তার চিন্তা এবং চেতনায় ছিল শুধুই দাবা। দাবা খেলাটাই ছিল তার জীবন। যে দাবাকে ধ্যান-জ্ঞান করেছিলেন, সেই দাবা খেলতে খেলতেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। চলতি শতকে বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া গত ৫ জুলাই দাবা খেলতে খেলতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি, তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জিয়া। তার বয়স ছিল মোটে ৫২। তার অকস্মাৎ মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেননি। তার পরিবার এর মাসুল দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য ও ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়া তাকে হারিয়ে পড়েছেন অকূল পাথারে। জিয়ার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার পরিবারকে। তবে সেটা এখনও হয়নি। নিখাদ দাবার মানুষ ছিলেন জিয়া। তার বাইরে আর্থিক সচ্ছলতার দিকে নজর দেননি। তার মৃত্যুর পর তাই বিপাকে পড়েছে তার পরিবার।
প্রয়াত দাবাড়ু জিয়ার পরিবারের সংকটের খবর গণমাধ?্যমে উঠে আসে। যা নজর এড়ায়নি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের। নিজে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে জিয়া পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী ও সন্তানকে ডেকে নেন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। জিয়ার পরিবারের হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন তামিম। জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য ও ছেলে ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া তামিমের কাছ থেকে এই চেক গ্রহণ করেছেন। তামিমের এই সম্মানে অভিভূত জিয়ার স্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উনি (তামিম) আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি তো আসলে বাংলাদেশে ক্রিকেট জগতের ভালো একজন খেলোয়াড়। আমার ছেলের ব্যাপারে কথা বলেছেন। জিয়াকে সম্মান করেছেন। আমার ছেলের জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন।’ বাবার স্বপ্নপূরণ করতে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চান তাজওয়ার জিয়া। এজন্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জিয়ার ছোট্ট ফ্ল্যাট ছাড়া আর কিছুই নেই। অনেকে সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থিক সহায়তার কথা থাকলেও কেউই সেভাবে এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালই এগিয়ে আসলেন। ক্রীড়াবিদ, সংগঠক কিংবা সাংবাদিক কারও বিপদ হলেই তামিম এগিয়ে আসেন। এবারও এর ব্যতয় ঘটেনি। এদিন মিরপুরের ইনডোরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাদের। জিয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বড় দাবাড়ু বানাবেন। সেই স্বপ্নপূরণ করতে সম্মিলতি সাহায্য প্রয়োজন বলে মনে করেন জিয়ার স্ত্রী, ‘আপনাদের কাছে আমি সবসময় বলেছি আমার ছেলেকে নিয়ে সামনে আগানো দরকার। এটার জন্য সম্মিলিত সাহায্য দরকার। সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমার মনে হয় সবকিছু ভালো হবে। ’
মারা যাওয়ার পর এখনও জিয়ার পরিবারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। আক্ষেপ করে স্ত্রী তাসমিন বলেছেন, ‘এখনও পায়নি। কারণ ও তো দেশের জন্য সবকিছু করেছে। দেশের জন্য সব খেলা খেলেছে। দেশের বাইরে প্রতিনিধিত্ব করেছে। সেই হিসেবে জিয়া এখনও কিছু পায়নি। তবে সম্মান পেলো না বললে ভুল হবে। সম্মান অবশ্যই পাবে। এখন পরিস্থিতির জন্য দেরি হচ্ছে। আমি আশা করব, যে ভবিষ্যতেও সম্মান পাবে অন্যরা।’ দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তামিমের সাথে আলাপ করতে পেরে দারুণ খুশি জিয়ার সন্তান তাজওয়ার। তার কাছে তামিমের পরামর্শ অনেক বেশি অনুপ্রেরণার, ‘উনিতো অনেক বড় একজন ক্রিকেটার বাংলাদেশের। উনার সঙ্গে দেখা করতে পেরে ভালো লাগছে। উনি অনেক পরামর্শ দিয়েছেন জীবনের ব্যাপারে। এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল। উনি বলেছেন, দাবার সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে।’
জিয়ার স্ত্রী লাবণ্য, ‘তামিম আমাদের বলেছেন যেকোনো সমস্যায় যেন উনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আমার ছেলেকে পড়াশোনা ও খেলাধুলায় মনোযোগ দিতে বলেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তার ছেলে তাহসিনকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যাতে সেও একদিন বাবার মতো গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারে। ‘সিইও সুজন (প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী) আমাকে একটা আবেদন করতে বলেছেন। বিসিবি তাহসিনের পরের টুর্নামেন্টে সহযোগিতা করতে চায়। সুজন ভাই বলেছেন, সভাপতি বরাবর আবেদন করতে প্রক্রিয়ার জন্য।’