বিগত পনের বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) জোরালোভাবে তেমন দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়নি। সেসময়ের বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন শক্ত হাতেই সংস্থাটি পরিচালনা করেছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে দলীয় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ পরিচালকই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থীত ছিলেন। জুলাই বিপ্লবে সব ওলট-পালট হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বদলে গেছে সরকার। পরিবর্তন এসেছে ক্রীকেট বোর্ডেও। পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছেন পাপন। নতুন সভাপতি হয়েছেন ফারুক আহমেদ। সেইসঙ্গে নতুন পরিচালক হয়েছেন নাজমুল আবেদীন। পাঁচ মাসের মাথায় এই দুই জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। যার জেরে পদত্যাগও করতে চেয়েছিলেন ফাহিম। পরে অবশ্য সিলেটে দ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ার দাবি করেছেন ফারুক আহমেদ।
প্রশ্ন হচ্ছে বোর্ডে নতুন আসা দুজন হঠাৎ দ্বন্দ্বে জড়ালেন কেন? এ নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক, বিসিবির সাবেক পরিচালক (পদত্যাগ করেছেন) ও বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন গতকাল সোমবার কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। সুজন কোন রাখঢাক না করেই বললেন লোভ লালসার জন্যই এমন দ্বন্দ্ব। সিলেট আউটার স্টেডিয়ামে ঢাকা ক্যাপিটালসের অনুশীলন শেষে নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন, ‘ফাহিম ভাই অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন (পরিচালক হওয়ার পর)। উনি অনেক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করছেন, দেখছেন, চিন্তা করছেন। তো সেগুলো আমি এখন দেখতেছি না। এখন দেখতেছি লোভ লালসার মতো হয়ে যাচ্ছে যে, ক্রিকেট অপারেশনস না পেলে আমি কাজ করব না, পদত্যাগ করব। এটা তো লোভ-লালসা।’
গত আগস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) আনা হয়েছিল পরিবর্তন। সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনসহ বেশ কয়েকজন সরে যাওয়ায় ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম পরিচালক হিসেবে বোর্ডে আসেন। পরে ফারুক হন সভাপতি। কিন্তু চার মাস না যেতেই তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে নানা কারণে। গত কয়েক দিনে নানা ধরনের নেতিবাচক সংবাদ উঠে এসেছে বিসিবি প্রসঙ্গে।
ফারুকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের প্রেস সচিব মাহফুজুল আলমের বিরুদ্ধে। এরপর বিসিবি প্রধানের বিপক্ষে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেন ফাহিম। দুই বিসিবি কর্মকর্তার মধ্যে এমন ঘটনা আলোচনার খোরাক তৈরি করেছে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে। এ সব দেখে বিরক্ত বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। সিলেটে গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেছেন, ‘কালকের (রোববার) একটা ঘটনা দেখলাম, ফারুক ভাই-ফাহিম ভাইয়ের দ্বন্দ্ব। যে দুজনই সাবেক ক্রিকেটার, তাদের কেন ইগোর (অহম) সমস্যা হবে? তারা তো ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যই এসেছেন। তারা যখন এসেছেন, তখন তো অনেক কমিটমেন্ট আমি দেখেছিলাম। বিশেষ করে, ফাহিম ভাই তো বলেছিলেন, উনি অনেক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করছেন, দেখছেন, চিন্তা করছেন।’
আগের দিন এক সাক্ষাৎকারে ফাহিম বলেছিলেন, তিনি ক্রীড়া উপদেষ্টাকে বলছেন যে, বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান না করা হলে অসন্তুষ্ট হবেন তিনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাই ফাহিমের ভুল দেখছেন সুজন, ‘সেগুলো আমি এখন দেখছি না।
এখন দেখছি, লোভ-লালসার মতো হয়ে যাচ্ছে যে, ‘আমি অপারেশন্স না পেলে কাজ করব না, পদত্যাগ করব।’ এটা তো লোভ-লালসা। কেন এই লোভ-লালসা তাদের মধ্যে আসে? আমার ক্রিকেট অপারেশন্স নিতে হবে কেন? আমি যদি অন্য কমিটির চেয়ারম্যান হই, সেখানে সার্ভ করতে পারব না কেন?’ চলমান বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ সুজন যোগ করেছেন, ‘উনি কি ক্রিকেট অপারেশন্সের মাস্টার? ওনার আগে তো আকরাম (খান) ভাই ক্রিকেট অপারেশন্সের মাস্টার, উনি চাইতে পারেন। কারণ, আকরাম ভাই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও অপারেশন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাহলে উনি (ফাহিম) কেন বলছেন, অপারেশন্স ছাড়া হবেই না। এটা তো ইগোর ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। ফারুক ভাই-ফাহিম ভাই, আমার মনে হয় ইগোর সমস্যা। সত্যি কথা বলতে, এটা কী হচ্ছে আমি জানি না।’ এই সব কর্মকাণ্ডে একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবেও লজ্জা পাচ্ছেন বলে মন্তব্য সুজনের, ‘যখন তাদের এই মনোভাব দেখি, তখন খারাপ লাগে। দুইজন সিনিয়র মানুষ, আমরা যাদেরকে অনেক সম্মান করি, ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাই, তারা আমাদের সম্মানের মানুষ ও ক্রিকেটার। তাদেরকে যখন এমন দেখি, ক্রিকেটার হিসেবে লজ্জিত হই যে, আসলে আমরা ক্রিকেটাররা এত বেশি লোভী নাকি? অনেক পরিবর্তনের লক্ষ্য শোনা গেলেও আদতে গত কয়েক মাসে তেমন কিছু দেখা যায়নি দেশের ক্রিকেটে। কারণ হিসেবে বিসিবিতে জনবলের ঘাটতির কথা আগের দিন উল্লেখ করেছেন ফারুক। তার উত্তরও দিয়েছেন সুজন, ‘এত অল্প পরিচালক দিয়ে ফারুক ভাইয়ের জন্য বোর্ড চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেটা কেন ফারুক ভাই নতুন পরিচালকদের নিচ্ছেন না? যাদেরকে ওনারা নিতে চান, তাদেরকে নিয়ে নিলেই পারেন।’ এছাড়া, দায়িত্ব গ্রহণের পর চার মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করতে পারেনি বিসিবি। এখানেও তাদের ব্যর্থতা দেখছেন সুজন।