ভিনিসিয়ুসের হ্যাটট্রিক

প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে অবিশ্বাস্য জয় রিয়ালের

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

নতুন ফরম্যাটের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগের ম্যাচে অঘটনের শিকার হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। লিলের কাছে হেরে যাওয়াটা ছিল বড্ড বেমানান। ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হিসেবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে পেয়েছিল তারা, কিন্তু ঘরের মাঠে আরো বড় ধাক্কা লাগে রিয়ালের গায়ে। ৩৪ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে ২-০ গোলে। প্রথমার্ধে দুই গোল হজম করা রিয়াল দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ালো অসাধারণ কায়দায়। হারের শঙ্কা উড়িয়ে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে স্রেফ তছনছ করে দিল তারা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে তুলে নিল বড় জয়। গত মঙ্গলবার রাতে ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মঙ্গলবার রাতে ৫-২ গোলে ডর্টমুন্ডকে বিধ্বস্ত করেছে রিয়াল। আসরে তিন ম্যাচে প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এটি দ্বিতীয় জয়। ভিএফবি স্টুটগার্টের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে জয়ের পর গত রাউন্ডে তারা লিলের মাঠে হেরে গিয়েছিল।

ডোনিয়েল মালেন ও জেমি গিটেন্সের গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের মাঠে প্রথম জয়ের হাতছানি তখন পাচ্ছিল তারা। কিন্তু কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের ভাবনা ছিল একেবারেই আলাদা। আরেকটি স্মরণীয় প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ৩৩ মিনিটের মধ্যে পাঁচবার গোলের উল্লাস করে স্প্যানিশ পরাশক্তিরা। ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থাকা রিয়ালের আক্রমণের তীব্র জোয়ারে একেবারে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় ডর্টমুন্ড। ভিনিসিয়ুসকে থামানোর কোনো উপায় যেন জানা ছিল না নুরি শাহিনের শিষ্যদের। তিনটি গোলের দুটিই তিনি করেন একক নৈপুণ্যে। স্বাগতিকদের বাকি দুই গোলদাতা হলেন অ্যান্টোনিও রুডিগার ও লুকাস ভাজকেজ। প্রথমার্ধে উত্তেজনাপূর্ণ শুরুর পর কিছুটা থমকে আসে খেলার গতি। তবে আধা ঘণ্টা পেরোতেই প্রাণ খুঁজে পায় দুই দলের লড়াই। ৩০তম মিনিটে ডি-বক্সে সেহু গিরাসির ঠাণ্ডা মাথার পাসে ডাচ ফরোয়ার্ড মালেন লক্ষ্যভেদ করেন।

এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ফের রিয়ালের জালে প্রবেশ করে বল। চার মিনিট পর মালেন ডানদিক থেকে পাস বাড়ান বাঁদিকে। ছুটে গিয়ে বল জালে পাঠান ইংলিশ ফরোয়ার্ড গিটেন্স। দুটি গোলেই ফুটে ওঠে আনচেলত্তির দলের রক্ষণভাগের দুর্বলতা। ম্যাচে ফেরার জন্য তৎক্ষণাৎ মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। ৩৫তম মিনিটে জুড বেলিংহ্যাম নষ্ট করেন দারুণ একটি সুযোগ। ফাঁকায় থেকেও তার নেয়া দুর্বল হেড সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেল। পরের মিনিটে বিস্ময় জাগিয়ে দুবার দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয় রিয়ালের। রদ্রিগোর শট ক্ররবারে বাধা পাওয়ার পর বেলিংহ্যামের শট ক্রসবারে লেগে গোললাইনে পড়ে বেরিয়ে যায়। ডর্টমুন্ডও ব্যবধানে বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। তবে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া তা হতে দেননি। ৩৮তম মিনিটে ইউলিয়ান ব্রান্ডট ও ৪০তম মিনিটে গিটেন্সের দূরপাল্লার শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন তিনি।

বিরতির পর থেকেই রিয়ালের আক্রমণের জোর বহুগুণে বাড়ে। খোলসে ঢুকে পড়া ডর্টমুন্ডের রক্ষণে বারবার হানা দিতে থাকে তারা। তবে ফেদেরিকো ভালভার্দে ও ভিনিসিয়ুস সুযোগ পেলেও কোবেলকে পরাস্ত করতে পারেনি। খেলার ধারার বিপরীতে মালেনের নেয়া শটও ঠেকান কোর্তোয়া।

অবশেষে রিয়াল সফলতার মুখ থেকে ম্যাচের এক ঘণ্টায় গিয়ে। তখন পর্যন্ত অনুজ্জ্বল থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পে ডানদিক থেকে ক্রস করেন ডি-বক্সে। জোরালো হেডে জাল কাঁপান জার্মান ডিফেন্ডার রুডিগার। শুরু হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজাদের তাণ্ডব। দুই মিনিটের মধ্যে সমতায় ফেরে রিয়াল। লুকা মদ্রিচের পাস এমবাপ্পে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগেই ট্যাকলের শিকার হন। সৌভাগ্যক্রমে বল চলে যায় ভিনিসিয়ুসের পায়ে। ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। শুরুতে অফসাইডের বাঁশি বাজালেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি বাজান গোলের বাঁশি। ৮০তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে নেয়া এমবাপ্পের শট রুখে দেন কোবেল। দুই মিনিট পর কোর্তোয়া কোনোক্রমে পা দিয়ে ঠেকান ম্যাক্সিমিলিয়ান বায়ারের শট। ম্যাচের বাকি সময়ের গল্পটা কেবলই রিয়াল ও ক্লাবটির সমর্থকদের উন্মাদনায় ভেসে যাওয়ার। ৮৩তম মিনিটে কোর্তোয়ার পা থেকে বল পেয়ে পাল্টা আক্রমণে ওঠে রিয়াল। ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে দুরূহ কোণ থেকে জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ভাসকেস। ৮৬তম মিনিটে দলের হয়ে চতুর্থ গোলটি করেন ভিনিসিয়ুস। একক চেষ্টায় নিজেদের বক্সের পাশ থেকে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটেও একক নৈপুণ্যে আরেকটি চমৎকার গোলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ভিনিসিয়ুস। সেই সঙ্গে দলের বড় জয়। এই জয়ে তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে উঠেছে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ডর্টমুন্ড। দিনের আরেক ম্যাচে বোলোনিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে অ্যাস্টন ভিলা। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি।