বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের খেলা ফুটবল। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র ফুটবল নিয়ে মাতামাতি হয়। সব বয়সী মানুষের খেলাটির প্রতি প্রচণ্ড ভালবাসা রয়েছে। আন্তুর্জাতিক অঙ্গণে লাল সবুজের ফুটবলে সাফল্য না থাকলেও দেশের তরুণদের ভাবনা থেকে সরেনি খেলাটি। কিভাবে ফুটবলের উন্নয়ন করা যায় সেটি নিয়ে ভাবে তারা। তাদেরই একজন অমর্ত্য দাস দীপ। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্নাতক করা এ তরুণ ফুটবল নিয়ে পড়তে এখন ইংল্যান্ডে। সেখানে মিডেলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পোর্টস পারফরম্যান্স অ্যানালাইসিসে মাস্টার্স করছেন প্রকৌশলী দ্বীপ। পাশাপাশি ইংল্যান্ডের নিচের স্তরের এরিথ টাউন ফুটবল ক্লাবে পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য বলেন, ‘খেলাধূলা বিশেষত ফুটবল খুব ভালো লাগে এ জন্য এই বিষয়ে পড়তে এসেছি। পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট তথ্য-বিজ্ঞান নির্ভর কাজ। প্রকৌশল ব্যাকগ্র্যাউন্ড থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সমস্যা হয়নি। আংশিক স্কলারশিপও পেয়েছি।’ প্রকৌশল ও মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত সন্তানদের নিয়ে পরিবারের অনেক বড় স্বপ্ন থাকে। অমর্ত্যরে উপরও তার বাবা-মায়ের ছিল এ রকম ভাবনা। তিনি প্রথাগত দিকে না গিয়ে ভিন্ন পথের পথিক হয়েছেন। পরিবারকে শুরুর দিকে বোঝানো বেশ কঠিনই ছিল, ‘আমার বাবা ব্যাংকার। আমি বড় সন্তান আর ছোট বোন। স্বাভাবিকভাবেই আমার পছন্দ ও চ্যালেঞ্জে পরিবার একটু উদ্বিগ্নই ছিল। কোভিডের সময় লক্ষ্য নির্ধারণ করি স্পোর্টস পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট হব। ২০২২-২৩ সালে প্রিমিয়ার লিগে একটি ক্লাবে কাজ করার পর পরিবার আস্থা পায়।’ ২০২৩ সালে রুয়েট থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এই বছর সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে কয়েকমাস কাজ করেছেন ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে। এর এক মৌসুম আগে ছিলেন আজমপুর উত্তরার। দুই ক্লাবে কাজ করে তার অভিজ্ঞতা, ‘অ্যানালিস্টের কাজ মূলত কোচের সঙ্গে। বাংলাদেশে অ্যানালিস্ট নিয়ে কাজ করার মতো কোচের সংখ্যা কমই।’ শেখ জামাল, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন বুয়েট থেকে পাশ করা নাসিফ ইসলাম। তিনি আমেরিকা থেকে ক্রীড়া সম্পর্কিত বিষয়ে মাস্টার্স করেছিলেন। সরাসরি স্পোর্টস অ্যানালিস্টের উপর বিদেশি উচ্চশিক্ষা নেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে সেভাবে নেই। তাই অমর্ত্যরে পরিকল্পনাও একটু ভিন্ন, ‘এখানে সব কিছু বাস্তবিক প্রয়োগ শিখছি। মডার্ন স্পোর্টস ফিল্ডে যেসব হাই এন্ড টেকনোলজিগুলা ইউজ হয় আমাদের কোর্সে ওগুলাই ফলো করা হচ্ছে। আমার বিষয় পারফরম্যান্স এনালিস্ট ফলে অ্যাথলেটিক্স, ফুটবল আরো কয়েকটি খেলায় কাজ করার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমার ঝোঁক ফুটবলেই। মাস্টার্সের পর চেষ্টা করব ইংল্যান্ড কিংবা ইউরোপে কোনো ক্লাবে স্থায়ীভাবে কাজ করার। পুরোপুরি পরিণত হওয়ার পর দেশের ফুটবলে ফিরতে চাই।’
ফুটবলাঙ্গনে অ্যানালিস্ট হিসেবে এখন অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত নাসিফ। অমর্ত্যরে মধ্যেও সম্ভাবনা দেখছেন তিনি, ‘ফুটবল নিয়ে তার অনেক আগ্রহ। বিশ্লেষণ করতে অনেক পছন্দ করে। উচ্চ শিক্ষা তাকে আরো পরিণত করবে। পারফরম্যান্স এনালিস্ট প্রকৌশলের সঙ্গে অনেকটা সম্পর্কিত। আশা করি সামনে আরো অনেক প্রকৌশলী ক্রীড়াঙ্গনে আসবে।’ সাবেক উইকেটরক্ষক ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ নাসির আহমেদ নাসুর দৃষ্টিতে ক্রীড়াঙ্গনে এখন অ্যানালিস্ট পেশা হিসেবে নেয়ার মতো অবস্থায়। বিসিবির হেড অফ অ্যানালিস্ট বলেন, ‘আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনে যে কোনো খেলায় অ্যানালিস্টের বিকল্প নেই। কোচ ও অ্যানালিস্ট একে অন্যের পরিপূরক। এখন বিসিবিতে আটজন অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছে। ফুটবলেও ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এক সময় আমি একাই কাজ করেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা হলে রাত জেগে খেলা ধারণ করেছি।’
মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় নাসুর একাডেমিক পড়াশোনার ভিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে স্নাতক করেছেন। নব্বই দশকের শেষ দিকে অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজের শুরুর গল্পটা বললেন এভাবে, ‘আমার একাডেমিক বিষয় ছিল পরিসংখ্যান। খেলা ছাড়ার পর কম্পিউটার ব্যবসা করতাম। বোর্ড থেকে বললো অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করার। দেখলাম বিষয়টি আমার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ও কাজের ধরনের সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কিত। এরপর থেকে কাজের শুরু এখনো চলছেই।’ বিসিবির অ্যানালিস্ট বিভাগে সম্প্রতি রুয়েটের সিএসই বিভাগ ও আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ যোগদান করেছেন। স্পোর্টস অ্যানালিস্ট হিসেবে সফলতায় ব্যক্তির আগ্রহ ও সৃজনশীলতাই বেশি মূখ্য বলে মনে করেন নাসু, ‘অনেক তথ্যের মধ্যে সঠিক তথ্য বাছাই করতে হয়। প্রযুক্তিকে নিজের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোত্তম ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্যতা একটি বড় বিষয়।’