শেষ ওভারে ৩০ রান নিয়ে নায়ক সোহান
অবিশ্বাস্য জয়ে রংপুরের ছয়ে ছয়
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রীতিমত উড়ছে রংপুর রাইডার্স। ছয় ম্যাচে টানা ৬ষ্ঠ্য জয় তুলে নিয়েছে গ্লোবাল সুপার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। সবশেষ জয়টি ছিল একেবারেই অবিশ্বাস্য। অবিশ্বাস্য বললেও হয়তো কম বলা হয়। শেষ ওভারে রংপুরের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। বল হাতে আসছিলেন কাইল মায়ার্স, যিনি প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন মোটে ৩ রান। তার ওপর উইকেটে থিতু ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ বা খুশদিল শাহরাও ছিলেন না। ছিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান, যার ভুলেই আউট হয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। তবে খলনায়ক নয়, নায়কই বনে গেলেন তিনি।
কাইল মায়ার্সের প্রথম বলে হাঁকালেন ছক্কা, পরের দুই বলে দুটি চার। এরপর ছক্কা, চার, ছক্কা সোহান যা দেখালেন, এমন কিছু আর কখনো দেখা যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কাইল মেয়ার্সকে গুঁড়িয়ে ৩০ রান নিয়ে রংপুর রাইডার্সকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিলেন অধিনায়ক সোহান। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম স্বাক্ষী হলো অসাধারণ এক লড়াইয়ের। কাগজে-কলমে বিপিএলের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই দলের লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের মুঠো থেকে জয় বের করে নিলেন সোহান। তিন উইকেটের জয়ে রংপুর রাইডার্স ধরে রাখল তাদের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। ছয় ম্যাচে ছয় জয়।
এদিন আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৭ রান করে বরিশাল। জবাবে শেষ বল পর্যন্ত খেলে জয় নিশ্চিত করে সোহানের দল। ম্যাচের শেষ দিকে হয় নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা। ইফতেখার আহমেদ ও খুশদিল শাহ যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হয়েছিল সহজ জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল রংপুর। কিন্তু ১৮তম ওভারে দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৩ রান দেয়ার পাশাপাশি ইফতেখারকেও তুলে নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পরের ওভারে খুশদিলসহ তিনটি উইকেট তুলে নেন জাহান্দাদ খান। তাতে ম্যাচে হেলে যায় বরিশালের দিকে। ফলে শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ২৬ রানের। কাইল মেয়ার্সের হাতে বল তুলে দেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এই মেয়ার্সের ব্যাটেই দুইশর কাছাকাছি পুঁজি পেয়েছিল তারা। কিন্তু তার করা শেষ ওভারের প্রতিটি বলেই বাউন্ডারি আদায় করে নেন সোহান। যার মধ্যে ৩টি ছক্কা। শেষ বলেও যখন জিততে ২ রান প্রয়োজন তখন ছক্কা মেরেই উদযাপন করেন রংপুর অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ৭ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন সোহান। তবে রংপুরকে আগেই জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ইফতেখার ও খুশদিল। তৃতীয় উইকেটে ৯১ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। পরে শাহিনের বলে ইফতেখার আউট হলে ভাঙে জুটি। যদিও তার আউট নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন না তৃতীয় আম্পায়ারও। অসন্তোষ নিয়ে মাঠ ছাড়েন এই পাকিস্তানি। ৩৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৮ রান করেন তিনি। জাহান্দাদের করা ১৯তম ওভারে প্রথম দুই বলে ছক্কা মারেন খুশদিল। কিন্তু তৃতীয় বলে আরো একটি মারতে গিয়ে আউট। ২৪ বলে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৪৮ রান করেন খুশদিল। এরপর শেখ মেহেদী হন অবস্ট্রাকিং দ্য ফিল্ড। জাহান্দাদের বল খেলতে গেলে ক্যাচ উঠলে বোলার সেটা ধরতে গেলে সোহান ইচ্ছে করে বলের দিকে দৌড়ে ক্যাচ ধরায় বাধা দিলে তৃতীয় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানান। আর শেষ বলে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাইফউদ্দিন। তাতে হারের শঙ্কায় পড়ে যায় রংপুর। কিন্তু সব শঙ্কা উড়িয়ে শেষ ওভারে সব সমীকরণ মিলিয়ে দেন সোহান।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ সূচনা করে বরিশাল। তামিম ও শান্তর ওপেনিং জুটিতেই আসে ৮১ রান। ৯ রানের ব্যবধানে এ দুই ওপেনার আউট হলে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় পুঁজির ভিত গড়ে দেন মেয়ার্স। শেষ দিকে ফাহিম আশরাফও খেলেন দারুণ এক ক্যামিও। ফলে বড় পুঁজিই পায় দলটি। ২৯ বলের দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রানের ইনিংস খেলেন মেয়ার্স।
যেখানে ৭টি ছক্কার সঙ্গে একটি চার মারেন এই ক্যারিবিয়ান। ৩০ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ রান করেন শান্ত। ৩৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন তামিম। ৬ বলে ১টি চার ২টি ছক্কায় ২০ রানের ক্যামিও খেলেন ফাহিম। ২৩ রান করেন তাওহিদ।