গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক আলোচিত নাম সাকিব আল হাসান। দিন যতই যাচ্ছে এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে ততই বাড়ছে ধোয়াশা। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলেও ঘরের মাঠে খেলে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেটি এখনো পুরন হয়নি। আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। সাবেক টাইগার অধিনায়কের সে আশাও পুরন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে হচ্ছে। অন্তত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদের কথায় সেটিই মনে হচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বাহিরে রয়েছেন সাকিব। বিদেশে থাকা অবস্থায় সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেটি রুপ নেয় ছাত্র জনতার বিপ্লবে। সে বিপ্লবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তারপর দেশে অনেক পরিবর্তন আসে। একের পর এক মামলা হতে থাকে সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে। সাকিবও একটি হত্যা মামলায় আসামি হন। যে কারণে বিদায়ী টেস্ট খেলতে দেশে আসতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশ দল বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবস্থান করছে। জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে চলছে দ্বিতীয় টেস্ট। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে সফরকারীরা। এই সিরিজের জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়নি এখনো।
সাকিব দলে থাকছেন কী না, এই কৌতূহল তাই কেবল বাড়ছেই। কৌতূহল মেটানোর মতো কিছু আপাতত বলছেন না ফারুক আহমেদও। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজন ও বিসিবির সহযোগিতায় ‘তারুণ্যের উৎসব’-এর যাত্রা শুরুর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি সভাপতি। সেখানে সাকিবের খেলা নিয়ে প্রশ্নের সরাসরি জবাব নেই তার কাছে। ‘সাকিবের ব্যাপারে আসলে আমি খুব বেশি উত্তর দিতে পারি না। আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করা হলে আমি ঠিক বিব্রত না, আমি চাই সাকিব খেলুক। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে... যে কারণে ও আসতে পারছে না, এটা ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। তাই আমার জন্য এটার উত্তর করা খুব কঠিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আদালত আছে তাদের ব্যাপারটা মীমাংসা করতে হবে।’
এখন আবু ধাবি টি-টেন লিগে বাংলা টাইগার্সকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব। ওই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, টি-টেন লিগ শেষ হওয়ার পরে তিনি জাতীয় দলের ব্যাপারে ভাববেন। দশ দলের মধ্যে নবম হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে সাকিবদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে না পারলে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিবের খেলাও চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে নিশ্চিতভাবেই।
বিসিবি সভাপতি কোনো কিছু খোলাসা করলেন না এখানেও। ‘(চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য) সাকিব তো এখনো আমাদের তালিকায় আছে। আমরা তো আশা করি, সে যেভাবে চাচ্ছে বা এটা যদি একটা সমাধান হয়, আমি মনে করি সাকিব এখনো ক্ষমতা রাখতে জাতীয় দলে খেলার।’ এরপর তাকিবের মানসিকতা নিয়ে সন্দেহর কথা বলে ফারুক আহমেদ। ‘তবে এভাবে আসলে একজন ক্রিকেটারের জন্য... শুধু দেশের বাইরে থেকে টুর্নামেন্টগুলো খেলবে, তাকে মানসিকভাবে খুব একটা...। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলা আর দেশের হয়ে খেলা এক নয়। প্রস্তুতি পর্ব হয়, দলের সমন্বয়টা দরকার হয় খুব বেশি। এটা যেহেতু করতে পারছে না, আমার মনে হয় ও তাই এখন দেশের হয়ে খেলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। সেক্ষেত্রে আমরা এই জিনিসটা ওর ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি যে, ও কী চিন্তা করছে।’ বিসিবি সভাপতির কথায় যে ইঙ্গিত, তাতে সাকিবের জন্য আশার বার্তা খুব একটা নেই।
আগামী ১১ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কায় শুরু হবে লঙ্কা টি-টেন লিগ। ওই টুর্নামেন্টে প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগেই সরাসরি চুক্তিতে সাকিবকে দলে নিয়েছে গল মার্বেলস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে না যেতে পারলে হয়তো শ্রীলঙ্কার টি-টেন লিগেই দেখা যাবে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকে।