ইতিহাসই গড়লেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে খেললেন ১০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টস করতে নেমেই অন্যরকম এক সেঞ্চুরি পূরণ করলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। শুধু টি-টোয়েন্টি নয় বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার কৃতিত্বও জ্যোতির দখলে। সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন ৯৫টি ম্যাচ খেলেছেন। অবসর না নিলেও তার ক্যারিয়ারের ইতি হয়ে গেছে। এখন অব্দি খেলতে থাকা আরেক স্পিনিং অলরাউন্ডার নাহিদা আক্তার ৮৮ ম্যাচ খেলেছেন। রুমানা আহমেদও সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলেছেন। যদিও এই অলরাউন্ডার বিশ্বকাপ দলের স্কোয়াডে নেই। এছাড়া ফারজানা হক ও ফাহিমা খাতুন ৮৫টি ম্যাচ করে খেলেছেন।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে জ্যোতির। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই জ্যোতির জন্য বিশেষ। নিজের শততম ম্যাচ নিয়ে বেজায় খুশি বাংলাদেশের অধিনায়ক। নিজের মাইলফলকের ম্যাচটা জয়ে রাঙাতে চান এই ক্রিকেটার। বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতি বলেন, ‘১০০ ম্যাচ মানে অনেক বড় ব্যাপার। এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি, ভাবতেই ভালো লাগে। আমার জন্য বিশাল অর্জন এটি। যদি সুস্থ থাকি ও খেলতে পারি, অবশ্যই চাইব ম্যাচটি জিততে। আমরা এখানে ভালো পারফর্ম করতে পারলে তা বাংলাদেশের মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ নিজের একশতম ম্যাচ খেলতে নামা জ্যোতি টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দেশের সঙ্গেই কুড়ি ওভারের ম্যাচ খেলেছেন।
বাংলাদেশে নারী দলের ব্যাটিং স্তম্ভ জ্যোতি সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬টি ম্যাচ খেলেছেন। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছেন ১১টি ম্যাচ। ৯৯ ম্যাচে ২৭ গড়ে ১ হাজার ৯৪৪ রান করেছেন জ্যোতি। একটি সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি ৮টি হাফ এসেছে তার ব্যাট থেকে। তবে বাংলাদেশের উইকেট কিপার ব্যাটার এই পথটা সহজ ছিল না। জ্যোতি যখনই হতাশ হয়ে পড়তেন, তার পরিবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নানা রকম সামাজিক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়েছে জ্যোতির পরিবারকে। কারণ, একে খেলাধুলার হাতেখড়িটা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলে। তার মধ্যে শেরপুরের মতো ছোট্ট মফস্বল শহরে অনুশীলনের জন্য ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম বহন করে মাঠে যাওয়া ছিল কিছুটা অস্বস্তিকর। কিন্তু সমাজের লোকের কথা পাত্তা দেননি নিগারের পরিবার। মেয়ে কষ্ট পেলেও মায়ের হাতটা সব সময় নিজের মাথায় পেয়েছেন। ফলে সমাজের কথা না ভেবে জ্যোতি কেবল ভেবেছেন ক্যারিয়ার নিয়ে। এই পথে বড় ভাই সম্রাট সালাউদ্দিনের ভূমিকা অনেক।
২০১৩ সালে জ্যোতি প্রথমবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে সুযোগ পান। বিশ্বকাপের আগে ২০১৪ সালেও ক্যাম্পে ছিলাম। কিন্তু দলে সুযোগ হয়নি। এরপর মনে মনে জেদ চেপে যায় তার। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে কোচ মোখলেসুর রহমান স্বপনের তত্ত্বাবধানে প্রচণ্ড শ্রম দিয়েছেন। সকাল থেকে বিকাল অনুশীলন করেছেন। ওই পরিশ্রমই জ্যোতিকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।