ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উড়লো রঙিন কনফেত্তি। টিভি ক্যামেরার আগ্রহজুড়েও থাকলো এই অনুষ্ঠান। মেয়েদের ক্রিকেটে স্পন্সর খুব একটা দেখা যায় না। তবে এবার বেশ ঘটা করেই পৃষ্ঠপোষক পাওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও ছিল সংবাদ কর্মীদের ভিড়। এক সময় নিয়মিত ম্যাচ খেলা নিয়ে প্রতিনিয়তই আফসোস ছিল নারী ক্রিকেটারদের কণ্ঠে। এখন তারা সেটিও খেলছেন। তবুও দল ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে না। এদিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আজ সকালে মাঠে নামবে বাংলাদেশের মেয়েরা। তিন ম্যাচের ওয়ানডের সবগুলোই হবে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরিজে আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে বাংলাদেশ। তবে এসব সমীকরণ নিয়ে ভাবতে চান না অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। এ ছাড়াও এই সিরিজে নিজেদেরকেই ফেভারিট মনে করছে তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জ্যোতি বলেন, বিশ্বকাপের চিন্তা তো অনেক পরে! এখন আমাদের ম্যাচ বাই ম্যাচ মনোযোগ দেয়া উচিত। আমাদের হাতে এটাসহ দুইটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আছে। পয়েন্ট নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজ ধরে যদি চিন্তা করি, সেটা ভালো হবে। তাই এই পয়েন্টগুলো নেয়ার দিকে মনোযোগ থাকবে বেশি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও খেলবে তিন ম্যাচ। এই ছয় ম্যাচেই নির্ধারিত হবে চ্যাম্পিয়নশিপে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে কি না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। আমরা যদি এখান থেকে ভালো একটা সিরিজ শেষ করতে পারি, দল হিসেবে অবশ্যই পরের সিরিজে আমাদের মানসিকভাবে এগিয়ে রাখবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শুরু করাটা। যদি ভালো একটা শুরু পাই, সেটা ধরে রাখতে পারলে এই দলটি ভালো করতে পারবে। নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ছয় ম্যাচে তিনটিতে জয় পেয়েছে আয়ারল্যান্ড। তবে পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের সঙ্গে ছয় ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জয় পেয়েছে তারা। তাই নিজেদের কন্ডিশনে তাই আইরিশ মেয়েদের বিপক্ষে খুব বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন না জ্যোতি। টাইগ্রেস অধিনায়ক বলেন, আয়ারল্যান্ড যেসব ম্যাচ জিতেছে, সবগুলো ঘরের মাঠের কন্ডিশনে জিতেছে। এই কন্ডিশনে ওদের তেমন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। জেতার হার অনেক বেশি কম। ওদের সঙ্গে যতবার খেলেছি, আমাদের জয়ের হার অনেক বেশি। যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা, যে কেউ নিজের ঘরের মাঠের কন্ডিশনে বেশিই শক্তিশালী হয়। সাম্প্রতিক সময়ের সিরিজগুলো যদি দেখেন, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আমরা ভালোই খেলেছি। তাদের রেকর্ডটা কিন্তু তাদের মাঠেই। তিনি আরো বলেন, প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
যেহেতু আমাদের ৬ পয়েন্ট নিতে হবে, খুব গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটা। প্রতিটা ম্যাচ মূল্যবান। আমরা চেষ্টা করবো দাপট দেখিয়ে খেলতে। আয়ারল্যান্ড আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে নিচে। যদি আমরা তাদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে খেলতে না পারি, তাহলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করব। গত বছর ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে ভালো করায় প্রত্যাশা বেড়েছিল। কিন্তু পরে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি দল। এ নিয়ে জানতে চাইলে নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেন, ‘সবকিছু (মানুষের আগ্রহ, প্রত্যাশা, স্পন্সর আসা) কিন্তু আমরাই তৈরি করেছি। প্রশ্ন করছেন আগে ভালো ছিল বা এমন-অমন ছিল, এটা আমরাই তৈরি করেছি। তো এটা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। আমি বলব, বিশ্বাস রাখেন। কারণ দল কষ্ট করছে।’
‘অনেক সময় পারফরম্যান্সগুলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ফল না হলে তখন নেতিবাচক বিষয়গুলো বেশি আসে। এই সিরিজটা বলব, আমাদের দলের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা। যেই জিনিসটা আমরা তৈরি করেছি, ইনশাআল্লাহ্? এই সিরিজেই হতে পারে... আমাদের কাছে অনেক সুযোগ আছে। ভারত-পাকিস্তান সিরিজে যেটা আমরা করেছি, যেন আরো অনেক বেশি মানুষ আগ্রহ দেখায় এবং মিডিয়াও যেন আরো বেশি ফোকাস করে।’ বাংলাদেশে এসে কিছুটা নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে আয়ারল্যান্ড নারী দলের ক্রিকেটারদেরও। তাদের ঘণ্টা তিনেকের অনুশীলন পর্বের পুরোটাতেই অনেকগুলো ক্যামেরার চোখ থাকে। সংবাদ সম্মেলনে, ট্রফি উন্মোচনেও ক্যামেরার উপস্থিতিতে অভিভূত আইরিশ অধিনায়ক গ্যাবি লুইস। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা দুর্দান্ত। আমার অভিজ্ঞতায় আমি এত ক্যামেরা দেখিনি। হয়তো লরা (ডেলেনি) দেখেছে। তবে হ্যাঁ, এটো দারুণ। ট্রফি উন্মোচনেও নারী ক্রিকেটারদের ঘিরে এত মিডিয়া দেখতে পারা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার। আমরা এখানে খুব ভালো আথিতেয়তা পাচ্ছি। ঢাকায় দারুণ সময় কাটছে।