জাকারিয়া পিন্টুর শোকে কাঁদছে ক্রীড়াঙ্গন

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ফুটবলের কিংবদন্তি জাকারিয়া পিন্টু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন ও তহবিল সংগ্রহে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রদর্শনি ফুটবল ম্যাচ খেলেছিলেন। সেই ম্যাচ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরেও জাতীয় দলের হাল ধরেন পিন্টু। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ফুটবল সংগঠক হিসেবে তিনি জড়িত ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে। দেশের ফুটবল ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম এই নায়ক গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। জাতীয় ও স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া কিংবদন্তি ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াঙ্গনে।

জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুর খবরে ভীষণ ব্যথিত কাজী মো. সালাউদ্দিনও। এই কিংবন্তি ফুটবলার মাঠে ছিলেন জাকারিয়া পিন্টুর সহযোদ্ধা। বাফুফের সদ্য সাবেক হওয়া সভাপতি বলেন, ‘জাকারিয়া পিন্টু ভাই গ্রেট ফুটবলার ছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রীতি ম্যাচ খেলেছি। তিনি আমাদের মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক হয়েছেন। লাল-সবুজ জার্সিতে তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার জন্য আমরা যারা ফুটবল পায়ে যুদ্ধ করেছি, সেই রণাঙ্গনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।’ কাজী সালাউদ্দিন আরও বলেছেন, ‘আমার দেখা দেশের সেরা ডিফেন্ডার ছিলেন পিন্টু ভাই। ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।

এক সাথে খেলার কারণে পিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে রয়েছে আমার অনেক স্মৃতি। তিনি আমার চেয়ে ১০-১১ বছর বড় ছিলেন।’ পিন্টুর সতীর্থ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই খেলোয়াড়েরও বয়স ৮০ পেরিয়েছে। সতীর্থ হারানোর বেদনায় মুহ্যমান প্রতাপের কণ্ঠে ফুটে উঠল নিয়তির কাছে মানুষের অসহায়ত্ব। ‘একে একে সবাই চলে যাচ্ছে আর আমি তাদের নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলছি। কত স্মৃতি আওড়াচ্ছি। এবার পিন্টু ভাই চলে গেলেন। তাকে নিয়েও আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু আমি যখন চলে যাব, তখন কথা বলবে কে? বলুন?’ এই প্রশ্নের উত্তর যে হয় না, দেয়া যায় না, প্রতাপ জানেন, কিন্তু শোকস্তব্ধ হৃদয় যে জানা অনেক কিছুই মানতে পারে না। ৮১ বছর বয়সি এই বীর মুক্তিযোদ্ধাও পারছেন না মানতে। স্মৃতি আওড়াতে থাকেন নিজের মতো করে। ‘সেসব দিনের কত কথা মনে পড়ছে। পিন্টু ভাইয়ের সাথে একসাথে খেলেছি। দেশের জন্য খেলেছি। যদিও ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য মনে করি, যারা জীবন বাজি রেখে কোনো ট্রেনিং ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তারাই প্রকৃত বীর।

তবে আমরাও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছি, এর বেশি আর কীই-বা চাইতে পারি। সর্বোচ্চ সম্মানই তো পেয়েছি আমরা।’ কিংবদন্তি এ ফুটবলারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, ক্রীড়া উপদেষ্টা, বাফুফে, বিওএ, মোহামেডান, বিএসপিএ সহ অন্য সংগঠনও।

জাকারিয়া পিন্টু শুধু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নয়, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও প্রথম অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিংকে। ১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি ফুটবল শুরু করেছিলেন পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন মোহামেডানে। সেই ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ডাগআউট সামলেছেন জাতীয় দলেরও। জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে শোকাহত জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ও সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন নাহার ডানা। তিনি বলেন, ‘পিন্টু ভাইয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে আজ আমি তাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। এ জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। উনি হাসপাতালের কত নম্বর বেডে আছেন সেটা জানতে মোহামেডান ক্লাবে ফোন করি। কিন্তু ক্লাব থেকে জানানো হলো কিছুক্ষণ আগে তিনি মারা গেছেন।’