ঢাকা ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খুলনার অবিশ্বাস্য হার

অকল্পনীয় জয়ে রংপুরের সাতে সাত

অকল্পনীয় জয়ে রংপুরের সাতে সাত

খুলনার ডাগআউটে বসে খুনসুটি করছিলেন আর হাসছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের অন্যদেরকেও দেখা গেল বেশ খোশমেজাজে। ১৮ বলে তখন প্রয়োজন ২২ রান। উইকেট বাকি তিনটি। এমন ফুরফুরে আবহই তো থাকবে! একটু পরে সেই মিরাজকে দেখা গেল প্রচণ্ড ক্ষোভে মাঠে বোতল ছুড়ে মারতে। কোচ তালহা জোবায়ের ক্ষিপ্ত হয়ে কাউকে বলছেন কিছু।

কারণ, ম্যাচটি তখন তারা হেরে যাওয়ার পথে! হ্যাঁ, এই ম্যাচটিও অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গেছে খুলনা টাইগার্স। আর হ্যাঁ, আরো একবার, আরো একভাবে প্রতিপক্ষের মুঠে থেকে বের করে নিয়ে অভাবনীয় জয়ের আনন্দে ভেসেছে রংপুর রাইডার্স। বিপিএলের সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচটি পৌঁছে গেল রোমাঞ্চণ্ডউত্তেজনার চূড়ায়।

ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি নজির মেলে ধরে ৮ রানের জয়ে রংপুর রাইডার্স ধরে রাখল তাদের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গত সোমবার রংপুর ২০ ওভারে তেলে ১৮৬ রান। প্রথম ১০ ওভারে রান তুলতে ধুঁকতে থাকা দলকে বড় স্কোরে নিয়ে যায় খুশদিল শাহর ৩৫ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় জয়ের পথে থাকা খুলনা শেষ পর্যন্ত আটকে যায় ১৭৮ রানে। আগের ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে যখন শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৬ রানের, রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ৩০ রান নিয়ে রূপকথার মতো এক জয় এনে দেন দলকে।

এর পর এবারের এই রুদ্ধশ্বাস জয় রংপুরের এটা সাত ম্যাচে সাত জন। দুই জয়ে আসর শুরু করা খুলনা হেরে গেল টানা তিন ম্যাচে। সপ্তদশ ওভারে আকিফ জাভেদের ওভারে যখন তিনটি বাউন্ডারি মারেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, ম্যাচের ফয়সালা তখনই হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল। তিন ওভারে সাত উইকেট নিয়ে স্রেফ ২২ রান লাগত খুলনার। আফিফ হোসেন ও মাহিদুল তখন দারুণ ছন্দে। অষ্টাদশ ওভারের প্রথম বলে শেখ মেহেদি হাসানকে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় আউট হলেন আফিফ (১৫ বলে ২৯)। ওই ওভারে এলো মাত্র চার রান। পরের ওভারের দ্বিতীয় আকিফকে স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড হলেন মাহিদুল। অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস গিয়ে ওভারের পঞ্চম বলে পুল করে চার মারার পর শেষ বলে ক্যাচ তুলে দিলেন মিড অফে। ওভার থেকে এলো ছয় রান, উইকেটের পতন দুটি। শেষ ওভারে খুলনার প্রয়োজন পড়ে ১২ রানের। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ওভারের প্রথম বলটি ফুল টস পেয়ে ব্যাটে লাগাতে পারলেন না মোহাম্মদ নাওয়াজ। পরের বল ফিল্ডার সোজা মেরে আবার পারলেন না রান নিতে। এর পর সাইফ করলেন ওয়াইড। পরের বলে দুই রান নেয়ার চেষ্টায় নাওয়াজ রান আউট সীমানা থেকে সাইফ হাসানের সরাসরি অসাধারণ থ্রোয়ে। চতুর্থ বলে রান আউট নাসুম আহমেদ। পঞ্চম বলে ফুল টসে লং অন সীমানায় ধরা আবু হায়দার। ১২ রানের মধ্যে পতন খুলনার ৬ উইকেটের। হারের দুয়ার থেকে জয় রংপুরের। খুলনার রান তাড়ায় ওপেনার দারভিশ রাসুলি আউট হন ১৫ বলে ১৭ করে। বড় রান তাড়ায় যে দম প্রয়োজন, দলকে সেই হাওয়ার জোগান দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনে নেমে চোখধাঁধানো পাল্টা আক্রমণ চালান খুলনা অধিনায়ক, নিশ্চিতভাবেই যা ছিল পরিকল্পিত। রেজাউর রহমান রাজাকে দুটি চার মেরে তার শুরু। তবে মূল চমক উপহার দেন পরে ওভারে। নাহিদ রানার টানা তিন বলে ছক্কা-চার-ছক্কা, রংপুরের গতি তারকাকে গুঁড়িয়ে দেয়ার পণ করে নেমেছিলেন যেন মিরাজ। মিরাজের সঙ্গে মোহাম্মদ নাঈম শেখের ৬৩ রানের জুটি খুলনাকে এগিয়ে দেয় রান তাড়ার পথে। ৩২ রানে খুশদিল শাহর বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন মিরাজ। সহজ সেই ক্যাচ নিতে পারেননি আকিফ জাভেদ। দুই রান পর ইফতিখারের বলে আবার ফাইন লেগেই ক্যাচ দেন তিনি। এবার বল মুঠোয় জমাতে ব্যর্থ হয় নাহিদ রানা। মিরাজ তবু টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে সেই শর্ট ফাইন লেগেই আকিফের হাতে ধরা পড়েন খুলনা অধিনায়ক (২৪ বলে ৩৯)। মিরাজের বিদায়ের পর নাঈম, আফিফরা দলকে রাখেন পথেই। আসরে নিজের প্রথম ফিফটিতে ৪১ বলে ৫৮ রান করেন নাঈম। আফিফও আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে ছুটতে থাকেন। শেখ মেহেদিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় নাঈমের ইনিংস। এর পর আফিফ ও মাহিদুল দলকে এগিয়ে নেন জয়ের খুব। এর পরই তাদের শেষের সেই দুঃস্বপ্ন। ম্যাচের শুরুতে রংপুর ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। দারুণ পারফর্ম করে ফিরে গেছেন অ্যালেক্স হেলস। তার জায়গায় স্টিভেন টেইলরকে একাদশে ফেরায় রংপুর। তার সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন তৌফিক খান তুষার। ম্যাচের শুরুতে ছিল ঝড়ের আভাস, তবে দমকা হাওয়া দিয়েই থেমে যায় তা।

প্রথম ওভারে দুটি চার মারেন দুই ওপেনার। পরের ওভারে নাসুম আহমেদকে ছক্কায় স্বাগত জানান টেইলর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ওপেনার বোল্ড হয়ে যান ৮ বরে ১৩ রান করে। তিনে নেমে সাইফ হাসান ১১ বলে৭ করে বোল্ড হন হাসান মাহমুদের বলে। তৌফিকের ইনিংস ছিল ভালো-মন্দের মিশেল। চারটি চার ও একটি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। তবে বের করতে পারেননি সিঙ্গল-ডাবলস। ১০ ওভারে কেবল ২ উইকেট হারালেও রংপুরের স্কোর ছিল মাত্র ৬৮। পরের ওভারেই আউট হয়ে যান তৌফিক (৩০ বলে ৩৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত