বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তফশিল ঘোষণার পর থেকেই কৌতুহল জেগেছিল এবারের নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। অবশ্য সংবাদ সম্মেলন ডেকে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন হেভিওয়েট দুই ব্যবসায়ী-রাজনীতিক। কিন্তুতাবিথ আওয়াল ও তরফদার রুহুল আমিনের কেউ মনোনয়নপত্র বিতরণের প্রথম দিনে তারা ফরম কেনেননি। পরের দিন প্রতিনিধি পাঠিয়ে সভাপতি পদে ফরম সংগ্রহ করেন তাবিথ আওয়াল। দ্বিতীয় দিনে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কিনেন অচেনা মিজানুর রহমান চৌধুরী। তখনো অনেকে অপেক্ষায় ছিলেন তরফদার রুহুলের। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে গতকাল শনিবার মনোনয়নপত্র তোলার শেষ দিনে সহসভাপতি পদে ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। এদিন আরেকটি চমক দেখান ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়োনের কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদওয়ান। তিনি সভাপতি পদের পাশাপাশি সহসভাপতি পদেও ফরম কিনেছেন। অবাক হলেও সত্যি যে, সভাপতি পদে আরো একটি মনোনয়নপত্র কিনেছেন এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউন্সিলর শাহাদাত জোবায়ের (সদস্য পদেও কিনেছেন)। ফলে বাফুফে সভাপতি পদে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন মোট চারজন। সাবেক বাফুফে সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল, দিনাজপুরের তৃণমূলের কোচ মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান ও এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাদাত হোসেন জুবায়ের। এই চার প্রার্থীর মধ্যে তাবিথ ও মিজানুর রহমানই শুধু একটি সভাপতি পদে নিয়েছেন। অন্য দুই জন দুই পদের জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ মূলত ক্রিকেট সংগঠক। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন। নারী উইংয়ের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকায় গত বাফুফে নির্বাচনে সহ-সভাপতিও করেছেন। সেই নির্বাচনে তিনি হেরেছিলেন। মনোনয়ন পত্র কিনে বাফুফে ভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের রেদওয়ান বলেন, ‘তরফদার ভাই সভাপতি পদে কেন নির্বাচন করলেন না এটা উনি বলতে পারবেন। আমি সভাপতি ও সহ-সভাপতি দুই পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি। আমরা সুযোগ পেলে ফুটবল উন্নয়নের চেষ্টা করব।’ দুই পদে মনোনয়ন নেয়ার অর্থ সমঝোতার পথ খানিকটা খোলা। সেই দিকে ইঙ্গিত করে রেদওয়ান বলেন, ‘এখনো সময় আছে, আলোচনা হতে পারে। ফুটবলের স্বার্থে একক প্যানেল হলে সভাপতি পদ ছাড়তে রাজি আছি।’ শেষ দিনের বিকেলের বড় চমক ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক তরফদার মো. রুহুল আমিন। এতদিন সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও অবশেষে সিনিয়র সহসভাপতি পদে একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। তরফদার রুহুল আমিনের প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মকর্তা নাজমুল করিম বাফুফে ভবনে বলেন, ‘আমি স্যারের জন্য সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে একটিই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি।’ এ নিয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে প্রার্থীর সংখ্যা তিনজন। তরফদার রুহুল আমিনের আগে এই পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান এবং মনির হোসেন নামের তৃণমূলের এক সংগঠক। সহসভাপতি পদে ১২ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। এরা হলেন- নাসের শাহরিয়ার জাহেদি, ফাহাদ করিম, ইকবাল হোসেন (সদস্য পদেও কিনেছেন তিনি), সাব্বির আহমেদ আরেফ, ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী, রাশিদ সামিউল ইসলাম, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির, আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদওয়ান, শফিকুল ইসলাম মানিক, সত্যজিৎ দাস রুপ, মিসবাহ আহমেদ সামাদ চৌধুরী ও ছাইদ হাছান কানন। এ ছাড়া সদস্য পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে ৪৩টি। এ পদে যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন : তাসমিয়া রেজোয়ান বিনতি, শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন, ইয়াকুব আলী, ইকবাল হোসেন, কামরুল হাসান হিলটন, গোলাম গাউস, জাকির হোসেন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম, মনজুরুল আলম দুলাল, মাহফুজা আক্তার কিরণ, হাজী মো. টিপু সুলতান, আমিনুল হক মামুন, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ, সত্যজিৎ দাশ রুপু, মানস চন্দ্র দাশ ধলু, আমিরুল ইসলাম বাবু, বিজন বড়ুয়া, মাহমুদ খাতুন, আমের খান, এখলাস উদ্দিন, শফিকুল আজম ভূঁইয়া, শরিফ উদ্দিন, মনজুরুল করিম, সাইফুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন জনি, মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, সাইফুর রহমান মনি, খন্দকার রকিবুল ইসলাম, রওশন আক্তার ডেইজি, মহিদুর রহমান মিরাজ, মঞ্জুরুল করিম, শাহাদাত হোসেন, আবদুল হাফিজ, জসিম উদ্দিন খান খসরু, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, মো. রিয়াজ উদ্দিন, একেএম নুরুজ্জামান, মিজবাহ আহমেদ বিন সামাদ চৌধুরী, ছাইদ হাছান কানন, মাহবুবুর রহমান শাহীন, দেলোয়ার হোসেন, শাকিল আহমেদ চৌধুরী ও শাহিন হাসান।
নির্বাচনে সভাপতি পদ ১টি, প্রার্থী চারজন। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ ১টি প্রার্থী তিনজন। সহ-সভাপতি পদ ৪টি, প্রার্থী ১২ জন। সদস্য পদ ১৫টি, প্রার্থী ৪৩ জন। মোট ২১ পদে ৬২ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ফুটবলপ্রেমীদের প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত বাফুফে নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্ধতাপুর্ন নাকি এক তরফা হয় সেটিই দেখার বিষয়।