নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরে টস করতে নেমেই মাইলফলক স্পর্শ করেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়েন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এমন দিনে সতীর্থরা হতাশ করেননি তাকে। জয় দিয়ে ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখলেন তারা। একইসঙ্গে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ।
দীর্ঘ ১০ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে জয়ের আনন্দে মাতলো টাইগ্রেসরা। ব্যাটার ও বোলারদের সম্মিলিত অবদানে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ হাসি হাসল টাইগ্রেসরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শারজাহতে ১৬ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১১৯ রান তোলে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। জবাবে পুরো ওভার খেলে ৭ উইকেটে ১০৩ রানে আটকে যায় স্কটিশরা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে অংশ নিলেও শুধু দুই ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সবশেষ ২০১৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তারা হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা আর আয়ারল্যান্ডকে। এরপর টানা চার আসর শুধুই হতাশার গল্প। জয় পায়নি ২০১৬, ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালের আসরে। অবশেষে দীর্ঘ ১০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল। ২০২৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পেল কাঙ্ক্ষিত সেই জয়।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টি প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ স্কটিশদের বিপক্ষে আগের চারবারের সাক্ষাতে বাংলাদেশ হারেনি। অপরাজিত থাকার আত্মবিশ্বাস নিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে খেলতে নেমেছিল টাইগ্রেসরা। ব্যাটিংয়ে হতশ্রী পারফর্ম করলেও শেষ পর্যন্ত জয় পেতে সমস্যা হয়নি নিগার সুলতানাদের। তবে স্কটিশ বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১১৯ রান তোলে তারা। জবাবে খেলতে নেমে স্কটল্যান্ডের ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ১০৩ রানে। তাতে ১৬ রানের জয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শুরু করেছে। এমন ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার দুটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ক্যারিয়ারের ১০০তম ম্যাচ খেলেছেন। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পক্ষে সর্বোচ্চ। এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একশ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ৮৮ ম্যাচে নাহিদার শিকার ১০০ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সালমা খাতুনের।
৯৫ ম্যাচ খেলে সালমা শিকার করেছেন ৮৪ উইকেট। প্রত্যাশিত জয় পেলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্কটিশদের খুব বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। জবাবে পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারালেও দ্রুত রান তুলে ফেলেছিল স্কটল্যান্ড। ৬ ওভার শেষে তাদের রান দাঁড়ায় ৩১। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে শুধু ওপেনার সারাহ ব্রাইস প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন। যোগ্য সঙ্গীর অভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারেনি তারা। স্কটিশ এই ওপেনার দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। ক্যাথরিন ব্রাইস ও আলিসা লিস্টার দুইজনের ব্যাট থেকে ১১ রান করে এসেছে। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে স্কটল্যান্ড ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রান করতে পারে। যদিও কিছু মিস ফিল্ডিং ও স্ট্যাম্পিং মিস না হলে স্কটিশদের একশর নিচে আটকে রাখা যেত।
বাংলাদেশের বোলাদের মধ্যে পেসার রিতু মনি সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচসেরাও তিনি। একটি করে উইকেট নেন মারুফ আক্তার, নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
শারজায় বাংলাদেশ দল টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং করেছে। দুই ওপেনার মোর্শেদা খাতুন ও সাথী রানি মিলে ভালোই শুরু করেছিলেন। তবে পঞ্চম ওভারে মোর্শেদা ১২ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর সোবহানা মোস্তারিকে নিয়ে সাথী ৪৪ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন। দারুণ খেলতে থাকা সাথী ৩২ বলে ২৯ রান করে আউট হন। স্কোরবোর্ডে আরও এক রান যোগ হতেই অভিষিক্ত তাজ নাহার ‘শূন্য’ রানে রান আউট হন। ৬৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলকে চাপ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন সোবাহানা ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। কিন্তু ১৬ বলে ১৭ রানের জুটি গড়ে অলিভিয়া বেলের বলে স্ট্যাম্পড হন সোবাহানা। আউট হওয়ার আগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৩৮ বলে ২ চার চারে সোবহানা নিজের ইনিংসটি সাজান। এদিকে অধিনায়ক জ্যোতি নিজের ১০০তম ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন। যদিও নিজের মাইলফলকের ম্যাচটিতে সুবিধা করতে পারেননি। ১৮ বলে ১৮ রান করে আউট হন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এরপর লেজের ব্যাটাররা ব্যর্থ হওয়াতে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১১৯ রান। ফাহিম খাতুন (১০), স্বর্ণা আক্তার (৫) ও রিতু মনি (৫) রানের ইনিংস খেলেছেন। স্কটিশ বোলারদের মধ্যে সাসকিয়া হরলি ১৩ রানে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া ক্যাথরিন ব্রাইস, ক্যাথরিন ফ্রেজার ও অলিভিয়া বেল প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এবারের মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপটা বাংলাদেশে হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে সরে গেছে আরব আমিরাতে। তবে কাগজে কলমে বিশ্বকাপের স্বত্ব বাংলাদেশেরই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৯/৭ (সাথি ২৯, মুর্শিদা ১২, সোবহানা ৩৬, নিগার ১৮, ফাহিমা ১০*, রাবেয়া ১*;
ক্যাথরিন ব্রাইস ৪-০-২৩-১, বেল ৪-০-২৩-১, ২৩-১, হর্লি ২-০-১৩-৩)।
স্কটল্যান্ড: ২০ ওভারে ১০৩/৭ (হর্লি ৮, সারাহ ব্রাইস ৪৯*, ক্যাথরিন ব্রাইস ১১, লিস্টার ১১, প্রিয়ানাজ ৫, জ্যাক-ব্রাউন ৯, আবতাহা ২*;
মারুফা ৩-০-১৭-১, নাহিদা ৪-০-১৯-১, ফাহিমা ৪-০-২১-১, রাবেয়া ৪-০-২০-১, রিতু মনি ৪-০-১৫-২।
ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: রিতু মনি।