মিরপুর থেকে সিলেট, ওয়ানডে থেকে টি-টোয়েন্টি। স্থান আর ফরম্যাট বদলাতেই বদলে গেছেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজে যাদের হোয়াইটওয়াশ করেছিলেন, সে আয়ারল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাই হয়েছে টাইগ্রেসরা। গতকাল সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে আইরিশরা। টানা তিন হারে সফরকারীদের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেয়েছে লাল সবুজ দল। ওয়ানডে সিরিজে দাপুটে জয়ের পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফিরতেই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখল বাংলাদেশ।
এদিনও যথারীতি বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতাশাজনক। যে দলের রান ছুটছিল দেড়শর পথে, শেষ দিকে পথ হারিয়ে সেই দল আটকে যায় স্রেফ ১২৩ রানে। ১২৪ রানের লক্ষ্য নেমে দারুণ শুরু পায় আয়ারল্যান্ড। অনায়াসেই এগোচ্ছিল আইরিশরা। বাংলাদেশ পরে ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য আয়ারল্যান্ডের দরকার ছিল ১৬ রান। হাতে ৫ উইকেট। বোলিংয়ে তখন বাংলাদেশের স্বর্ণা আক্তার। ম্যাচটি জয়ের সম্ভাবনা তখনো বাংলাদেশের দিকেই ছিল। প্রথম বলেই আরলেন কেলিকে স্বর্ণা রান আউট করলে সেই সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায় বাংলাদেশের। কিন্তু পরের ৪ বলে ডিলেনি যা করলেন তাতে শুধু জয়ই পেলেন না, বাংলাদেশের নারী দলের ক্রিকেটারদের হৃদয়ও ভেঙে গুড়িয়ে দিলেন। স্বর্ণার ওভারের দ্বিতীয় বলে তিনি নিলেন ২ রান। এরপর টানা তিনটি বাউন্ডারি। এক বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ। স্বাগতিকদের দেয়া লক্ষ্য টপকাতে নেমে দারুণ শুরু পায় আয়ারল্যান্ড। এমি হান্টার-গ্যাবি লুইস মিলে অনায়াসে বাড়াতে থাকেন রান। তাদের ব্যাটিংয়ে এক সময় মনে হচ্ছিলো শরীরী ভাষা নেতিয়ে পড়েছে স্বাগতিক দলের। তবে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ম্যাচে খুব ভালোভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ৮ম ওভারে ২৪ বলে ২৮ করা হান্টারকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা। ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ৬৩ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট। রাবেয়া খানের বলে ফিরে যান ২৪ বলে ২১ করা আইরিশ অধিনায়ক। খানিক পর রান আউটে কাটা পড়েন ছন্দে থাকা লিয়া পল। আরো ৬ রান পর অরলা পেন্ডারগাস্টকে রাবেয়া আউট করে ফেললে ম্যাচ তখন স্বাগতিকদের মুঠোয় চলে এসেছিল।
এরপরই ছবি বদলাতে থাকেন ডেলানি। রেবেকা স্টকেলকে নিয়ে যোগ করেন ৩৩ রান। রেবাকার বিদায়ের পর দলকে একা টেনে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরেন আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট পরিবারের মেয়ে ডেলানি। আগের দুই ম্যাচ আগে ব্যাট করে জেতা আয়ারল্যান্ড রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। আগের দুই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া আয়ারল্যান্ড সকালের আবহাওয়ায় এবার নেয় ফিল্ডিং। ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা বেশ ভালো। সেটা আসে সোবহানা মুশতারির হাত ধরে। দিলারা আক্তারের বদলে মুরশিদা খাতুন বেশিক্ষণ টেকেননি। চতুর্থ পভারে দলের ৩৩ রানে ১২ রান করা মুরশিদা ফিরে যান। এরপর শারমিন আক্তার সুপ্তার সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন সোবহানা। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে তারা যোগ করেন ৭১ রান। তাদের জুটিতে বেশ ভালো অবস্থায় যাওয়ার আভাস তৈরি হয়েছিলো। তবে ৩৩ বলে ৩৪ করে সুপ্তার বিদায়ের পর উল্টো স্রোতে হাঁটা শুরু। খানিক পর ৪৩ বলে ৪৫ করে ফেরেন সোবহানাও। এরপর নিগার সুলতানা জ্যোতি, স্বর্ণা আক্তার, রিতু মনিরা একে একে দ্রুত ফিরে গেলে বড় পুঁজির আশা মিলিয়ে যায় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের ইনিংসে বড় হন্তারক আবারও আইরিশ পেসার অরলা প্রেন্ডারগাস্ট। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে তিনি নেন ৪ উইকেট। উইকেটে মন্থরতা থাকায় এই পুঁজি নিয়েও অবশ্য জেতা সম্ভব ছিলো, সেই পরিস্থিতিও এসেছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ওয়ানডে সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলেও টি-টোয়েন্টিতে নিজেরা হোয়াইটওয়াশ হয়ে সিরিজ শেষ করলো নিগার সুলতানা জ্যোতি।