ঢাকা ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিপিএলে অবিশ্বাস্য কীর্তি তাসকিনের

বিপিএলে অবিশ্বাস্য কীর্তি তাসকিনের

সকাল থেকেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজধানী ঢাকা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল; কিন্তু সূর্যের দেখা মেলেনি। শীতে নাকাল নগরবাসীকে গরম খবর দিলেন তাসকিন আহমেদ। জাতীয় দলের এই গতি তারকার অর্জনের খাতায় যোগ হলো আরো একটি সাফল্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসরে অবিশ্বাস্য এক কীর্তি গড়লেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে ১৯ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। যা তার ক্যারিয়ারের সেরা তো বটেই, বাংলাদেশের হয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং ফিগার। ইনিংসের শেষ ওভারে তিন উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ পেসার। এই ফরম্যাটে এতদিন ১০ রানে মোস্তাফিজুর রহমানের ৬ উইকেট ছিল বাংলাদেশের সেরা বোলিং।

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে মোস্তাফিজুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওই কীর্তি গড়েছিলেন। তাসকিন জাতীয় দলের জার্সিতে না হলেও স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সেই কীর্তি টপকে গেলেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হিসেবে মোস্তাফিজের বোলিং কীর্তি এখনও শীর্ষে। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে বেশি পায়নি কোন বোলার। বিশ্বজুড়ে বিশ ওভারের ক্রিকেটে এক ম্যাচে ৭ উইকেট শিকারের কীর্তি আছে আর কেবল দুটি। গত বছর চীনের বিপক্ষে ৮ রানে ৭ উইকেট নেয়ার অবিশ্বাস্য নজির গড়েন মালয়েশিয়ার পেসার সিয়াজরুল ইদ্রুস। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে লেস্টারশায়ারের হয়ে বার্মিংহ্যাম বিয়ার্সের বিপক্ষে ১৮ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন কলিন আকারম্যান। তাসকিনের রেকর্ড অভিযান শুরু হয় ম্যাচের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভার থেকেই। বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে লিটন দাসকে বিদায় করেন তিনি শূন্য রানে। পরের ওভাবে ক্রিজ ছেড়ে শট খেলার চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে দেন তানজিদ হাসান। ওই ওভারে দুটি চারও হজম করেন তিনি শাহাদাত হোসেনের ব্যাটে। দুই ওভারে উইকেট ছিল দুটিই।

আবার আক্রমণে আনা হয় তাকে সপ্তদশ ওভারে। এবার প্রথম বলেই দেখা পান উইকেটের। ফিফটি করা শাহাদাত উড়িয়ে মারেন ছক্কার চেষ্টায়। সীমানায় ভালো ক্যাচ নিয়ে তাকে ফেরান রায়ান বার্ল। ওই ওভারে চাতুরাঙ্গা ডি সিলভাকেও ফেরান তিনি। শেষ ওভারে আলাউদ্দিন বাবুকে আউট করে পূর্ণ করেন তিনি ৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি আগে একবারই। ২০১৬ বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে সেই ৫ উইকেট ছিল ৩১ রানে। পরের বলে মুকিদুল ইসলামকে বোল্ড করে তিনি ছাড়িয়ে যান নিজেকে। হ্যাটট্রিক ডেলিভারিতে এক রান নেন নাজমুল ইসলাম অপু। পরের বলেই ধরা দেয় সপ্তম শিকার। তার নাম উঠে যায় রেকর্ড বইয়ে। এবার আউট হন ১৩ বলে ২৪ রান করা শুভাম রাঞ্জানে। বিপিএলে এর আগে সেরা বোলিং ছিল মোহাম্মদ আমিরের। ২০২০ সালে খুলনা টাইগার্সের হয়ে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ১৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানি পেসার।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে বিপিএলে সেরা বোলিং ছিল গত আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে আবু হায়দারের ১২ রানে ৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ছিল সাকিব আল হাসানের। ২০১৩ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বারবাডোজ ট্রাইডেন্টসের হয়ে ৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাসকিন ছাড়িয়ে গেলেন তাদের সবাইকে। অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরা হন এই ডানহাতি পেসার। ম্যাচ শেষে তাসকিন বলেন, ‘ভাবছি (৭ উইকেট পাবেন কি না)। আসলে না ভাবলে হতো না। হ্যাঁ, উইকেট একটু লাকেরও ফেভার হতে হয়; কিন্তু আমি খুশি যে আমি আলহামদুল্লিলাহ বোলিংয়ে যেটা করতে চাচ্ছি প্রয়োগ হচ্ছে। আসলে ভালো বোলিং করতে পারাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ বিপিএলের ইতিহাসে নিজের নাম তুলতে পারা বিশেষ মনে হচ্ছে তাসকিনের, ‘ফাইফার তো যে কোনো ফরম্যাটে অনেক স্পেশাল।

কারণ অনেকবার তিন উইকেট, চার উইকেট পেয়েছি; কিন্তু উইকেটের সঙ্গে ভাগ্যও লাগে পাঁচটা পেতে। আলহামদুল্লিলাহ এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। যেহেতু আমি বাংলাদেশের ছেলে বিপিএলের ইতিহাসে আমার একটা নাম থাকবে খেলা ছাড়ার পরও, এটা আমার জন্য একটা প্রাউড মোমেন্ট।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত