নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার বাফুফে ভবনে এই তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। এ সময় কমিটির অন্য দুই সদস্য মৎস ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার একেএম এহসানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল বুধবার থেকে মনোনয়ণপত্র বিতরণ শুরু হবে। চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। বাফুফে ভবনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন প্রাথীরা। তবে ১১ অক্টোবর পূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় ওই দিন নির্বাচন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সভাপতি পদে মনোনয়ন পত্রের মূল্য এক লাখ, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ৭৫ হাজার, সহ-সভাপতি পদে ৫০ হাজার ও সদস্য পদে ২৫ হাজার। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ১৪ ও ১৫ অক্টোবর দাখিল করতে হবে। মনোনয়ন পত্র যাচাই বাচাই হবে ১৬ অক্টোবর। মনোনয়নপত্রের ওপর আপত্তি থাকলে ৫০ হাজার টাকা ফি দিয়ে ১৭ অক্টোবর আপিল করার সুযোগ রয়েছে। পরদিন হবে শুনানি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য নির্বাচন কমিশন দেড় দিন সময় দিয়েছে। তা হল ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর দুপুর ২টা পর্যন্ত। ২০ অক্টোবর বিকালে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও ব্যালট নির্ধারণ করবে। ২৬ অক্টোবর ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সকালে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভা। ওই দিনই দুপুর ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হবে গণনা। বাফুফেতে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার সহ-সভাপতি ও ১৫ নির্বাহী সদস্যসহ ২১টি পদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৩৩ জন কাউন্সিলর।
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি বিধিমালা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। এ সময় এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, ‘বিদেশে থেকে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না’? এমন প্রশ্নের জন্য বাফুফের নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। বাফুফের নির্বাচনী বিধিমালায় বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথমে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। প্রাথমিক জবাবে বলেন, ‘একজন বিদেশ থেকে পাঠালেন তার স্বাক্ষর আমরা যাচাই করব কীভাবে।’ মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করে অনলাইনে স্বাক্ষর করে বা সেই ফরম বিদেশ থেকেই কারো মাধ্যমে স্বাক্ষর করে পাঠানোর সুযোগ থাকতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তরে আবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘যদি এটি সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভেরিফাই হয়ে আসে তখন দেখা যেতে পারে।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অবশ্য বিদেশ থেকে প্রার্থী হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছেন, ‘বিদেশ থেকে প্রার্থী হওয়া সঠিক রাস্তা নয়। এটা লিগ্যালি পারমিট করে না।’
মনোনয়ন পত্রের ওপর আপত্তির সুযোগ রয়েছে। বিদেশ থেকে কেউ মনোনয়ন পত্র প্রেরণ করলে সেটি আপত্তি হলে শুনানির সময় অভিয্ক্তুকে সশরীরে থাকতে হবে। সশরীরে না থাকতে পারলে প্রার্থীতা থাকবে না সেটা স্পষ্টভাবেই বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ‘শুনানির সময় সশরীরে প্রার্থীকে হাজির হতে হবে। সশরীরে হাজির না থাকলে প্রার্থীতা থাকতে পারবে না।’ বাফুফে বর্তমান কমিটির কয়েকজন প্রার্থী আত্মগোপনে। দুই একজন বিদেশে আছেন বলেন জনশ্রুতি রয়েছে। তাই বাফুফে নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে।
বাফুফের নির্বাচনে কাউন্সিলরশীপ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। যারা কাউন্সিলর হতে পারেননি বাফুফের কাছে সুষ্ঠ বিচার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বলেন, ‘ভোটার তালিকার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাহী কমিটির এখতিয়ার। মহামান্য আদালত কোনো নির্দেশনা থাকলে ভোটার সংক্রান্ত সেটা নির্বাহী কমিটিই দেখবে।’ বাফুফের কাউন্সিলর তালিকায় হত্যা মামলার আসামি রয়েছেন। এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মামলার আসামিদের নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোট প্রদানে অবশ্য আইনত কোনো বাধা নেই স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত আদালত শাস্তি প্রদান না করে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থী হতে সমস্যা নেই। মামলা এমনকি জেল খাটলেও নির্বাচন করতে বাধা নেই। আদালত দোষী সাব্যস্ত করলেই কেবল নির্বাচনে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।’