ভারত সফরে রীতিমত নাস্তানাবুদ নাজমুল হাসান শান্তরা। টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু বাংলাদেশ দলের হতাশাজনক পরাজয় ছাপিয়ে আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে সাকিব আল হাসান ইস্যু। সম্প্রতি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেনএই অলরাউন্ডার। তবে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিদায়ী টেস্ট খেলতে চান বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার। তার এই স্বপ্ন পুরণে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। হত্যা মামলায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সাকিব এখন আইনের চোখে আসামি। তাই দেশে ফিরলে তার গ্রেফতার হওয়ার শঙ্কা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাকিব নীরব থাকায় ভক্তরা ক্ষুদ্ধ ছিলেন। তবে দেরিতে হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন সাকিব। ছাত্র আন্দোলনে মারা যাওয়া ছাত্র-জনতার ত্যাগের কথা স্মরণ করে নিজের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কেন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন তাও জানিয়েছেন। দেশের মাটিতে শেষ টেস্টে সব ক্রীড়াপ্রেমীদের পাশে চেয়েছেন সাকিব। তার এমন আকুতিতে শিক্ষার্থীদের মন গলেনি। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। প্রতিবাদ হিসেবে সাকিবের ছবি টানিয়ে জুতাপেটা করেছেন। স্টেডিয়ামে সামনে ব্যানারে নানা মন্তব্য লেখা রয়েছে। তার একটি হচ্ছে, ‘সাকিব তুমি মিরপুরের ক্রিকেট পিচ চিনতে পারো, কিন্তু আমরা মিরপুরের রাজপথ চিনে বড় হয়েছি।’ সাকিবকে নিয়ে এসব মন্তব্যই বলে দেয়, বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের ব্যাপারে ভালোই কঠোর মিরপুরের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানালেন, সাকিবের দেশে আসা নিয়ে আইনি কোনো বাধা নেই।
গতকাল রোববার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। এ সময় সাকিবের দেশে আসা কিংবা খেলা শেষে দেশত্যাগ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘একজন ক্রিকেটার তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, আসার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা আমি দেখি না। তবে যেটা দেয়াল লিখনের কথা বলছেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দেখেছি, এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদের ওই অধিকার আছে। তবে এক্ষেত্রে কারো নিরাপত্তা যেন আমরা হুমকির মুখে না ফেলি।’ সাকিবের ইস্যুতে আইনমন্ত্রণালয়ের সাথেও কথা হয়েছে উল্লেখ করে আসিফ বলেছেন, ‘দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা তো থাকার কথা না।
আর আইনের বিষয়টা আইন মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা করতে পারবে। আমি বিশেষজ্ঞও না কিংবা আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও না। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাাদেরও কথা হয়েছে। আসিফ নজরুল স্যার এরই মধ্যে বলেছেন সংশ্লিষ্টতা না পেলে প্রাথমিক তদন্তেই আসলে যে মামলা হয়েছে হত্যা মামলা। ওখান থেকে নাম বাদ পড়ে যাবে।’ ক্রীড়া উপদেষ্টা আহ্বান জানিয়েছেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার, ‘যদি আইনগত কোনো বিষয় থাকে, আইন তো আইনের গতিতে চলে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। তো নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদের পরিবেশটাও ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের দেশগুলো বাংলাদেশে খেলতে আসতে নিরাপত্তার অভাবটা অনুভব করবে।’
১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে পা রাখার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার। এই সিরিজের আগে বিসিবির দল ঘোষণাও করতে হবে। এই অবস্থায় তারা কী ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেছেন, ‘দল দেয়ার বিষয়টা তো বিসিবি দেখবে। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেক নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এবং ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করবো।’ ক্রীড়া উপদেষ্টা অবশ্য জানিয়েছেন, জুলাই বিপ্লবে যে আন্দোলন হয়েছে, সেই জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের আবেগের গুরুত্বও আছে, ‘আমি মনে করি যে আবেগের জায়গাটা অবশ্যই আছে। যেহেতু বড় একটা আন্দোলন হয়েছে এবং সাকিব আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যেটা উনি ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন উনার পোস্টে। তারপরও কিছু ইমোশন রয়ে গেছে। লজিক্যাল বা ইলজিক্যাল আমি ওই প্রশ্নে যাবো না। সেটা অন্য বিতর্ক।’ কিছু ইমোশন থাকলেও আসিফ বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ‘তবে কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। আইন তো আসলে আইনের মতো চলে। সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আসিফ স্যার একটা কথা বলেছেন। তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এবং এটা ইতোপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে এত বড় একটা অভ্যুত্থান হয়েছে। এরপর আসলে যেটা হয় বিভিন্ন দেশে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল জায়গাটা ধরে রেখেছে। আমরা ওই ধরনের পরিস্থিতির দিকে আসলে এত বেশি যাইনি। অনেকে মনে করছিল খুব বাজে অবস্থা হবে।’
প্রসঙ্গত, আদাবরের রিংরোডে গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আদাবর থানায় করা মামলায় তাকে ২৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ জন আসামি। অজ্ঞাত আরো ৪০০-৫০০ জনের কথা উল্লেখ রয়েছে।