তিন মাসের বেতন বকেয়া। তবুও মাঠে নিবেদনের অভাব নেই তাদের। নানা প্রতিকুল অবস্থা পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে লাল সবুজের বাঘিনী কন্যারা। ধারাবাহিক সাফল্যের পরও মাথাগোজার ঠাঁই নেই মেয়েদের। আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংবর্ধনা নিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যাবেন তারা। সেখানেই নাকি প্রধান উপদেস্টার কাছে প্লট ব ফ্ল্যাট চাইবেন বলে জানান সাবিনা খাতুন। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) দাড়িয়ে সাফর্জী অধিনায়ক বলেন, ‘মেয়েরা খুবই নিম্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। কিছু দিন আগে যে বন্যা হয়েছে, সেখানে অনেকের পরিবারের বাসায় পানি উঠে গেছে। সবচাইতে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের পরিবারের মানুষরা যখন বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন তখন সত্যি বলতে তাদের থাকার কোনো যায়গা থাকে না। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করবো যেন মেয়েদেরকে কোনো প্লট বা ফ্লাট দিতে পারেন। সেটাই মেয়েদের জন্য সবচাইতে বড় উপহার হবে।’ প্রায় ১৬ দিন নেপালের কাঠমান্ডুর বিলাসবহুল হোটেল সোলটিতে কাটিয়েছেন সাবিনারা। সেখানে দেশি খাবার পাননি বলেই চলে। তাই গত বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে ফিরে দেশি খাবার ভর্তা দিয়ে পেট পুড়ে খেয়েছেন। সাবিনার মুখেই শুনুন, ‘আজকে (গতকাল) দুপুরে আমরা অনেক রকম ভর্তা দিয় ভাত খেয়েছি। মেয়েরা অনেকদিন দেশের বাইরে ছিল। তাদের চাওয়া ছিল ভর্তা দিয়ে খাবে। তাই আমরা ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। প্রায় ১২-১৪ রকমের ভর্তা ছিল। অনেক দিন পর পেট পুড়ে খেলাম।’ শিরোপা জেতার টুর্নামেন্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবিনা বলেন, ‘আমি মেয়েদের উপর আত্মবিশ্বাসি ছিলাম। আমি তাদের খুব ভালোভাবেই চিনি। তাদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে আমি জানি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর পরিস্থিতি আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচটা ড্র হওয়ার পরে আমাদের সামনে এমন সমীকরণ দাড়িয়েছিল আমাদের গোল কম খেতে হবে। যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই তবে আমাদের জিততে হবে। সবার মাথায় সেটা ছিল। সবাই মোটিভেটেড ছিল। পাশাপাশি চেষ্টা করেছি দলটাকে চাঙ্গা রাখার।’
দুবার সাফের শিরোপা জেতার পর এবার লক্ষ্যটা আরো উঁচুতে সাবিনাদের। নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে অধিনায়ক বলেন, ‘এখন আর পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। এখন সময়ে এসেছে মেয়েদের দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার। আমার সঙ্গে পাকিস্তানের অধিনায়কের (মারিয়া) সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক। সে আমাকে বলেছেন যে তোমরা ইউরোপের ক্লাবে খেলার যোগ্য। তোমাদের মধ্যে অনেক খেলোয়াড় রয়েছে যারা ইউরোপের ক্লাবে খেলার যোগ্যতা রাখে। এই বিষয়ে ফেডারেশনে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। যেন তারা এই বিষয়ের প্রতি নজর রাখে।’ অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ব্রিটিশ কোচ পিটার জেমস বাটলার। তাই দেশে ফিরেই মেয়েদের কোচের দায়িত্ব ছেড়েছেন। তাহলে কি ফের গোলাম রব্বানীকেই চাইছেন সাবিনারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিনায়কের কথা, ‘এটা আসলে ফেডারেশনের বিষয়। তবে তিনি (গোলাম রব্বানী ছোটন) অনেক দিন আমাদের কোচ ছিলেন, উনার অনেক সাফল্য রয়েছে। তিনি ফিরে আসলে এটা অবশ্যই আমি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখব।’