জাতীয় ক্রিকেট লিগের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডের লজ্জায় পড়লো রাজশাহী বিভাগ। ওদিকে দলটিকে লজ্জায় ফেলে গৌরবের রেকর্ড গড়লেন সুমন খান। উইন্ডিজে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের পরদিন সকালে দেশের ক্রিকেটে বড় খবর উপহার দিলো বগুড়ার শহিদ চান্দু স্টেডিয়াম। টানা দুই বলে উইকেট শিকার করা সুমন খানের হ্যাটট্রিক থামানোর চেষ্টায় নামলেন আসাদুজ্জামান। কিন্তু হাতে যে ব্যাট আছে, সেটিই বুঝি ভুলে গেলেন তিনি। মিডল স্টাম্পে পিচ করে সোজা যাওয়া ডেলিভারি না খেলে ছেড়ে দিলেন রাজশাহীর শেষ ব্যাটসম্যান। বল প্যাডে লাগতেই জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। হ্যাটট্রিকের আনন্দে তখন যেন বাঁধনহারা সুমন। ডানা মেলে দিয়ে লাফিয়ে ছুটতে থাকলেন তিনি। তার নাগাল আর পায় কে! দারুণ দুটি ডেলিভারিতে সানজামুল ইসলাম ও মোহর শেখকে আউট করে হ্যাটট্রিকের দুয়ারে পৌঁছে যান সুমন। পরে আসাদুজ্জামানকে এলবিডব্লিউ করে ৩৯ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিকের স্বাদ পান ২৪ বছর বয়সী পেসার। বোলিং তোপে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে মাত্র ৪২ রানে গুটিয়ে গেছে রাজশাহী বিভাগ। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটিই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। গত মৌসুমের জাতীয় লিগে খুলনার বিপক্ষে বরিশালের ৪৬ রান এত দিন ছিল সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এ ছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় লিগের ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে ৪৮ রানে অলআউট হয়েছিল ঢাকা মেট্রো। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই অলআউট হয়ে যায় রাজশাহী। সুমনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে মাত্র ২০.৫ ওভার খেলতে পেরেছে তারা।
সব মিলিয়ে ৭.৫ ওভারে ১৮ রানে ৭ উইকেট শিকার করেন সুমন। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা বোলিং। গত রাউন্ডে খুলনার বিপক্ষে ৫০ রানে ৬ উইকেট ছিল আগের সেরা। এ নিয়ে ছয়বার ইনিংসে ৫ বা এর বেশি উইকেট নিলেন তিনি। সুমনের হ্যাটট্রিকে সমাপ্তি ঘটে রাজশাহীর ইনিংসের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া বাংলদেশের ১৫তম বোলার তিনি। আগের ১৪ জনের মধ্যে ইলিয়াস সানি ও সোহাগ গাজীর আছে দুটি করে হ্যাটট্রিক। রৌদ্রজ্জ্বল সকালে প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত করেন সুমন। দ্বিতীয় বলে আলতো ড্রাইভে শর্ট মিড অফে ক্যাচ দেন তানজিদ হাসান। এক বল পর চমৎকার আউটসুইংয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রহমতউল্লাহ আলি। এরপর নবম ওভারে আবার দুই উইকেট নেন এই পেসার। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি দূর থেকে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন সাব্বির হোসেন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন আশিকুর রহমান। এক বল পর আরেকটি চমৎকার আউটসুইংয়ে প্রিতম কুমারকে বিদায় করেন সুমন। সাত ওভারের প্রথম স্পেলে আর সাফল্য পাননি তিনি। ২১তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে তৃতীয় বলে সানজামুলকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন সুমন। পরের দুই বলে আরো দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি রাজশাহীর ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান তিনি। রাজশাহীর পক্ষে সর্বোচ্চ ১৮ রান করেন এসএম মেহেরব হোসেন। এ ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন শুধু সাব্বির (১০)। সুমনের বলে ৫টিসহ মোট ৬টি ক্যাচ নেন আশিকুর। অল্পের জন্য ইনিংসে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড ছুঁতে পারেননি তিনি। ২০০৪-০৫ মৌসুমের জাতীয় লিগে বরিশালের হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষে ৭টি ক্যাচ নিয়েছিলেন শাহিন হোসেন।