ছাদখোলা বাসে সাফজয়ীদের বরণ
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে আগে কোনো দল যা করতে পারেনি এবার তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ইতিহাস গড়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমারা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে নেপাল, ভারত ও ভুটানের মতো দলকে হারিয়েছে লাল সবুজের কন্যারা। চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরেছেন পিটার বাটলারের শিষ্যরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টায় ঢাকায় এসে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। ঐতিহাসিক এই অর্জনের পর তাদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিল ছাদখোলা বাস। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নেয়ার পর ছাদখোলা বাসে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে, সেখানে তাদের দেয়া হয় সংবর্ধনা। বিকাল ৪টার দিকে তারা ছাদ খোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা। বিজয়ী মেয়েদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ’ মানুষ। হাত নেড়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। কেউ কেউ ছবিও তোলেন। সমর্থকরা লাল আর সবুজ রঙ ছুড়ে হল্লা করেন। নিচ থেকে ছুড়ে দেন ফুল। ছাদখোলা বাস থেকে ঋতুপর্ণা, সাবিনা, মনিকারাও পতাকা নেড়ে সাড়া দেন। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে এসছিল ‘আল্ট্রাস’ নামে একটি সংগঠন। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ কয়েকজন তরুণের সংগঠন এটি। বিমানবন্দরের সামনের সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা।
দুই বছর আগে গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে এ মাঠেই নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর পেটার জেমস বাটলারের অধীনে ফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাদের ছাদখোলা বাসে তাই অবশ্যম্ভাবীভাবেই ছিলেন কোচ। ২০২২ সালেও সাফের শিরোপা জেতার পর ছাদখোলা বাসে নারী ফুটবলারদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিল বাংলাদেশ। যে ছাদখোলা বাসে চড়ে মেয়েরা বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে যান, রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে সেটা আবার সাজানো হয়েছিল সরকারের বিভিন্ন নেতাদের ছবি দিয়ে। সেবার ছাদখোলা বাসে একপাশে বড় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ছবি সাঁটানো হয়। ছিল বাফুফের হর্তা-কর্তাদেরও ছবিও।
এ নিয়ে সেসময় সারাদেশে ব্যপক সমালোচনা হয়। তবে গেল ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশে বদলে গেছে অনেক কিছুই। তার ছোঁয়া লেগেছে বাফুফেতেও। প্রায় দেড় যুগ পর কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে নতুন সভাপতি হয়েছেন বিএনপি নেতা তাবিথ আওয়াল। পালাবদলের ছোঁয়ায় এবার ছাদখোলা বাসে ছিল শুধুই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের ছবি। বাসের পোস্টারে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সঙ্গে অফিসিয়াল ফটোসেশনের সবাইকে রাখা হয়েছে। শুরুর একাদশে থাকা দলের ছবিও আছে সেখানে। একপাশে আছে এবছর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতা ঋতুপর্ণা চাকমার ট্রফি গ্রহণের ছবিও। ঋতুপর্ণা চাকমার ছবির উপরে রয়েছে স্পন্সরদের লোগো। নারী ফুটবলে দীর্ঘদিনের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংক। সেই ২০১৬ সাল থেকে নারী ফুটবলের সঙ্গে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। উৎসবের এই উপলক্ষ্যে বাফুফে স্মরণ রেখেছে তাদেরও।
এছাড়া দলের বেভারেজ পার্টনার পুষ্টি, ট্যাকনিক্যাল পার্টনার আমরাও বছরব্যাপী বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাই তাদের লোগোও আছে বিশেষ এই স্থানে। বিকাল সাড়ে ৪টায় বিমাবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বাসটি বের হয়ে যায়। এরপর তাদের নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে ছাদখোলা বাসটি। এফডিসি মোড়ে নেমে সাত রাস্তার মোড় হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল হয়ে যায় পল্টনে। এরপর নটরডেম কলেজর সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পার হয়ে সাবিনা-ঋতুপর্ণারা সন্ধ্যায় পৌঁছান বাফুফে ভবনে। এরপর একে একে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা বাস থেকে নেমে প্রবেশ করেন বাফুফে ভবনে। সেখানে তাদের অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও বাফুফের নব-নির্বাচিত সভাপতি তাবিথ আউয়াল।