সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ

ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

তহুরা খাতুনের হ্যাটট্রিক

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসনটি বর্তমানে সাবিনা খাতুনদের দখলে আছে। দুই বছর আগে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার সাফের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে এবারের আসরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সূচনাটা ভাল হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে কোনো রকমে হার এড়িয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ফলে শিরোপা ধরে রাখা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। তা ছাড়া দলে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বদ্বের আভাস মিলেছিল। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যেই নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে গুড়িয়ে দিয়েছে কোচ পিটার বাটলারের শিষ্যরা। এতে নিজেদের ক্ষয়ে যাওয়া আত্ববিশ্বাস ফিরে পায় মেয়েরা। বদলে যায় দলের আবহ। তৃতীয় ম্যাচে সাবিনাদের প্রতিপক্ষ ছিল ভুটান। যাদের ৮-০ গোলে হারিয়ে গত আসরের ফাইনালে উঠেছিল লাল সবুজের কন্যারা। এবারো ভূটানকেই বিধ্বস্ত করে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে তারা। গতকাল রোববার নেপালের কাঠমা-ুর দশরথ স্টেডিয়ামে আসরের প্রথম সেমিফাইনালে ভূটানকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দলের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন তহুরা খাতুন, দুই গোল করেন অধিনায়ক সাবিনা। এ ছাড়া গোল পেয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা ও মাশুরা পারভিন। এই জয়ে সাফের আঙিনায় ভুটানের বিপক্ষে কখনো না হারার আধিপত্যও ধরে রাখল বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের সেরা এই প্রতিযোগিতায় সাবিনাদের অজেয় যাত্রা বেড়ে হলো আট ম্যাচে। এদিন ম্যাচে একটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ। আক্রমণভাগে শামসুন্নাহার জুনিয়রের জায়গায় খেলান সাগরিকাকে; জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকে ভুটানের বিপক্ষেই হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড। জ্বরের কারণে আগের দিনের অনুশীলনে না থাকলেও, সেরে উঠে সাবিনা খেলেন শুরু থেকে।

আসরের প্রথম সেমিফাইনালের কিক-অফের বাঁশি বাজতেই আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে ঋতুপর্ণার ক্রসে তহুরা পা ছোঁয়ালেও বল যায় বাইরে। গোল না মিললেও জয়ের জন্য ভুটানের রক্ষণে বাংলাদেশের আধিপত্য হয়ে ওঠে স্পষ্ট। সপ্তম মিনিটে অসাধারণ গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তহুরা দারুণ বডি ডজে মার্কারদের পেছনে ফেলে বল নিয়ে আক্রমণে উঠে বাঁদিকে ঋতুকে পাস দিয়েছেন। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে ভুটানের গোলকিপারকে পরাস্ত করেন ঋতু। ৮ মিনিট পরেই নিজেই গোল করেন তহুরা। বক্সের ঠিক সামনে বল ধরে দ্রুত ঘুরে প্লেসিং শটে জালে জড়ান তিনি। ২৫ মিনিটে তৃতীয় গোল আসে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের পা থেকে। বক্সে ঢুকে মনিকা চাকমার ক্রস থেকে শট করে গোল পান কাপ্তান। ৩৫ মিনিটে ফের তহুরার ম্যাজিক। বক্সের সামনে বল ধরে বাঁকানো শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন তিনি। দুই মিনিট পরই মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে একা ছুটে গিয়ে গোলরক্ষককে কাটিয়ে পঞ্চম গোল করেন সাবিনা। বিরতির আগে ভুটান এক গোল ফেরত দিলেও বাংলাদেশের দাপট ছিলো স্পষ্ট। ৫৮ মিনিটে হ্যাটট্রিক পুরো করেন তহুরা। বাম প্রান্ত দিয়ে তৈরি হওয়া আক্রমণে বল নিয়ে ছুটে যান সাবিনা। তার কাছ থেকে বল পেয়ে বুদ্ধিদীপ্তভাবে তহুরার দিকে বল বাড়ান মনিকা চাকমা। ফাঁকায় বল পেয়ে কোন ভুল না করে নিজের তৃতীয় ও দলের ৬ষ্ঠ গোল করেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড। সাফের আঙিনায় এটি তহুরার প্রথম হ্যাটট্রিক। চলতি আসরে ২১ বছর বয়সী তারকার গোল হলো ৫টি। পাঁচ মিনিট পর একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশের কোচ বাটলার। সাবিনা, সাগরিকা ও ঋতুপর্ণাকে তুলে স্বপ্না রানী, শাহেদা আক্তার রিপা ও সানজিদা আক্তারকে নামান কোচ। সাফে অভিষেক হলো রিপার। ৭২তম মিনিটে সানজিদার কর্নারে শিউলি আজিম হেডে স্কোরলাইন ৭-১ করেন। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাটলার বেঞ্চের আরো খেলোয়াড়দের পরখ করতে শুরু করেন; মাসুরা পারভীনকে তুলে কোহাতি কিসকু এবং মারিয়া মান্দা বদলি মাতসুশিমা সুমাইয়াকে নামান। ততক্ষণে শুরু হয়েছে শেষের বাঁশির অপেক্ষা। তা বাজতেই মুকুট ধরে রাখার অভিযানে শেষ ধাপে ওঠার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। সাবিনা-তহুরাদের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে টুর্নামেন্ট শুরু করা বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে পৌঁছায় সেমিফাইনালে। এবার অনুমিতভাবে ফেভারিটের মতন পা রাখল ফাইনালে। শিরোপা লড়াইয়ে নেপাল ও ভারতের ম্যাচের জয়ী দলের মুখোমুখি হবে ২০২২ সালের অপরাজিত চ্যাম্পিয়নরা।