নেপাল-ভারতের তুলনায় কেমন বেতন পান সাবিনা-ঋতুপর্ণারা
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাবিনারা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন বকেয়া বেতনের ইস্যুতে। সাবিনারা সাফ শিরোপা মিশনে মধ্য অক্টোবরে রওনা হয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ও বিগত চার ম্যাচ ফি বকেয়া রেখে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে বকেয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। এএফসি কংগ্রেস থেকে ফিরে গত পরশু বাফুফের নির্বাহী সদস্য ও নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ দৃঢ় কণ্ঠে দাবি করেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ফেডারেশন ফুটবলারদের বেতন দেয় না, ফুটবলাররা ক্লাব থেকে আয় করে। শুধু বাংলাদেশ দেয় কারণ আমাদের প্রেক্ষাপট আলাদা।’ ইউরোপ, আমেরিকা নয় খোদ দক্ষিণ এশিয়ায় খোজ নিয়ে পাওয়া গেল ভিন্ন তথ্য। ফেডারেশন থেকেই নারী ফুটবলারদের বেতন প্রদান করা হয়। নেপাল ফুটবল এসোসিয়েশনের মুখপাত্র সুরেশ সাহা বলেন, ‘আনফার চুক্তিতে থাকা প্রত্যেক নারী ফুটবলার মাসে ৩০ হাজার রুপি সম্মানী পেয়ে থাকে। আনফার নিজস্ব ফান্ড থেকেই নারীদের এই সম্মানী প্রদান করা হয়।’ নেপালে ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রতি ম্যাচেই অনেক দর্শকের আগমন ঘটে। টিকিট বিক্রি থেকে ভালো আয় হয় নেপাল ফুটবল এসোসিয়েশনের। সেই আয় থেকেও নারী ফুটবলাররা লাভবান হন, ‘টিকিট বিক্রির ২০ শতাংশ নারী ফুটবলাররা পেয়ে থাকে। যেমন এবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার রুপি নারী ফুটবলারদের মধ্যে সমবন্টন করা হচ্ছে।’ চলতি বছর আনফা মেয়েদের মাসিক বেতন ১৮ হাজার রুপি থেকে ৩০ হাজার রুপিতে উন্নীত করে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ১৮ হাজার রুপি মাসিক সম্মানী পেয়ে এসেছেন নারী ফুটবলাররা। নেপালের অধিকাংশ ফুটবলার বিভিন্ন সার্ভিস সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ। সেই সংস্থা থেকেও সম্মানী পেয়ে থাকেন তারা। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে এক সময় ছিল ভারতের আধিপত্য। ২০১০-১৯ পর্যন্ত সাফের সকল আসরের চ্যাম্পিয়ন। গত দুই আসরে ফাইনালেই খেলতে পারছে না। ভারতের অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় বালা দেবী নারী ফুটবলারদের সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা মূলত ক্লাব থেকেই আয় করি। ফেডারেশন থেকে মাসিক ভিত্তিতে সম্মানী নেই। জাতীয় দলের ক্যাম্প হলে প্রতিদিন দৈনিক ভাতা রয়েছে আর ম্যাচ খেললে একটি ফি আছে।’ দৈনিক ভাতার পরিমাণ অবশ্য বলতে রাজি হননি এই সিনিয়র ফুটবলার, ‘দৈনিক ভাতার অঙ্ক ফেডারেশনের অনুমতি ছাড়া বলব না তবে এটা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ নেপাল-ভারতের ফুটবলাররা ক্লাব, সার্ভিসেস সংস্থার মাধ্যমে ভালো অঙ্ক আয় করে। পুরুষ ফুটবলাররা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকলেও নারী ফুটবলাররা নেই। ফলে আয়ের একটি খাত থাকে ক্লাব ফুটবল। সেটাও অনিয়মিত এবং বসুন্ধরা কিংস না খেলায় মেয়েরা আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হন না। দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশটির নাম ভুটান। সেই ভুটানেও রয়েছে মাসিক বেতন পদ্ধতি। ভুটানী ফুটবলার সোনম বলেন, ‘২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ফেডারেশনের মাধ্যমে আমরা মাসিক বেতন পেয়ে আসছি। এই অর্থ মূলত সরকার আমাদের দেয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে যারা খেলে শুধু তারা ম্যাচ ফি, বোনাস পেয়ে থাকে।’ জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা ফুটবলারদের কেউ ইনজুরিতে পড়লে চিকিৎসা ব্যয় ফেডারেশনই প্রদান করে, ‘কেউ অসুস্থ হলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ফেডারেশনই সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করে। ঐ সময় অনুশীলন না করলেও মাসিক ভাতা অব্যাহত রাখে’ বলেন সোনম। ২০২২ সালে প্রথম সাফ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন কৃষ্ণা রাণী সরকার। তার জোড়া গোলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই কৃষ্ণা এক বছর ইনজুরিতে ভুগছিলেন। সেই সময় তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে নারী উইংয়ের প্রধান উল্টো কৃষ্ণাকে চাপে রেখে বলেছিলেন আনফিট খেলোয়াড় ক্যাম্পে রেখে সম্মানী দেয়া হচ্ছে। এই মন্তব্যের পর তীব্র সমালোচনার মুখে বাফুফে কৃষ্ণাকে ভারতে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
কোটি টাকা পুরস্কার ও বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ ক্রীড়া উপদেষ্টার ২০১৬ সালে এএফসি অ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের মূল পর্ব নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এর পর থেকেই মূলত দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প শুরু হয়। প্রথম দিকে নারী ফুটবলারদের মাসিক কোনো সম্মানী ছিল না। বছর খানেক পর থেকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ২০ হাজার এবং বাকিরা পেতেন ১০ হাজার করে। ২০২২ সালের সাফ জেতা আগ পর্যন্ত সম্মানীর অঙ্ক এ রকমই ছিল। ২০২৩ সালের আগস্টে বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি করে। সেই চুক্তিতে সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, মারিয়ার মতো সিনিয়র ফুটবলাররা ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। ১৪ জন ৩০ হাজার আর দুই জন ১৫ হাজার টাকা সম্মানী নির্ধারিত হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য প্রাথমিক চুক্তি হয়। সেই চুক্তির পরও মেয়েদের বেতন অনিয়মত থাকে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় ৬ মাসের চুক্তির সময় বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বেতন বিলম্বিত না হওয়ার কথা জানান কারণ ফিফা ফান্ড থেকে প্রদান করা হবে।