন তিনি। তার অলরাউন্ড দক্ষতার কারণে আমরা একজন অতিরিক্ত বোলার বা অতিরিক্ত ব্যাটার খেলাতে পারি। সম্ভবত দীর্ঘদিন ধরে খেলা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন সে। সদ্যই কাউন্টি ম্যাচ খেলে আসছেন তিনি। আমরা তাকে ভালো ফর্মে দেখেছি। শুধুমাত্র দক্ষতা নয়, দলে অনেক কিছু নিয়ে আসে সে।’ পাকিস্তান সিরিজ থেকে মাত্র ১টি পরিবর্তন এনে ভারত সিরিজের স্কোয়াড সাজিয়েছে বাংলাদেশ। পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় জাকের আলী অনিককে নেয়া হয়েছে। ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে যান শরিফুল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলা একাদশ নিয়েই মাঠে নামতে চায় বাংলাদেশ। ফর্মের তুঙ্গে থাকায় ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ নেয়ার এটাই সেরা সুযোগ টাইগারদের সামনে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত