ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভারতে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখল বাংলাদেশ

ভারতে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখল বাংলাদেশ

রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, বাবর-রিজওয়ানদের তাদের মাঠেই হোয়াইটওয়াশের তেতো স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু খুব কম সময়ের ব্যবধানে এবার ভারতে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে রোহিত-কোহলিদের কাছে রীতিমতো ধরাশয়ী হয়েছে মুশফিক-সাকিবরা। অথচ চেন্নাই টেস্টের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য অবিশ্বাস্য। ভারতের মাটিতে এমন দাপট কম দলই দেখাতে পারে। দলটির প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৪ রানে ৬ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। এরপর আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি সফরকারীদের। এই টেস্টে বোলাররা দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেও অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত ছাড়া বাকিরা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। যে কারণে ভারতের দেয়া রানের পাহাড়ে চাপা পড়েছে সফরকারীরা। তৃতীয় দিনেই একদম স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল চেন্নাই টেস্টের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে। বিশাল লক্ষ্যে নেমে ওপেনারদের ভালো শুরুর পর আগের দিন বিকেলে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে আশা ছিলো লড়াইয়ের। সকালে নেমে সেই লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে হিসেব গড়বড় করে দেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বড় হার জুটল বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করেছেন। শেষ ইনিংসে বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট করেছেন ৮৮ রানে ৬ ?উইকেট নিয়ে। ৫১৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। ম্যাচ হারে ২৮০ রানে। ফলে দুই টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।

গতকাল রোববার প্রথম ঘণ্টাটা বাংলাদেশ ভালোই কাটিয়েছিল। কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছে ৩৬ রান। কিন্তু পানি পানের বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অশ্বিনের ঘূর্ণিতে সাকিবের আউটে পতনের শুরু। এর আগে সাকিব জীবন পেয়েছিলেন ঋষভের ভুলে। সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। টেস্টে সাকিবের ব্যাটে রান খরা যেন দূরই হচ্ছে না। এই নিয়ে ৭ ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই বাংলাদেশের অলরাউন্ডারের। ২৫ রান করেন এই ব্যাটার। লিটন দাস নেমেই হাঁসফাঁস করতে থাকেন। জাদেজার বল যেন দুর্বোধ্য ঠেকে তার কাছে। একাধিকবার সুইপের চেষ্টায় গিয়ে ব্যর্থ হন। পাকিস্তানে সেঞ্চুরি করা লিটন জাদেজার বলেই স্লিপে দেন সহজ ক্যাচ, ফেরেন ১ রান করে। তবে আরেক প্রান্তে তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন শান্ত। তার সঙ্গে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ সময় পার করতে থাকা এই অলরাউন্ডার এবার আর দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে সহজ ক্যাচ। শান্ত টিকে সেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছেলেন, তবে তাকে আর সাবলীল মনে হচ্ছিল না। ৮২ রানে একবার জীবন দিয়েও রক্ষা পাননি। জাদেজার বল এলোপাথাড়ি তুলে ফেরেন ওই ৮২ রানেই। তাসকিন ক্রিজে এসে টেকেন ৪ বল। তিনিও অশ্বিনের বলেই ক্যাচ দিয়ে হাঁটা ধরেন। শেষ উইকেট নিয়ে জাদেজা শেষ করে দেন ম্যাচ।

প্রথম ইনিংসের তুলোনায় দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয় দারুণ। কিন্তু থিতু হয়েও উইকেট দিয়ে আসায় সেটি শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম ফেরেন ৩৩ ও ৩৫ রান করে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক ও মুশফিকের রহিমের ব্যর্থতাও বড় হারের একটি বড় কারণ। দুজনে আউট হন সমান ১৩ রান করে। সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেন সেঞ্চুরিয়ান অশ্বিন। চতুর্থবারের মতো তিনি এই কীর্তি গড়েন। সর্বোচ্চ ৫ বার এই কীর্তি রয়েছে ইয়ান বোথামের। অশ্বিনের হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। এ ছাড়া ৩ উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা। খেলা শেষ হয়েছে ৫ সেশন বাকি থাকতে! সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক শান্তও কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন ব্যাটারদের। জানিয়েছেন ভুল থেকে শেখার কথা। অথচ ম্যাচটি হতে পারতো বাংলাদেশের পেসারদের। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের মাটিতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসের শুরুতে ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় টপ অর্ডারদের। রোহিত শর্মা থেকে বিরাট কোহলি, কে ছিলেন না উইকেটের তালিকায়। দ্বিতীয় দিন সকালে তোপ দাগিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেগুলো পড়ে গেছে আড়ালে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত