রাওয়ালপিন্ডিতে ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর হয়ে ভারতে গিয়েছিল পরবর্তী সিরিজ খেলতে। কিন্তু প্রতিবেশি দেশটিতে কোহলি রোহিতদের কাছে রীতিমত বিধ্বস্ত হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। ঘরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। এবার ফলাফল আরো ভয়ঙ্কর। মিরপুরের পর চট্টগ্রামেও অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। টানা দুই সিরিজ হেরে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকেও গেছে তারা। আর প্রথমবার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে প্রোটিয়ারা।
পাকিস্তানকে হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় চার নম্বরে উঠে এসেছিল বাংলাদেশ। সেই তারাই এখন আটে। পয়েন্ট ২৭.৫০ শতাংশ। ১৮.৫২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের পেছনে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০২৩-২৫ মৌসুমের এই চক্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে কেবল দুটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। সেই দুই ম্যাচ জিতলেও পয়েন্ট হবে ৩৯.৫৮ শতাংশ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি সিরিজ ২-০’তে জিতে তাহলে তলানিতে নেমে যাওয়ার শঙ্কা আছে বাংলাদেশের। শান্তদের হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি পাকিস্তানের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজ জিতে তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে ৪৩.৫৯ শতাংশ। সেক্ষেত্রে তলানিতে থেকে টেস্ট চক্র শেষ করবে বাংলাদেশ। ২০২১-২০২৩ চক্রেও কেবল ১১.১ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ৯ দলের টুর্নামেন্টে তলানিতে ছিল বাংলাদেশ। অথচ পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো করলে ফাইনাল খেলারও আশা জাগত বাংলাদেশের। সেই ছবিটা বদলে একেবারে তলানিতে নামার শঙ্কা! একেই বলে পাহাড় ধস। বাংলাদেশকে মিরপুরে হারানোটা ছিল উপমহাদেশে এক দশক পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট জয়।
চট্টগ্রামে সিরিজ জেতায় ৫৪.১৭ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন চার নম্বরে। তাদের দুটি সিরিজ বাকি। শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই দুই সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে ঘরের মাটিতে, তাই ফেভারিট প্রোটিয়ারাই। এই দুই সিরিজ জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬৯.৪৪ শতাংশ (ওভার রেটের জন্য পয়েন্ট না হারালে)। তাতে প্রথমবার ফাইনালে খেলা খুবই সম্ভব তাদের জন্য। অবশ্য বাংলাদেশে আসার আগে বদলে যাওয়া রাজনৈতিক কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ছিল পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা।
সিরিজ শেষে অবশ্য বাংলাদেশের আতিথেয়তা আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশংসাই করেছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম, ‘এখানে আসার আগে বিষয়গুলো অনেক কনফিউজিং ছিল। ধীরে ধীরে সেসব কমেছে। সবার আতিথেয়তা অসাধারণ ছিল। নিরাপত্তাও ছিল দারুণ। মাঠের ক্রিকেটে আমরা নিজেদের কাজটা করতে পেরেছি, সফল হতে পেরেছি। বাংলাদেশে দারুণ সময় কেটেছে আমাদের। রাস্তায় দারুণ নিরাপত্তা ছিল। এসবের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন সবাইকে ধন্যবাদ।’ ফাইনালের ফেভারিট এতদিন ছিল ভারত। নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা দুই টেস্ট হেরে শঙ্কায় পড়েছে তারা। ভারতের পয়েন্ট ৬২.৮২ শতাংশ, তারা এক নম্বরেও আছে। কিন্তু শেষ সিরিজটা অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ায় অঙ্কটা কঠিন। নিউজিল্যান্ডকে শেষ টেস্টে হারালে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ টেস্টের সিরিজ তাদের জিততে হবে ৩-২’এ। নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে হবে ৪১ ব্যবধানে। তাতে মন্থর ওভার রেটের কারণে কোনো পয়েন্ট জরিমানা করা না হলে ভারতের শতকরা পয়েন্ট বেড়ে হবে ৬৪.০৪। আর বাকি ৬ টেস্টই জিতলে ভারতের পয়েন্ট হবে ৭৪.৫৬ শতাংশ।
অস্ট্রেলিয়া ৬২.৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শেষে শ্রীলঙ্কায় দুই ম্যাচের সিরিজ জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৭৬.৩২ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া যদি ভারতের কাছে ৩২ ব্যবধানে হারে আর ২ ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করে, তাহলে তাদের শতকরা পয়েন্ট হবে ৬০.৬৩। শ্রীলঙ্কা যদি নিজেদের শেষ ৪ ম্যাচেই জেতে, তাহলে তাদের শতকরা পয়েন্ট বেড়ে হবে ৬৯.২৩।
সে ক্ষেত্রে ফাইনাল খেলতে পারে তারাও। নিউজিল্যান্ডের বাকি আরো ৪ ম্যাচ। কিউইরা যদি সব ম্যাজ জেতে, তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬৪.২৮।
ফাইনালের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে তারা। তবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ আর অন্য দলের ফল নিজেদের পক্ষে এলে স্বপ্ন দেখতে পারে কিউইরাও।