সাকিব-তামিমদের পরের প্রজন্মের খোঁজে সালাউদ্দিন
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। তখনই ক্রিকেটে হাতেঘরি হয় তার। নব্বই দশকের শেষ দিকে খেলোয়াড়ি জীবনেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তারপর থেকে প্রায় দুই দশক ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন দলকে কোচিং করিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএলে তার অধিনে সর্বাধিকবার চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ঘরোয়া ক্রিকেটে চমকপ্রদ সাফল্যের কল্যাণে ২০০৬ সালে তাকে যুক্ত করা হয় জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে। ২০১০ সালে জাতীয় দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর বছর খানেক বিসিবির কোচ হিসেবে কাজ করেছেন একাডেমিতে। বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল জাতীয় দলের কোচ হচ্ছেন সালাউদ্দিন। অবশেষে গেল সপ্তাহে এসেছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। ১৪ বছর পর ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল ও আলোচিত এই কোচকে সম্প্রতি জাতীয় দলর সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন তিনি।
দেশের ক্রিকেটের একটি প্রজন্মকে পোক্ত করে তোলায় ৫১ বছরের এই কোচের ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। যখন তিনি ছিলেন জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে, তখন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, এমনকি মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো তখনকার তরুণ ক্রিকেটাররা পেয়েছেন তার নিবিড় সাহচর্য। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও নিজের নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
পিছিয়ে নেই তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। বিদেশি লিগে খুব বেশি না খেললেও জাতীয় দলের জার্সিতে তাদের বর্ণিল ক্যারিয়ার। এই ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু তাদের পথ ধরে পরবর্তী প্রজন্ম দেশের ক্রিকেটকে আরো ওপরে নিতে পারেননি বলে মনে করেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচের আসনে বসা সালাউদ্দিন এই জায়গায় উন্নতি চাইছেন। তিনি সাকিব-তামিমদের ছাড়িয়ে যাওয়া প্রজন্মের খোঁজে। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আগেও যখন পাঁচ বছর কাজ করেছি, তখন একটা প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছি। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, মাশরাফিরা ছিল। ওই প্রজন্ম দেশকে অনেক কিছু দিয়েছে। একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এখন পরবর্তী প্রজন্মকেও যদি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করতে পারি, সেটা দেশের জন্য ভালো হবে, সেই খেলোয়াড়ের জন্য ভালো হবে।’ এমন খেলোয়াড় বাংলাদেশে আছে বলে বিশ্বাস সালাউদ্দিনের। এইচপি দল ও একাডেমিতে কাজ করেছেন তিনি।
তা ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত কোচের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তার বিশ্বাস, সাকিব-তামিমদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো প্রজন্ম তৈরি হবে বাংলাদেশে। সালাউদ্দিনের বক্তব্য, ‘আমরা যারা বলি- সাকিব, তামিম, মুশফিকরা একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে; ওটা যদি না ভাঙতে পারি, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট এগোয়নি। পরবর্তী প্রজন্ম যেন তাদের চেয়ে ভালো খেলোয়াড় হতে পারে, বড় হতে পারে। সেটা অসম্ভবও নয়। এখন খেলোয়াড়েরা মেন্টালি, ফিজিক্যালি ও আর্থিক দিক থেকে অনেক স্বাবলম্বী। যেটা হয়তো আগে ছিল না। এখন ভালো করার সুযোগ বেশি।’ সেটি করতে গেলে চিন্তা ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করছেন সালাউদ্দিন, ‘এইচপি বা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়দের লক্ষ্য জিজ্ঞেস করলে বলবে- জাতীয় দলে খেলতে চাই। স্বপ্নটা কিন্তু ওখানেই থেমে গেল। জাতীয় দলে খেললে এরপর কীভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে সেটা তারা জানে না। যারা এতদিন খেলছে তাদের আসলে কী ধরনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, মেন্টালিটি হওয়া উচিত, কীভাবে আরো বড় খেলোয়াড় হওয়ার জন্য নিজেকে মোটিভেট করা উচিত- এই ছোট ছোট কাজগুলো করতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘এই ছোট কাজগুলো যদি করা যায়, বিশেষ করে ড্রেসিং রুম ও ড্রেসিং রুমের বাইরে কীভাবে চিন্তা করবে; সেই চিন্তার জায়গাটা যদি আরো পরিষ্কার করে ধারণা দেয়া যায়, তাদের আরো ভালো ভবিষ্যৎ সামনে আছে।’
গত অগাস্টে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর ফারুক আহমেদ শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, দেশের কোচদের গুরুত্ব দিতে চান তারা এবং জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে নিয়োগ দিতে চান। সেটির ধারাবাহিকতায় এলো সালাউদ্দিনের এই নিয়োগ। এই কোচ বললেন, তার ফিরে আসার পেছনে বোর্ড প্রধানের ভূমিকা ছিল বড়। ‘বেশ কিছুদিন ধরেই আসলে কথা হচ্ছিল। আমার এই কাজটা করার পেছনে ফারুক ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি।
তিনি আমাকে অনেকবার ডেকেছেন, কথা বলেছেন, বুঝিয়েছেন যেন, কেন আমাদের স্থানীয় কোচদের দরকার বাংলাদেশ দলে।’ জাতীয় দলের নতুন সহকারী কোচ বলেন, ‘আমারও যে ইচ্ছে ছিল না, তা নয়।
তবে অনেক কারণেই আসতে পারছিলাম না। আমার মনে হয়েছে, এখনই হয়তো সেরা সময়, যেটা দিয়ে বাংলাদেশকে আবারো হয়তো সার্ভিস দিতে পারব। আমার ইচ্ছে আছে, এত বছরের যে কোচিং অভিজ্ঞতা, এটা যেন আরো বড় পরিসরে কাজে লাগাতে পারি। দেশের যদি কিছুটা উপকারও হয়, কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে দিকে আমার নিজেরও হয়তো তা ভালো লাগবে।’