ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে পঞ্চম দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত খেলার লক্ষ্য বাংলাদেশের। দেশ ছাড়ার আগে তেমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু লাল সবুজের টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় সেটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। সময়ের হিসেবে বাকি দুইদিন। জয়ের জন্য বাংলাদেশকে গড়তে হবে বিশ্ব রেকর্ড। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে টাইগাররা। এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আরেক প্রান্তে তার সঙ্গী হিসেবে আছেন সাকিব আল হাসান। আজ এই দুই ব্যাটারের বাটে বড় ইনিংস দেখতে চান টাইগার সমর্থকরা। লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যর্থ হলে সফরকারীদের বড় হারের শঙ্কা ঠিকই ভর করেছে। গতকাল শনিবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৩৭.২ ওভারে ৪ উইকেটে বাংলাদেশ তুলেছে ১৫৮ রান। ফলে এখনো ৩৫৭ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা। যদিও আলোকস্বল্পতায় তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয় ৯.৪ ওভার বাকি থাকতে। ৩৭.২ ওভার শেষে আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ৩৮তম ওভারে পেসার মোহাম্মদ সিরাজের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দুটি বল করার পর আলো কমে যায়। আম্পায়াররা লাইট মিটার বের করেন। আকাশে মেঘ থাকায় আলো আরো কমতে থাকে। তখন স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাতেও সন্তুষ্ট হননি খেলোয়াড়রা। এরপর আম্পায়াররা খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে বলেন। স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ২৪ মিনিটে দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। তার আগে ৫১৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে চা-বিরতি পর্যন্ত দারুণ খেলেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। ৫৬ রান সংগ্রহ করে বিরতিতে যান। তবে বিরতির পর স্কোরবোর্ডে আর ৬ রান যোগ করতেই ভাঙে এই জুটি। ব্যক্তিগত ৩৩ রানে বিদায় নেন জাকির হাসান। জাসপ্রিত বুমরাহর অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খোঁচা মেরে গালিতে যশস্বী জসওয়ালের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন এই ওপেনার। জাকিরের বিদায়ের পর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার সাদমানও। নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের খাট লেন্থের বলে ব্যাকফুটে লেগে ঘোরাতে চেয়েছিলেন এই ওপেনার। তবে দোমনা হয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটের সামনের দিকের কানায় লেগে বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো শুবমান গিলের হাতে। ৬৮ বলে ৩৫ রান করেন সাদমান। এরপর মুমিনুল হককে নিয়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটিও গড়েছিলেন তারা। কিন্তু অশ্বিনের বলে ডিফেন্ড করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান মুমিনুল। তিনটি চারে ১৩ রান করেন তিনি।
মুশফিকুর রহিম নেমেই আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা চালান। একটি করে চার ও ছক্কা মারেন তিনি। তবে অশ্বিনের বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিড-অফে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সামনের দিকে ডাইভ দিয়ে ক্যাচটি ধরে এই ফিল্ডার। পরে তৃতীয় আম্পায়ার রিপ্লে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত জানান। তার ব্যাট থেকেও আসে ১৩ রান। সাকিব আল হাসান মাঠে নেমেই রানের জন্য ছটফট করতে থাকেন। প্রথম বলেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে শট নেন। করেছেন রিভার্স সুইপও। আগের ইনিংসে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েই আউট হয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যাটে বলে সে অর্থে সংযোগ করতে পারছেন না। ১৪ বলে ৫ রান করে অপরাজিত রয়েছেন এই অলরাউন্ডার। তবে এক প্রান্ত আগলে টিকে আছেন শান্ত। শুরু থেকেই ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকা অধিনায়ক এরমধ্যেই তুলে নিয়েছেন ফিফটি। ৫৬ বলে ফিফটি স্পর্শ করা এই ব্যাটার অপরাজিত রয়েছেন ৫১ রানে। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস।
এর আগে রিশাভ পান্ত ও শুবমান গিলের সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ২৮৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক দল। আগের ইনিংসের ২২৭ রানের লিড যোগ হয়ে তাতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৫ রানের। দেড়শো বছরের টেস্ট ইতিহাসে এত বড় রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই কোনো দলের। বাংলাদেশকে তাই ম্যাচ জিততে গড়তে হবে বিশ্ব রেকর্ড। ম্যাচ বাঁচাতে ব্যাট করতে হবে আড়াই দিনের বেশি। ১২৮ বলে ১০৯ রান করেছেন পান্ত। ১৭৬ বলে ১১৯ রান করেছেন গিল।
