হোয়াইটওয়াশেই প্রতিশোধ নিলো বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া প্রতিবেদক

হার দিয়ে ক্যারিবিয় সফর শুরু করা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পরের টেস্টেই। তাতে দুই টেস্টের সিরিজ শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। এরপর রঙিন পোশাকে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বধের পরিকল্পনা এঁটেছিল টাইগাররা। সে লক্ষ্যে সিরিজের দুই ম্যাচে বড় স্কোর গড়েছিল লাল সবুজের ব্যাটাররা। কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতায় স্বাগতিকদের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পেতে হয়। বাকি ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। যে ফরম্যাটের রাজা বলা হয়ে থাকে ক্যারিবিয়ানদের। আইসিসি টি-টোয়েন্ট র‍্যাংকিংয়ের চার নম্বর দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশ এ ফরম্যাটে চরম অধারাবাহিক। র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান ৯ নম্বর। সেই নড়বড়ে টি-টোয়েন্টিতেই অন্য বাংলাদেশের দেখা মিলেছে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল সফরকারিরা। গতকাল শুক্রবার সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ জয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অল্প অর্জনের শীর্ণ পাখায় কয়েকটি পালক যুক্ত করেছে। এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব দেখালো বাংলাদেশ। ১২ বছর পর বিদেশের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে আরো একটি সিরিজ জিতলো টাইগাররা। আর ষষ্ঠবারের মতো কোনো দলকে ধবলধোলাই করলো। সফরজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা জাকের আলি জ্বলে উঠলেন শেষ ম্যাচেও। তার ব্যাটে ভর করে ১৮৯ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।

জবাবে ১৯০ রান তাড়ায় নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় বলেই খায় ধাক্কা। পুরো সিরিজে দারুণ বল করা তাসকিন আহমেদ এলবিডব্লিউতে খালি হাতে ফেরান ব্র্যান্ডন কিংকে। অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রেইভসকে পরের ওভারে তুলে নেন শেখ মেহেদী। ৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে পাল্টা আক্রমণে টেনে তুলছিলেন নিকোলাস পুরান-জনসন চার্লস। দ্রুত রান আনে ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন তারা। তবে ৩৮ রানের জুটিটি থামান শেখ মেহেদী। এক ছক্কার পর আরেকটি মারতে গিয়ে বোল্ড হন ১০ বলে ১৫ করা পুরান। সিরিজে তৃতীয়বার পুরানকে আউট করেন শেখ মেহেদী। খানিক পর চার্লস আয়েশি ভঙিমায় রান নিতে গিয়ে হন রান আউট। ৪৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ক্যারিবিয়ানরা। অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল খাদের কিনার থেকে তার দলকে জাগাতে পারেননি। ১২ বল খুইয়ে স্রেফ ২ রান করে রিশাদ হোসেনের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। এরপর রোমারিও শেফার্ডের ২৭ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ক্যারিবিয়ানরা একশ ছাড়ায়। কিন্তু বড় পরাজয় এড়ানো যায়নি। ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ম্যাচের সেরা জাকের। ওভারপ্রতি স্রেফ ৫.৭৫ রান দিয়ে আট উইকেট নিয়ে সিরিজ-সেরা শেখ মেহেদী। এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড ৩৫ উইকেট নিয়ে বছর শেষ করলেন রিশাদ হোসেন।

এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন সৌম্য সরকারের চোটে সুযোগ পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমন। তার সঙ্গে মিলে বাজে ছন্দ কাটানোর আভাস দিচ্ছিলেন লিটনও। ৪ ওভারে চলে আসে ৪০ রান। পঞ্চম ওভারে জোর করে পুল মারার চেষ্টায় ফেরেন ১৩ বলে ১৪ করা লিটন, অধিনায়কত্বে পুরো মার্কস পেলেও ব্যাটিং দিয়ে আবার হতাশ করলেন তিনি পরের ওভারে আরেক ছক্কা মারার পর বিদায় নেন ইমনও। পাওয়ার প্লেতে আসে ২ উইকেটে ৫৪ রান। এদিন আকিল হোসেন না থাকায় পাওয়ার প্লেতে স্পিনার আনেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের বোলিংও ছিল বেশ খাপছাড়া। পাওয়ার প্লের পর গুডাকেশ মোটি এসে তুলে নেন তানজিদ হাসান তামিমকে। এই তরুণও পুরো সিরিজে ব্যর্থ। এবার ফেরেন ৯ বলে ৬ রান করে। এর পর দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাকের আলি অনিকের সঙ্গে গড়ে তুলেন জুটি। ৩১ বলে ৩৭ রানের জুটির পর ২০ বলে ২৭ করে ছক্কার চেষ্টায় থামেন মিরাজ।

এর পর জাকেরের সঙ্গে যুক্ত হন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। প্রথম দুই ম্যাচের হিরো এবার ব্যর্থ, ৪ বলে ২ রান করে হোন রান আউট। যদিও এই রান আউট নিয়ে হয় নাটকীয়তা, জাকেরকে শুরুতে আউট দেয়ায় তিনি চলে যান ড্রেসিংরুমে। পরে চতুর্থ আম্পায়ারকে তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনেন, আউট দেয়া হয় শামীমকে। খানিক পর আরেক রান আউট, এবার বিদায় নেন শেখ মেহেদী হাসান। রান আউট ভেবে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়ে আবার ফেরা জাকের এর পর সুপার হিরো। ১৬ বলে ১৭ থেকে করেন ৪১ বলে ৭২। তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ২৬ বলে ৫০। শেষ ওভারে পর পর তিন ছক্কায় দলকে নেন দুইশোর কাছে।

যা দিয়ে ম্যাচ জেতা সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। এ ম্যাচে বোলিং গ্রুপ আরো একবার মেলে ধরলো নিজেদের। সম্মিলিত পারফরম্যান্সে অভাবনীয় সাফল্যে বছর শেষ করলো বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এর আগে টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয়ই ছিল না। এবার সে লক্ষ্য পূরণের পর প্রথমবার তাদের হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়লো টাইগাররা। রিশাদ হোসেন ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল। শেখ মেহেদী হাসান ১৩ রানে পান ২ উইকেট, ৩০ রানে ২ শিকার ধরেন তাসকিন আহমেদ। একটি করে উইকেট নেন বাকি দুই পেসার।