দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের দ্বিতীয় মর্যাদার টুর্নামেন্ট সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ। প্রথম আসরের মতো এবারও আয়োজক বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) এরই মধ্যে টুর্নামেন্টের তারিখ নির্ধারণ করেছে ১১ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি। আয়োজক হলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এখনো জানে না তারা খেলা কোন মাঠে আয়োজন করতে পারবে। বাফুফের বড় করে চাওয়া এই টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হোক। যদিও ওই সময়ের আগে দেশের প্রধান এই ফুটবল ভেন্যু টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য তৈরি হবে কি না তা নিয়ে আছে নানা অনিশ্চয়তা। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেডিয়াম প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই সময় স্টেডিয়াম প্রস্তুত হয়তো হবে। তবে পাওয়া যাবে না ফ্লাডলাইট।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও প্রকল্প পরিচালকরা দুই দিন আগে স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে তেমন আভাস দিয়েছেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ফ্লাডলাইট স্থাপনের কাজ শুরু হতে পারে। স্টেডিয়ামে আলোর ঝলকানি আনতে সময় লাগতে পারে মাস দুয়েক। সে হিসেবে সাফ শুরুর আগে ফ্লাডলাইট পাওয়া যাবে না সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যদি জরুরী ভিত্তিতে ফ্লাডলাইড স্থাপন করতে পারে সেটা ভিন্ন কথা। না হলে সিনিয়র নারী সাফের মতো অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের আয়োজক হওয়ার সুযোগও হারাতে পারে বাংলাদেশ। কারণ, ফ্লাড লাইট না থাকলে সাফ এই স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে না। বাফুফেও কোনো বিকল্প ভেন্যুর কথা বলেনি দক্ষিণ এশিয়ার এই সংগঠনটিকে।
এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারী উইংয়ের চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেছেন, ‘আমরা যখন স্বাগতিক হওয়ার ফরমে স্বাক্ষর করি তার আগেই বাফুফে থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। তখন এনএসসি থেকে জানানো হয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠ তৈরি হবে। তবে ফ্লাডলাইট ছাড়া। সাফে প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচ হবে। চাই ফ্লাডলাইট ছাড়া সাফ খেলা যাবে না। আমরা এখনো জানি না ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাডলাইট হবে কিনা। হলে ওখানেই খেলবো, নাহলে সাফই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে।
এটা আমাদের হাতে নেই। আমরা সাফের সঙ্গে কথা বলেছিলাম বঙ্গবন্ধুতে খেলবো বলে। আমি জানি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ খুবই ইতিবাচক, যাতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারি। দেখা যাক কি হয়।’
এর আগে মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ওই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত না হলে বিকল্প হিসেবে তিনি কক্সবাজারের কথা ভাবছেন। তিনি এটাও বলেছিলেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সাফ।
বিকল্প ভেন্যুর চিন্তার তিনি মাথা থেকে একদম ফেলে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা কোনো বিকল্প ভাবলে হবে না। পুরো ভাবনা সাফের। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে না হলে তারা বাংলাদেশে সাফ করবে নাকি ভেন্যু পরিবর্তন করবে সেটা তাদের ব্যাপার। কারণ, এটা ফুটবল ফেডারেশনের টুর্নামেন্ট না।’
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট স্থাপন না হয় এবং সাফ যদি বিকল্প ভেন্যুর নাম চায় তখনে কোন স্টেডিয়ামকে প্রধান্য দেবে বাফুফে? ‘আমি এটা নিয়ে এখনো ভাবছি না। আমি এখনো আশাবাদী যে, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামই আমরা পাবো। যে কারণে, এখনই বিকল্প চিন্তা করছি না। আমরা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই মেয়েদের এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চাচ্ছি এবং বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নিয়েই কাজ করছি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে না হলে সাফ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে’ বলেছেন, মাহফুজা আক্তার কিরণ। ভেন্যু যেখানেই হোক শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ প্রস্তুতি শুরু করতে যাচ্ছে। ছুটিতে থাকা মেয়েদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-২০ দলে ডাক পাওয়ারা ক্যাম্পে ফিরবেন নভেম্বরের শেষ দিনে। ১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জন নিয়ে শুরু হবে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি। প্রস্তুতি শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৯ নভেম্বর। মেয়েদের আবাসনের কক্ষগুলোতে সংস্কার কাজ চলছে। যে কারণে, তাদের ক্যাম্প শুরু হচ্ছে দুই দিন পর।
এই টুর্নামেন্টে প্রধান কোচ থাকবেন সাফজয়ী ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার। ‘আজও (সোমবার) কোচের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। কোচ ছুটিতে যাচ্ছেন ৪ ডিসেম্বর। ফিরবেন মাসের শেষে দিকে। তার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে মূলত মেয়েদের ট্রেনিং প্লান নিয়ে। তিনি যখন ছুটিতে থাকবেন তখন ট্রেনিং সিডিউলটা কেমন হবে তা জানতে চেয়েছিলাম। তার অনুপস্থিতিতে স্থানীয় যে কোচিং স্টাফ আছেন তারা অনুশীলন দেখভাল করবেন, ঠিক পিটার যেভাবে পরিকল্পনা করে দিয়ে যাবেন সেভাবে। কোচ যাওয়ার আগে তার চার সহকারীকে নিয়ে বসে প্লানিংটা বুঝিয়ে দেবেন। তখন আমিও থাকব।’