আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসর। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। উদ্বোধনী খেলার দিনে টিকিট সংকটে ক্ষুব্ধ দর্শকরা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে ভাঙচুরও চালিয়েছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তাতে টনক নড়েনি বিসিবির। দ্বিতীয় দিনেও টিকিট না পেয়ে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছে দর্শকরা। মিরপুরের সুইমিং কমপ্লেক্স এলাকায় টিকিট কাউন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বিপিএলের এবারের সিংহভাগ টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনে। এর বাইরে সর্বসাধারণের কথা চিন্তা করে কিছু টিকিট মধুমতি ব্যাংকের নির্ধারিত ৭টা শাখা থেকেও বিক্রি হচ্ছে। পরে জানানো হয়, স্টেডিয়াম সংলগ্ন সুইমিং কমপ্লেক্সের বুথ থেকেও সশরীরে টিকিট কিনতে পারবেন দর্শকরা। সেখানেই এবার ঘটল বিপত্তি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিকিটের জন্য সুইমিং কমপ্লেক্সের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন দর্শকরা। কিছু দর্শক টিকিট পেয়েছেনও। তবে পাননি আরও অনেকেই। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কাউন্টার থেকে টিকিট না পেয়ে একপর্যায়ে হট্টগোল শুরু করতে থাকেন তারা। স্লোগান, চিৎকার, গালিগালাজের মাঝেই হুট করে উত্তেজিত কয়েকজন লোহার বেড়ি ভেঙে ঢুকে যান ভেতরে। দুপুর ১২টার কাছাকাছি সময়ে টিকেট কাউন্টারের অস্থায়ী বুথে ব্যবহৃত শামিয়ানায় আগুন ধরিয়ে দেন তারা। কাছেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় বড় হয়নি অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা। খবর পেয়ে দ্রুতই আগুন নেভানো হয়েছে বলে জানান মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহজাহান সিরাজ। ‘আমরা দুপুর ১২টা ৭ মিনিটে বার্তা পাই যে, সুইমিং কমপ্লেক্সে বিপিএলের টিকিট কাউন্টারে আগুন দেয়া হয়েছে। দ্রুত একটি টিম নিয়ে আমরা এখানে আসি এবং অগ্নি নির্বাপণ করি। তাই আগুন ছড়ায়নি। আগুনের কারণে ক্ষয়ক্ষতিও তেমন হয়নি। তবে উৎসুক জনতা এখানে অনেক ভাঙচুর করেছে।’
সরজমিনে দেখা যায়, সুইমিং কমপ্লেক্সের মূল ফটকের বাইরে অভ্যর্থনা কক্ষের কাচ একটুও অক্ষত নেই। এছাড়া মূল ভবনের বাইরে বেশ কয়েকটি জানালা ও সিঁড়ির কাছের কাঁচও ভেঙে ফেলা হয়েছে ঢিল ছুড়ে। সাঁতার ফেডারেশনের একজন কর্মীকে সেগুলোর ভিডিও করতে দেখা যায়। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে চাননি। আগুন নিভিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে যাওয়ার পরও অব্যাহত থাকে উত্তেজিত দর্শকদের বিক্ষোভ। কিছুক্ষণ পরপর সুইমিং কমপ্লেক্সের কাউন্টারের সামনে জড়ো হয়ে বিসিবির বিরুদ্ধে নানান স্লোগান দিতে থাকেন তারা। টিকিটপ্রত্যাশী একজন অভিযোগ করেন, কাউন্টারে মূল দামের চেয়ে বেশি চাওয়া হয়েছে টিকিটের দাম। ‘আমি আজকেই ভোলা থেকে এসেছি। সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো। সকালে দেখেছি কিছু টিকেট দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর শুনি দাম বেড়ে গেছে। দুইশ টাকার টিকিট ৬০০ টাকা, ৮০০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ বাড়তি দামে কিনছে না দেখে বিক্রিই বন্ধ করে দিয়েছে।’
কাউন্টারে বাড়তি দাম চাওয়ার ব্যাপারে বিসিবির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। আরাফাত ইসলাম নামের আরেক দর্শক অনলাইনে টিকেট বিক্রি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ‘খবরে দেখেছি এবার টিকিট নাকি অনলাইনে বিক্রি করছে। এখানেও অনেকের মুখে শুনেছি অনলাইনে টিকিট আছে। (হাতের ফিচার ফোন দেখিয়ে) কিন্তু আমার তো নেট মোবাইল (স্মার্টফোন) নেই। আমি কীভাবে টিকিট কিনব? আমাদের জন্য কাউন্টারে টিকিট দেয়া উচিত।’ দুপুর ১টার কাছাকাছি সময়ে আরাফাত এই কথা যখন বলছিলেন, তখনও বিসিবির টিকেটিং ওয়েবসাইটে ৩০০ টাকা মূল্যের নর্দার্ন ও সাউদার্ন গ্যালারির টিকিট বাকি ছিল। এর কিছুক্ষণ পর শুধু ৫০০ টাকার ক্লাব হাউজ ও ২ হাজার টাকার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিট দেখা যায় ওয়েবসাইটে। সুইমিং কমপ্লেক্সের বিক্ষুব্ধ দর্শকরা খেলা শুরুর পর হাজির হন মিরপুর স্টেডিয়ামের ৫ নম্বর গেটের কাছে। স্লোগান, গালিগালাজে তখন অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেখানে। বিঘ্ন ঘটে যান চলাচলেও। দুপুর আড়াইটার পর একদল দর্শক স্টেডিয়ামের পাঁচ নম্বর গেটের কাছে মিরপুর ২ থেকে ১০ নম্বরের সড়কে বসে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেন। তখন আর থেমে থাকেনি পুলিশ। লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় সেসব দর্শককে। এছাড়া কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে অন্তত দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপরও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কিছুক্ষণ পরপর টিকিটপ্রত্যাশীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করতে থাকে। কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে মাঠের ক্রিকেটের চেয়ে বাইরের ঘটনাই যেন ছড়াতে থাকে তুলনামূলক বেশি উত্তাপ।