দশজনের দল নিয়েই চট্টগ্রাম আবাহনীকে উড়িয়ে দিয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ঐতিহ্যবাহি সাদা কালোরা জিতেছে ৫-১ গোলের ব্যবধানে। অন্যদিকে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে একাই বিধ্বস্ত করেছেন রহমতগঞ্জের ঘানার ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল বোয়েটেং। তার ডাবল হ্যাটট্রিকের সুবাদে পুরান ঢাকার ক্লাবটি ৬-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে।
মোহামেডানের নিয়মিত অধিনায়ক সুলেমানে দিয়াবাতে নেই। পেশিতে টান পড়ায় খেলেননি তিনি। তারওপর ম্যাচের ২২ মিনিটে তারা ১০ জনের দল হয়ে যায়। তখনও কোনও গোল পায়নি আলফাজ আহমেদের দল। ম্যাচ জিততে পারবে কিনা সংশয়। তবে শংকা কাটিয়ে মোহামেডান একজন কম নিয়ে খেলেও দুর্বার ছিল। প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীকে উড়িয়ে দিয়েছে ৫-১ গোলে। এর আগে ফেডারেশন কাপে ৬-০ গোলে মোহামেডান জিতেছিল। গতকাল শনিবার ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ২০ মিনিটে মারাত্মক ফাউলের কারণে লালকার্ড দেখেন মোহামেডানের শাকিল আহাদ তপু। লাফিয়ে ওঠা বলে হেড করতে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর অনিক ঘোষ, একই সময়ে উঁচু করে ডান পা চালিয়ে দেন তপু। তার পা গিয়ে লাগে অনিকের কাঁধের নিচে! ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মাঠেই শুয়ে পড়েন অনিক। বিপজ্জনক ফাউলের কারণে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন তপু। ১০ জন নিয়ে রহিম উদ্দিন, ইমানুয়েল সানডেরা চেষ্টা করেও প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেননি। যোগ করা সময়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর শুভরাজ বংশীর ক্রস সরাসরি ক্রসবার স্পর্শ করলেও পরবর্তীতে গোলকিপার সুজন গোল হতে দেননি। তবে বিরতির পর মোহামেডান দুর্বার। তাদের আর আটকে রাখা যায়নি।
৪৭ মিনিটে মোহামেডান গোলের খাতা উন্মুক্ত করে। মুজাফফরভের কর্নারে বুরকিনা ফাসোর ডিফেন্ডার মোনজির কলিদিয়াতি লাফিয়ে উঠে বল জড়িয়ে দেন জালে (১-০)। মিনিট আটেক পর আরিফ হোসেনের দারুণ এক কাটব্যাক থেকে নাইজেরিয়ান অ্যাটাকার প্লেসিং করে দিয়ে ব্যবধান বাড়ান (২-০)। ৬৩ মিনিটে মোহামেডানের স্কোরলাইন ৩-০। আর্নেস্ট বোয়েটেং বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শট নিলেও তা সাইডবারের নিচে লেগে ফিরে আসে, ফিরতি বলে দৌড়ে এসে জায়গা করে নিয়ে সৌরভ জোরালো শটে জাল কাঁপাতে ভুল করেননি। ৮৮ মিনিটে সানডের ক্রস সেলিম রেজা ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন। মিনিট দুয়েক পর সৌরভ নিজের দ্বিতীয় ও দলের হয়ে পঞ্চম গোল উপহার দেন (৫-০)। যোগ করা সময়ে চট্টগ্রাম আবাহনী পেনাল্টি থেকে এক গোল শোধ দেয়। ইমতিয়াজ সুলতান জিতু গোলকিপারের বিপরীত দিক দিয়ে জালে জড়িয়ে দলকে কিছুটা সান্ত¡না এনে দেন (১-৫)। লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ৬ ম্যাচের সবকটিতে জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রয়েছে। সমান ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী সবকটিতে হেরে এখনও পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি।
এদিকে দিনের অন্য ম্যাচে মুন্সীগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে.মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জ ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে। ঘানার অ্যাটাকার স্যামুয়েল বোয়েটেং একাই ছয় গোল করে সবাইকে চমকে দেন। ২৩, ৩৭, ৪৪, ৬৩, ৬৬ ও ৭০ মিনিটে গোলগুলো করেন তিনি। এই ম্যাচের ঝলকে ১০ গোল করে এক লাফে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন বোয়েটেং। ব্রাদার্স ইউনিয়নের চেক সিনে ৬ গোল নিয়ে নেমে গেলেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। জানা গেছে, প্রিমিয়ার লিগে এর আগে ২০০৭ সালে পেশাদার লিগের প্রথম আসরে পল নোয়াচুকু ডাবল হ্যাটট্রিক পেয়েছিলেন। তবে ঢাকার মাঠে ডাবল হ্যাটট্রিক এই দুটিই শেষ নয়। ১৯৭৩ সালে একই বছর ঢাকা লিগে দুটি ডাবল হ্যাটট্রিক হয়েছিল। যার একটি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ফায়ার সার্ভিসের বিপক্ষে ছয় গোল) এবং অন্যটি কাজী সালাউদ্দিনের (দিলকুশার বিপক্ষে সাত গোল)। এই জয়ে ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে রহমতগঞ্জ। সমান ম্যাচে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স চতুর্থ হারে আগের চার পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানেই রয়েছে।