বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। প্রতি আসরেই কোনো না কোনো ঝামেলা লেগে থাকে টুর্নামেন্টে। খেলা দেখতে এসে দর্শকও নানা রকম সমস্যায় পড়েন। এবার দর্শকদের জন্য ‘বিশেষ উদ্যোগ’ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিবির বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। গতকাল বুধবার বিসিবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব জানান, এবার পরিবর্তন টের পাবেন দর্শকরা। ‘কয়েকটা ব্যাপারে এবার পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। প্রথমত, খেলা দেখতে যারা আসবেন, তারা যেন একটি ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরত যেতে পারেন। স্টেডিয়ামে ঢোকা থেকে শুরু করে খেলা দেখা এবং বাড়ি ফিরে যাওয়া, সবকিছুতে যেন ভালো অভিজ্ঞতা হয়। কোনো বাবা-মা যেন তার ছেলেমেয়ে নিয়ে মাঠে আসতে পারে, খেলাটা উপভোগ করতে পারে এবং ভালোভাবে ফিরে যেতে পারে, এখানে একটা বড় পরিবর্তনের চেষ্টা আমরা করব।’
দর্শকদের মাঠে প্রবেশের সময় হেনস্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অনেক সময়ই। মাঠের ভেতর পানিসহ খাবারের দাম থাকে অবিশ্বাস্যরকমের বেশি। সেগুলো মান নিয়েও সংশয় থাকে প্রায়ই। এবার দর্শকরা ভিন্ন কিছুর স্বাদ পাবেন, আশ্বাস দিলেন নাজমুল আবেদীন। ‘একজন দর্শক যখন মাঠে আসবেন, তিনি হেনস্তার শিকার হবেন না। মাঠের ভেতর খাবারের দাম যেমন হওয়া উচিত, তেমনই যেন হয়। ওয়াশরুম সুবিধা যেন ভালো হয়। পানি খাওয়ার যেন যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকে। এমনও হতে পারে, পানির জন্য কোনো পয়সাই দিতে হবে না। এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো এবার থাকব। একজন যেন এটাকে নিজের মনে করতে পারে, তারা যেন মনে করতে পারে, এটা তাদের মাঠ, খেলা উপভোগ করবে পরিবার নিয়ে এবং পরের দিন আসার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকবে। এটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে মনে করব আমরা সফল। যদি না করতে পারি, তাহলে আমরা ব্যর্থ।’ এবারের বিপিএল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তরিক আগ্রহের কথা আগেই বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। এবার বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব জানালেন, বিপিএলকে সমাজের নানা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ‘আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটাও বলতে হবে। ক্রীড়ার সঙ্গে উনার সাম্প্রতিক যে সম্পর্ক, বিশেষ করে অলিম্পিক দিয়ে, সেই জিনিসটাকেই তিনি বিপিএলে নিয়ে আসতে চেয়েছেন। এবারের বিপিএলকে শুধু সামাজিকভাবে না দেখে, এটাকে সামাজিকভাবে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সমাজের বিভিন্ন জায়গায়, সেটা সাংস্কৃতিক হোক বা ব্যবসায়ের জায়গায়, বা যে কোনো জায়গায় কীভাবে ব্যবহার করা যায়। কারণ, এই মুহূর্তে এটা বোধহয় একমাত্র উপলক্ষ, যেটি নিয়ে সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে যে, বিপিএল কেমন হবে। সমালোচনা যে প্রচুর হয় না, তা নয়। তবে আগ্রহটা এখানে থাকে। এই আগ্রহকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি সমাজের বিভিন্ন জায়গায়, সেই চেষ্টা থাকবে।’
বিপিএলকে শুধু খেলায় সীমাবদ্ধ না রেখে বা স্টেডিয়াম এলাকার মধ্যে না রেখে দেশজুড়ে উৎসবের উপলক্ষ করে তুলতে চায় বিসিবি। ‘উনার (প্রধান উপদেষ্টা) ধারণা, বিপিএল এমন কিছু, যা সবাই পছন্দ করে। তো এই শক্তিটাই ব্যবহার করতে চান তিনি যে, এটার দিকে সবাই তাকাবে, এখান থেকে শিখবে এবং সবাই সম্পৃক্ত হবে। এখানে অধিকারের ব্যাপারটা আসবে। প্রত্যেকে মনে করবে, এটা তাদের এবং এখানে তারা ভূমিকা রাখবে। কেউ একটা সুভেনির শপ করল, কেউ মেলা করল, এরকম নানা আয়োজন হতে পারে, সব হবে বিপিএলকে মাথায় রেখে। এরকম অনেক বড় বড় ব্যাপার দেখতে পারব আমরা এবারের বিপিএলে। অনেকে হয়তো ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে আসবেন।’ সেই লক্ষ্য পূরণে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালায় ও অনেক সংগঠন মিলে একসঙ্গে কাজ করা হবে, জানালেন নাজমুল আবেদীন। ‘আমাদের তরুণ সমাজের যে শক্তি, যে চিন্তা, যে চেহারাৃ তাদেরকে আরও কীভাবে দিক নিদের্শনা দেওয়া যায় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে কীভাবে সামনে আনা যায় এবং সারা দেশে ও বিদেশে কীভাবে তুলে ধরা যায়, এই চেষ্টা থাকবে। বিপিএলে এবার তাই খেলার পাশাপাশি আরও অনেক অনুষ্ঠান থাকবে। সারা দেশেই হবে। ৯টি মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত থাকবে এবার। অনেক সংগঠন সম্পৃক্ত থাকবে। আগের যে কোনো বিপিএল থেকে এবার আলাদা হবে। এসবকে রূপ দেয়াটা সহজ হবে না, আমরা জানি। তবে আমরা চেষ্টা করছি।’ ২৭ ডিসেম্বর থেকে বিপিএল শুরুর কথা আগে বলা হলেও এখন বিসিবির লক্ষ্য ৩০ ডিসেম্বর থেকে আসর শুরু করা।