১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্বের বুকে ঠাঁই পায় নতুন মানচিত্র ও পতাকা। স্বাধীনতার পর নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সত্তরের দশকেই প্রথমবার বাংলাদেশ নামে খেলতে নামে ক্রিকেট দল।
১৯৭৭ সালের ৭ জানুয়ারি প্রয়াত শামিম কবিরের অধিনায়কত্বে ঢাকা স্টেডিয়ামে মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেবারই প্রথমবারের মতো কোনো দলের বিপক্ষে ‘বাংলাদেশ’ নামে খেলেন দেশের ক্রিকেটাররা। তিন দিনের ম্যাচটিকে ‘আন অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচ’ হিসেবে লেখা হয়েছিল ওই সময়ের পত্র-পত্রিকায়। ম্যাচটি উপভোগ করতে ৪০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঢাকা স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অবশ্য এ ম্যাচের আগে ওই সফরে আরো দুটি ম্যাচ খেলেছিল এমসিসি। কিন্তু সেগুলো বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক নামে খেলা হয়। ঢাকা স্টেডিয়ামে (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) অনুষ্ঠিত ম্যাচটিই প্রথম বাংলাদেশ নামে খেলা হয়। ক্রিকেট এখন তিন ফরম্যাটের খেলা। ওয়ানডেতে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, টেস্টে নাইমুর রহমান দুর্জয় ও টি-টোয়েন্টিতে শাহরিয়ার নাফিস প্রথম অধিনায়ক হলেও দেশের ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে স্বীকৃত শামীম কবির। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এমএসসির বিপক্ষে খেলা দলটিই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেই দলকে নেতৃত্ব দেয়া শামীম কবীরকে তাই প্রথম অধিনায়ক ধরা হয়। ২০১৯ সালে তিনি পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। এমসিসি দলের বিপক্ষে তিন দিনের ম্যাচটিতে ড্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেও শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। ইউসুফ রহমান বাবুর ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৭৮ রান।
এছাড়া ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখান ফারুক (৩৫) শামিম কবির (৩০) ও রুমি (২৮)। জবাবে ৩৪৭ রানে অলআউট হয় এমসিসি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান জমা করে বাংলাদেশ। সময় স্বল্পতায় ড্র হয় ম্যাচটি। যদিও একদিক থেকে জিতে যায় বাংলাদেশ। কারণ আদতে ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য ক্রিকেট খেলতে পারে কি না সেটি যাছাইয়ের পরীক্ষাও। মাঠের খেলার সঙ্গে ক্রিকেটের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। সেবারের সফর শেষে এমসিসির এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই বছরের জুনে আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ পায় বাংলাদেশ। খুলে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুয়ার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিশেষ এই দিনটি ভুলতে বসেছে সবাই। খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) তেমন আয়োজন দেখা যায় না। এ প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত বিসিবির সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে দিনটি নিয়ে কোনো পোস্টও চোখে পড়েনি।