সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি প্রিয় আঙিনা শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। স্বপ্ন পুরণের পথেই ছিলেন দেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার। তাকে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শেষ টেস্ট খেলতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পথে ছিলেন সাকিব। তবে শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারেননি। একদল বিক্ষোভকারীর বিক্ষোভের কারণে দুবাইয়ে যাত্রা বিরতি থেকেই ফিরে যেতে হয় তাকে। মূলত ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে’ তাকে এই পরামর্শ দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এ ঘটনায় ব্যথিত হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সাকিবের সবচেয়ে ঘনিষ্ট কোচ বলা হয় সালাউদ্দিনকে। দুজন গুরু-শিষ্য হলেও সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। সাকিব যখন ক্যারিয়ারের শুরুতে সালাউদ্দিন ততদিনে কোচ হয়ে গেছেন। সাকিবকে প্রথমদিকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিজের ক্লাবে খেলিয়েছিলেন এই কোচ। জাতীয় দলে অভিষেকের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাবগুলো থেকে প্রস্তাব পাচ্ছিলেন সাকিব। তখন সাকিবকে টাকার পেছনে ছুটতে মানা করেছিলেন সালাউদ্দিন। বলেছিলেন, ‘একদিন টাকা তোমার পেছনে ছুটবে।’
সালাউদ্দিনের কথা সত্যি হয়েছে। খুব কাছের বন্ধুতুল্য শিষ্যের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষটা দেশের মাটিতে দেখতে না পেয়ে ব্যথিত হয়েছেন এই কোচ। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সালাউদ্দিন। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। একটি হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে তাকে। তার আগমনের খবরে গত কয়েক দিন ধরে চলছে বিক্ষোভ। ‘মিরপুর ছাত্র জনতা’ ব্যানার নিয়ে একদল বিক্ষোভকারী গত বৃহস্পতিবারও শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জড়ো হন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে সাকিবের দেশে ফিরতে না পারার ব্যাপারে নিজের অভিমত জানিয়েছেন সালাউদ্দিন। সাকিবের ‘মেন্টর’ হিসেবেও পরিচিত কোচের লেখায় মাশরাফি রয়েছে বিন মর্তুজা আর তামিম ইকবালের নামও। গত অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাকিবের পাশাপাশি মাশরাফির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কয়েকটি।
ফেসবুকে নিজের স্বীকৃত পেজে সালাউদ্দিন লিখেছেন, ‘দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি কখনই এতো রাগ বা কষ্ট লাগে নাই, আজ কেন যেন লাগছে। আমরা মানুষ কি কখনো নিজেরা ভুল করি না? কেউ অনুতপ্ত হলে তাকে একটা সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু আমরা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি মানুষ হিসেবে, দয়া-মায়া জিনিসটা আমাদের মধ্যে থেকে উঠে গেছে। একটা মানুষ দেশের জন্য ১৭টা বছর কিছু না কিছু করেছে। আজ ক্রিকেট বিশ্ব আমাদের একটু সম্মান করে কাদের জন্য? তারা ক্রিকেট মাঠে নামতে পারবে না, এই কান্না তো সবাই দেখবে না। রাজনীতি করছে বলে এরা খুনি? এদের সাথে মিশেছেন? এরা কত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, জানেন আপনি? এরা কত অসহায় মানুষের চিকিৎসা করিয়েছে, সেটা কি জানেন? তারা স্ট্যাটাস না দেয়ার কারণে আজ শত্রু। যখন মাশরাফি ৫টা অপারেশন করিয়ে দেশের জন্য লড়াই করছে, তা কি দেখছেন? সাকিব আঙুলে চিড় নিয়ে বোলিং করে গেছে, তামিম এক হাতে ব্যাটিং করে গেছে কাদের জন্য? দেশকে সবাই কম-বেশি ভালোবাসে, এদের ভালোবাসাটা হয়তো দেখা যায়ও না। এদের কাছ থেকে দেখেছি, এরা মানুষের উপকার ছাড়া কারো ক্ষতি করেনি। এরা খুনি না। খুব কষ্ট পাচ্ছি, এদের মাঠ থেকে বিদায় দেখতে পাব না। মানুষকে মাফ করুন, আল্লাহ আমাদের অনেক অপরাধ মাফ করে দেবেন। আমরা সবাই কম-বেশি অপরাধী। সম্মান কাউকে দিলে আপনি ও সম্মানিত হবেন।’