চৌদ্দতম বারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে বার্সেলোনাকে ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছিল রিয়াল মাদ্রিদ। পাশাপাশি লস ব্লাঙ্কোসদের জন্য এটি ছিল প্রতিশোধের ম্যাচও। কারণ, গত বছরের অক্টোবরে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল বার্সেলোনা। আড়াই মাসের ব্যবধানে আবারো মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু বছরের প্রথম এল ক্লাসিকোতে এমবাপ্পে-রাফিনিয়ারা দশ জনের বার্সার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। রিয়ালের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে কাতালানরা। গত রোববার দিবাগত রাতে সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সুপারকোপার ফাইনাল ম্যাচে বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-২ গোলে পরাজিত করে দুর্দান্ত জয় নিশ্চিত করেছে।
বার্সেলোনার হয়ে জোড়া গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রাফিনিয়া। একটি করে গোল পেয়েছেন লামিন ইয়ামাল, রবার্ট লেভানদোভস্কি এবং আলেহান্দ্রো বালদে। রিয়ালের হয়ে সান্ত¡নাসূচক গোলটি করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। আসলে ম্যাচের অনেকটা সময় একজন কম নিয়ে খেললেও ফলাফল এর আগেই বের করে আনে বার্সা। গোলরক্ষক বয়েচেজিক শেজনি লাল কার্ড দেখার আগেই রিয়ালের জালে পাঁচ গোল দিয়ে ফেলে দলটি। অথচ ম্যাচের প্রায় শুরুতেই গোল হজম করেছিল কাতালানরা। এর পর বিরতির আগেই ব্যবধান ৪-১ করে ফেলে দলটি। আর বিরতির পরপরই পঞ্চম গোল। তবে ম্যাচের শুরুতেই রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তুয়া অতিমানবীয় হয়ে না উঠলে ব্যবধান হতে পারতো আরো বড়। প্রথম চার মিনিটের মধ্যেই তিনটি দারুণ সেভ করেন তিনি। তবে তার একটি সেভের পর পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল আদায় করে নেয় রিয়াল। মার্ক কাসাদোর কাছ থেকে কেড়ে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়ানো বল প্রায় মাঝমাঠে পেয়ে দারুণ গতিতে ডি-বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠান এই ফরাসি ফরোয়ার্ড।
বার্সা অবশ্য ফিরতে খুব বেশিক্ষণ সময় নেয়নি। ২২তম মিনিটে জুলস কুন্দের কাছ থেকে বল পেয়ে ইয়ামালকে প্রথম ছোঁয়ায় পাস দেন লেভানদোভস্কি। এর পর বাকি কাজ সারেন ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ। ডান প্রান্ত থেকে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দারুণ এক কোণাকোণি শটে লক্ষ্যভেদ করে দলকে ফেরান ফেরান তিনি। ৩৬তম মিনিটে লিড নেয় বার্সা। ডি-বক্সের মধ্যে বার্সা মিডফিল্ডার গাভিকে ফাউল করেন রিয়াল মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। ভিএআরে যাচাই করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল আদায় করে নেন লেভানদোভস্কি। তিন মিনিট যেতেই ব্যবধান বাড়ায় কাতালানরা। কুন্দে অসাধারণ এক লম্বা ক্রস থেকে বক্সে ঢুকে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন রাফিনিয়া। আর বিরতির ঠিক আগে চতুর্থ গোলটি করেন বালদে। পাল্টা আক্রমণ থেকে ইয়ামালের কাছ থেকে বল পেয়ে এগিয়ে যান রাফিনিয়া। বক্সের কাছাকাছি গিয়ে রিয়াল মিডফিল্ডার ফেদে ভালভার্দেকে কাটিয়ে পাস দেন বালদেকে। দারুণ এক শটে বল জালে পাঠান এই ডিফেন্ডার। বিরতির পর সেই একই ছন্দে শুরু করে বার্সা। তবে শুরুতেই ব্যবধান কমাতে পারতো রিয়াল। ফরোয়ার্ড রদ্রিগোর একটি শট বারপোস্টে ফিরে আসে। এরপরই কাসাদোর দারুণ এক পাস থেকে বল পেয়ে বক্সে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ব্যবধান ৫-১ করেন রাফিনিয়া। ৫৬ মিনিটে ধাক্কা খায় বার্সা। এমবাপেকে ঠেকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে ফাউল করেন সেজনি। ভিএআর দেখে তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। প্রথমে অবশ্য এমবাপ্পে ডাইভ দিয়েছেন ভেবে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন তিনি। এই ফ্রিকিক থেকে গোল আদায় করে নেন রদ্রিগো। গাভির বদলি নামা দ্বিতীয় গোলরক্ষক ইনাকি পেনার হাতে লেগে বল ঢুকে যায় জালে। কিন্তু এটাই শেষ। ১০ জনের বার্সার রক্ষণ সে অর্থে ভাঙতে পারেনি রিয়াল। ম্যাচের প্রায় একেবারের শেষ দিকে ভালো একটি শট নিয়েছিলেন এমবাপে। তা ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক। ফলে বড় ব্যবধানেই জয় তুলে সুপার কাপের ট্রফি জিতে নেয় বার্সা।