বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর

হাথুরুসিংহের সঙ্গে চুক্তি বাতিল

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

টাইগারদের প্রধান কোচ হিসেবে প্রথম দফায় মেয়াদ পুর্ণ না করেই চলে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায়ও মেয়াদ পুর্ণ করতে পারলেন না চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার অগেই ছাঁটাই হয়ে গেলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এই শ্রীলঙ্কান কোচ। ৪৮ ঘণ্টার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দুই দিন আগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল হাথুরুকে। অবশেষে তাকে পাকাপাকিভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত থাকা চুক্তিও। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জরুরি এক জুম মিটিংয়ে হাতুরাসিংহেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করে বিসিবি। দেশে থাকা পরিচালকরা জুম মিটিংয়ে বসেছিলেন আইসিসির মিটিংয়ের জন্য দুবাইয়ে থাকা বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।

গত ১৭ অক্টোবর অসদাচারণের দায়ে হাথুরুসিংহেকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাকে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব দিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া তাকে। হাথুরুসিংহের সেই শোকজের জবাব দিয়েছেন। সেই জবাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে আজকের বিসিবি সভায়। তা সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গত মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেটে স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলন করে হাথুরুসিংহেকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি জানান বিসিবি সভাপতি। বেশ কিছু বিষয়ে তার উপর অসন্তুষ্ট থাকায় হাথুরুকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার কথাও বলেন তিনি, ‘আমরা আমাদের কোচকে (হাথুরুসিংহে) শোকজ নোটিশ দিয়েছি ৪৮ ঘণ্টার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দুই দিন আগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। অবশেষে তাকে পাকাপাকিভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত থাকা চুক্তিও। এবং সাময়িক বরখাস্ত করেছি।’ জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘(তার কর্মকাণ্ডে) এমন কিছু সমস্যা ছিল যা আমি একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে সহ্য করতে পারি না। হাথুরুসিংহকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে এবং তার বরখাস্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর পরে তার চুক্তি স্থগিত করা হবে।’

তবে সময় বেধে দেয়া হয় ৪৮ ঘণ্টার বেশ আগেই চিঠির জবাব দিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। কিন্তু চিঠির জবাব যাই আসুক না কেন তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিল বিসিবি। হাথুরুসিংহে তার আইনজীবীর পরামর্শে চিঠির জবাব দিয়ে অপেক্ষা করছেন বিসিবির পরের পদক্ষেপের। বিসিবি তাকে চাকরিচ্যুত করলে পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলবেন এই লঙ্কান। জুম সভায় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে হাথুরুসিংহের প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়, হাথুরুসিংহে যদি আইনি পথে যান বিসিবি তা আইনিভাবেই মোকাবিলা করবে।

২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলার সময়ে ক্রিকেটার নাসুম আহমেদকে চড় মারা বা শারীরিক লাঞ্ছিত করার যে অভিযোগ হাথুরুর বিরুদ্ধে, সেটার প্রমাণ পেয়েছে বিসিবি। ফারুক বলেন, ‘আমরা মানুষ। হিট অব দ্য মোমেন্টে অনেক কিছু হতেই পারে। তবে একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে আপনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে পারেন না। সে কারণে যে শাস্তি পেতে হয়, সেটাই হচ্ছে (ছাঁটাই)। এটা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল। এখন হয়েছে, আমি খুশি।’ বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার খারাপ লেগেছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার দেশের গৌরব, ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। ওই নামটা আর না নিই, ওটা ছিল কোচের অসদাচরণ। ভিকটিম, প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যক্ষদর্শীরও রিপোর্ট ছিল। তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছি।’

হাথুরুকে ছাঁটাই করতে আইনগত দিক খুঁটিয়ে দেখতে হয়েছে বিসিবিকে। হাথুরুকে বরখাস্ত করতে বিসিবির সুবিধা হয়েছে তার অতিরিক্ত ছুটি ভোগের কারণে। বিসিবিকে না জানিয়ে বছরে তার পাওনা ৪০ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন হাথুরু। ফারুক বলছেন, ‘একজনের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়ার কিছু নেই। সে যে সময় ছুটি কাটিয়েছে, সেটা ৩ মাসের বেশি। ওটাও অসদাচরণের অংশ। বিচ্ছিন্নভাবে তিনি ই-মেইলে জানিয়েছেন, তবে সেটা তিন মাসের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আপনার জবাবদিহি থাকতে হবে। এখানে নিয়ম ভেঙেছেন, আমরা জানিয়েছি যে খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার অসদাচরণ এবং একজন কর্মী হিসেবে নিজের অসদাচরণ।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলে দুই দফা কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহে। প্রথম দফায় ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তবে চুক্তির মাঝপথে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেন তিনি। তখন এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। মূলত শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার জন্য সেই সময়ে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়েন। তবে খুব বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেননি নিজ দেশে। এরপর ২০২৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার হাথুরুসিংহকে কোচের পদে ফিরিয়ে আনেন প্রেসিডেন্ট নাজমুল হোসেন পাপনের অধীনে থাকা তৎকালীন ক্রিকেট বোর্ড। তার সঙ্গে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত চুক্তি করা হয়ে। অর্থাৎ সেই মেয়াদ ছিল আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু এর আগেই বরখাস্ত করা হলো এই কোচকে।