ঢাকা ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট

‘বিশ্বাসে’ ভর করে জয়ের স্বপ্ন মিরাজদের

‘বিশ্বাসে’ ভর করে জয়ের স্বপ্ন মিরাজদের

বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠার টেস্ট এই ম্যাচ দিয়ে শুরু করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ম্যাচ শুরুর আগে তা নিশ্চিত করেছেন। সাকিব হয়ে ওঠার চাপ কম না। দেশের ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারের অভাব ভুলিয়ে দেয়া পারফরম করা চাই। ঠিক এই সময় মিরাজ হাত তুললেন শুধু শান্ত নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জানিয়ে দিলেন ‘আমি আছি’। দলের বিপদ সামাল দিতে যতবার তিনি হাল ধরেছেন বাংলাদেশ জিতেছে। টেস্টে হয়তো এমন উদাহরণ নেই। এবার সেই সম্ভাবনা জেগেছে মিরপুরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সামনে যখন ইনিংস পরাজয়ের খড়গ ঝুলছে, মিরাজ তখন মাথা তুলে দাঁড়ালেন প্রবল প্রতিরোধে। লড়াইয়ে সঙ্গী পেলেন অভিষিক্ত জাকের আলিকে। দুজনের রেকর্ড গড়া জুটি আর বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে মিরপুর টেস্ট গড়াল চতুর্থ দিনে। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকটে ২৮৩। প্রথম ইনিংসে ২০২ রানের ঘাটতি ঘুচিয়ে তারা এখন এগিয়ে ৮১ রানে। উইকেট আছে তিনটি। এই লিডকে যদি বাড়িয়ে নেয়া যায় ১৫০-১৮০ রানে, জয়ের লড়াই করার স্বপ্নও তখন দেখতে পারে দল। সেই আশা জিইয়ে আছে মিরাজ এখনো টিকে আছেন বলেই। এই সময়ে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক টেস্ট ক্রিকেটার নিজের মূল্য বুঝিয়ে দিয়েছেন আরো একবার। দিনশেষে তিনি অপরাজিত ১৭১ বলে ৮৭ রান করে। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২ রান আউট হওয়া কাজের এবার করেছেন ৫৮। মিরপুরের পিচ এ দিনও ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন ছিল না। তবে দিনের শুরুটা বাংলাদেশের ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। নিস্তরঙ্গ চারটি ওভারের পর কাগিসো রাবাদার বেশ বাইরের বলে অহেতুক ব্যাট চালিয়ে আউট মাহমুদুল হাসান জয় (৯২ বলে ৪০)। এক বল পরই ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে উপড়ে যায় মুশফিকুর রহিমের মিডল স্টাম্প (৩৯ বলে ৩৩)। দুই ব্যাটসম্যানই আগের দিনের সঙ্গে যোগ করতে পারেন স্রেফ দুটি করে রান। মুশফিক বোল্ড হলেন টানা চার টেস্ট ইনিংসে। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ৩৭ বার বোল্ড হলেন ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের রেকর্ডটি অনেক আগে থেকেই তার।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও রাবাদার ভেতরে ঢোকা বলে আউট হয়েছিলেন তিনি। সুদীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কতবার এই ধরনের ডেলিভারিতে আউট হলেন, ইয়ত্তা নেই সেটির। সাতসকালে অমন জোড়া ধাক্কার পর দল আরো টালটামাল হয়ে ওঠে লিটন কুমার দাসের দ্রুত বিদায়ে। কেশাভ মহারাজের টার্ন ও বাউন্সে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন কিপার-ব্যাটসম্যান (৭)। সাত রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ইনিংস পরাজয়কে আলিঙ্গন করার অপেক্ষায়। তবে মাথা নত করতে নারাজ ছিলেন মিরাজ ও জাকের। দুজনের কারো ব্যাটিংয়ে অস্বস্তি খুব একটা ছিল না। রাবাদার টানা দুই ওভারে বাউন্ডারিতে মিরাজ বুঝিয়ে দেন, ভড়কে যাননি তিনি। মহারাজকে প্যাডল সুইপে বাউন্ডারিতে রানের পথে ছুটতে শুরু করেন জাকের। রাবাদার প্রান্তে ভিয়ান মুল্ডারকে এনেও লাভ হয়নি তাদের। দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ চালাতে থাকেন প্রোটিয়া অধিনায় এইডেন মার্করাম। তবে মিরাজ ও জাকের খেলতে থাকেন স্বচ্ছন্দে। বিশেষ করে, ডেন পিটকে পাত্তা দেননি দুজনের কেউই। আক্রমণে আসার পরপরই এই অফ স্পিনারকে ছক্কায় স্বাগত জানান মিরাজ। পরে মহারাজের ওভারেও মারেন জোড়া বাউন্ডারি। সময়ের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন জাকেরও। দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়ান কাইল ভেরেইনার মতো এই দুজনও সুইপ শটকে কাজে লাগান দারুণভাবে। লাঞ্চের একটু আগে মিরাজ পৌঁছে যান নবম টেস্ট ফিফটিতে। লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। লাঞ্চের পরও খুব একটা বিপাকে পড়তে হয়নি তাদেরকে। পিটকে চার মেরে অভিষেকে পঞ্চাশে পা রাখেন জাকের। টেস্ট অভিষেকে ফিফটি করা বাংলাদেশের অষ্টাদশ ব্যাটসম্যান তিনি। একটু পরই থামতে হয় তাকে। মহারাজের স্কিড করা ডেলিভারি পেছনের পায়ে খেলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান জাকের। ১১১ বলে ৫৮ রান আসে তার বাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে ফিফটি আগে ছিল শুধু ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মোসাদ্দেক হোসেনের ৭৫। মিরাজের সঙ্গে তার জুটি থামে ১৩৮ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫ টেস্টে বাংলাদেশের শতরানের জুটি ছিল আগে স্রেফ আর একটিই। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩১ রান যোগ করেছিলেন জাভেদ ওমর বেলিম ও হাবিবুল বাশার। মহারাজের ওই ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি নাঈম হাসান। এলবিডব্লিউ দিয়ে দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউয়ে দেখা যায়, বল চলে যাচ্ছিল স্টাম্পের ওপর দিয়ে। এরপর আর ভুল করেননি নাঈম। আরেক প্রান্তে মিরাজ তো অবিচল। দুপুরে বৃষ্টিতে ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়।

৮০ ওভার হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় নতুন বল নেয়া সময় হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু পেস বোলিং করার মতো আলো তখন ছিল না। মহারাজ-মার্করামের স্পিন ৫ ওভার চালানোর পর আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয় দুপুর সোয়া তিনটায়। এরপর আর শুরু হতে পারেনি। বৃষ্টির কারণে বুধবার দিনের বেশিরভাগ সময়ই নষ্ট হয়েছে। প্রথম দফায় ৮০ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ৫ ওভার খেলা হলেও আলোর স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা আগেভাগে শেষ করে দিতে বাধ্য হন আম্পায়ারা। ৮১ রানে এগিয়ে থেকে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিন শুরু করবে স্বাগতিকরা। এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে এদিনও প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় ঢাকা টেস্টের ভাগ্যে কী আছে, সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত