স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দশ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের সুযোগ এসেছিল তাদের সামনে। দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা সাধ্যের মধ্যেই আটকে দিয়েছিলেন বোলাররা। প্রয়োজন ছিল ব্যাটারদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং। কিন্তু আরো একবার ব্যর্থ ব্যাটাররা। সুযোগ হারিয়ে হতাশায় পুড়ছেন টাইগ্রেসরা। গত শনিবার রাতে ইংল্যান্ডকে ১১৮ রানে আটকে রেখেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। সেই লক্ষ্য তাড়ায় খুব একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি ব্যাটাররা। ২০ ওভার খেলে ৯৭ রানেই আটকে গেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে তাই ব্যাটিং ব্যর্থতার কথাই আরেকবার তুলে ধরতে বাধ্য হলেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশ অধিনায়ক আঙুল তুললেন নিজের আউটের দিকেও। ‘ভালো একটি দলকে হারানোর বড় সুযোগ হারিয়েছি আমরা। আমাদের বোলাররা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, কিন্তু ব্যাটাররা হতাশ করেছে। পাওয়ার প্লেতে আমরা ভালো করতে পারিনি, উইকেট ছুড়ে দিয়েছি। পাওয়ার প্লের পর খেলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি আমরা। ভালো জুটি দরকার ছিল আমাদের। আমি ও সোবহানা মোস্তারি ভালো জুটি গড়েছি, কিন্তু আমি বাজে সময়ে আউট হয়ে গেছি।’ টপ অর্ডারে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ এ দিন ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনে। মুর্শিদা খাতুনকে বাইরে রেখে একাদশে জায়গা দেয়া হয় দিলারা আক্তারকে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিং করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তা মেলে ধরতে পারছেন না দিলারা ও আরেক ওপেনার সাথি রানি বর্মন। ৯ বলে ৭ রান করে আউট হন সাথি। ৬ রান করতে দিলারা খেলেন ১২ বল। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে হারিয়ে মোটে ২০ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে শুরুটা ভালো করতে না পারায় রান তাড়ার কাজটা এমনিতেই আরো কঠিন হয়ে পড়ে। চার স্পিনার নিয়ে খেলতে নামা ইংলিশরা ক্রমে চেপে ধরে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। তৃতীয় উইকেটে সোবহানা মোস্তারি ও নিগার ৩৫ রানের জুটি গড়লেও বল লাগে সেখানে ৪৪টি। দুটি চার মারলেও ২০ বলে ১৫ রান করেন নিগার। যেভাবে রান আউট হয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, আঙুল তোলা যায় তার দিকে। ৪৮ বল খেলে দলের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন সোবহানা। তবে প্রথম ২৬ বলে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি। পরে একটি চার ও একটি ছক্কায় নিজের রান-বলের ব্যাবধান কমিয়েছেন। কিন্তু ইনিংস বড় করে দলকে লক্ষ্যে নিতে পারেননি। ব্যাটিংয়ে অন্যদের অবস্থা তো বলার মতোই নয়। বল হাতে চার ওভারে ১৮ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকারি ফাহিমা ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বললেন বললেন, পাওয়ার প্লের ব্যাটিংয়েই ম্যাচ থেকে পিছিয়ে পড়েছে দল। ‘বোলিং গ্রুপ হিসেবে আমরা সত্যিই ভালো করেছি। এই লক্ষ্য তাড়া করার মতোই ছিল। কিন্তু আমরা পাওয়ার প্লেতে ভালো ব্যাট করতে পারিনি। ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে আমাদের আরো বেশি তাড়না দেখানো উচিত ছিল। ব্যাটিং খুবই হতাশাজনক ছিল। দলের প্রতিটি ক্রিকেটারই মনে করেছে, বড় সুযোগ ছিল। ইংল্যান্ড অনেক বড় দল। তাদের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো শুরু করেছিলাম। আমি আশাবাদী ছিলাম, দলের সবাই আশাবাদী ছিল যে, আমরা এটা অর্জন করতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের শুরুটা (ব্যাটিংয়ের) ধীরগতির হয়ে গেছে এবং হ্যাঁ, আমরা মিস করেছি (সুযোগ)।’ গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিংয়ে উন্নতি না হলে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা কঠিন এই দুই ম্যাচ থেকেও। ফাহিমা তবু আশা নিয়ে তাকাচ্ছেন সামনে। ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা অনেক ভালো করেছি। জেতার সুযোগ ছিল। সেটা হাতছাড়া হয়ে গেছে। তবে এই ম্যাচ থেকে অনেক ইতিবাচক দিক পেয়েছি, যা সামনে এগিয়ে নিতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’