সিডনি টেস্টে খেলছেন না রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হয়েও ফর্মহীনতার কারণে নিজেকে বাদ দেয়ার ঘটনা ক্রিকেট বিশ্বে বিরল। রোহিত সেটাই করে দেখিয়েছেন। তবে অনেক ক্রিকেট পণ্ডিত এখানেই রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। বিশেষ করে, কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। তবে সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে রোহিত জানালেন, তাকে কখন অবসর নিতে হবে তা মাইক-কলম নিয়ে বসে থাকা লোকেরা ঠিক করতে পারে না। পিতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম টেস্টে খেলেননি রোহিত। তবে পরের তিন টেস্টে ৬.২০ কেবল ৩১ রান করেছেন তিনি। তাই দলের ভালোর জন্যই সিডনি টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ান ডানহাতি এই ব্যাটার। রোহিত বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত অবসরের সিদ্ধান্ত নয়। না আমি খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি এই ম্যাচে খেলিনি কারণ আমার ব্যাটে রান আসছে না। তবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই পাঁচ বা দুই মাস পরে রান আসবে না। জীবন প্রতি সেকেন্ড, মিনিট কিংবা প্রতিটা দিনেই বদলায়, ক্রিকেটে এমনটা অনেক দেখেছি আমি।’ ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘নিজের প্রতি আস্থা রয়েছে যে পরিস্থিতি বদলাবে। তবে একইসঙ্গে আমাকে বাস্তববাদীও হতে হবে। তাই কারও ল্যাপটপ, মাইক কিংবা কলমের ওপর নির্ভর করে না। তারা ঠিক করতে পারে না, কখন আমাদের অবসর নেয়া উচিত, কখন আমাদের খেলার বাইরে থাকা উচিত, কখন আমাদের অধিনায়কত্ব করা উচিত। আমি একজন পরিণত মানুষ, দুই সন্তানের বাবাও। তাই আমি জানি, আমার জীবনে কী প্রয়োজন।’ সিডনি টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে আসেননি রোহিত। তবে হেড কোচ গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, ম্যাচের দিন সকালে উইকেট দেখেই একাদশ ঠিক করা হবে। কিন্তু রোহিত সিডনিতে পৌঁছেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, এই টেস্টে না খেলার ব্যাপারে।
তিনি বলেন, ‘এখানে (সিডনি) আসার পরই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ম্যাচের আগে আমাদের হাতে কেবল দুই দিন ছিল। নতুন বছরে নির্বাচক ও কোচের সঙ্গে আমি সেই আলোচনা করতে চাইনি। তবে বিষয়টি আমার মাথায় ছিল যে, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও আমি রান করতে পারছি না। আমাকে সেটা মেনে নিতে হবে এবং নিজেকেই সরে যেতে হবে।’ রোহিত শর্মা বলেন, ‘কোচ ও নির্বাচকের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল খুবই সহজ। আমার ব্যাটে রান আসছে, আমি ফর্মে নেই। এটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এবং আমাদের সেই খেলোয়াড় দরকার যারা কি না ফর্মে আছে। এমনিতেই ছেলেরা ভালো ফর্মে নেই। তাই আমার মনে হয়েছিল ফর্মহীন খেলোয়াড়দের নিয়ে এগোতে পারি না। সেজন্যই ভেবেছিলাম, মনের কথাটা কোচ ও নির্বাচককে বলা উচিত। তারা আমার সিদ্ধান্তের পাশে ছিলেন। তারা বলেছেন, তুমি এতো বছর ধরে খেলছ, তুমি কী করতে যাচ্ছ, সেটা তুমি ভালোভাবেই জানো এবং এটাই সঠিক।’
অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড সিরিজেও হাসেনি রোহিতের ব্যাট। ১০ ইনিংস খেলে তার গড় ছিল কেবল ১৩.৩০। অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও নিউজিল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাই হতে হয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। অথচ এর আগে টানা ১২ বছর ঘরের মাঠে কোনো সিরিজ হারেনি ভারত। সেই দুর্দশা অস্ট্রেলিয়া সফরেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি রোহিত। প্রথম ম্যাচে তাকে ছাড়াই জিতেছিল ভারত। তবে চার ম্যাচ শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। তাই শিরোপা ধরে রাখতে শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই সফরকারীদের। রোহিত বলেন, ‘(সরে দাঁড়ানোর) সিদ্ধান্তটি কঠিন ছিল, তবে সবকিছু বিবেচনায় এটি ছিল যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত। আমি খুব বেশি দূর পর্যন্ত ভাবছি। এই মুহূর্তে দলের কী দরকার, সেটাই ভাবছি আমি। আর কিছু নয়।’