গত বছরের অক্টোবরে সব শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। প্রায় চার মাস পর আবারো মাঠে নামার সুযোগ এসেছে লাল সবুজের মেয়েদের। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দু’টি ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে সাবিনা খাতুনদের। এই দুটি ম্যাচ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৫ জানুয়ারি জাতীয় নারী দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছে। এই ক্যাম্প শুরু করতে গিয়েই বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে বাফুফে। ব্রিটিশ কোচ পিটার জেমস বাটলারের অধিনে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্তে অনড় সাবিনা খাতুনরা। শিষ্যদের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ ও বিরক্ত গুরু বাটলার। এমন অচলায়তন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নারী ফুটবলারদের ক্যাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে মাত্র ১২ জন ফুটবলার (অপেক্ষাকৃত জুনিয়র) জিম সেশনে অংশ নিয়েছেন। সেখানে ছিলেন না সাফজয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ সিনিয়র ফুটবলারদের কেউ। এ নিয়ে পিটার বাটলার জিম সেশন শেষে বাফুফে ভবন ছাড়ার সময় গাড়িতে উঠে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) জিম সেশন হয়েছে। ১২ জন খেলোয়াড় এসেছে। এটা ভালো দিক। সামনে অনুশীলনে কী হবে তা জানি না। আমার কোনও আইডিয়া নেই। আর আমি তো পেশাদার কোচ। কাজ করতে এসেছি। ওহ!, কাল তো জুম্মাবার (হেসে হেসে)। মসজিদে যেতে হবে।’ পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে ব্রিটিশ এই কোচ দায়িত্বে থাকবেন নাকি শুরুতেই শেষ বলবেন, সেই শংকাও তৈরি হয়েছে। মেয়েদের সঙ্গে বাটলারের দূরত্ব শুরু হয় গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে। অক্টোবরে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই মারিয়া, মাসুরা, কৃষ্ণার মতো সিনিয়রদের বাদ দিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলেন এ কোচ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচ হারতে হারতেই কোনোরকমে ড্র করে বাংলাদেশ। অনাকাঙ্ক্ষিত ড্রয়ের পরই মনিকা চাকমা প্রকাশ্যে আনেন বাটলারের সিনিয়র ফুটবলারদের অপছন্দের কথা। এরপর ফুটবলারদের চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতের ম্যাচে কোচ সিনিয়রদের নিয়েই একাদশ সাজাতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং দারুণ জয়ে তার ফল মেলে। ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় সাবিনা-ঋতুপর্ণারা।
নৈতিকভাবে এ বিজয়িনীদের কাছে হার মানতে হয়েছিল বাটলারকে। এরপরও বাফুফে নতুন করে এই ব্রিটিশ কোচকে নিয়োগ দেয় দুই বছরের জন্য। এখানেই মেয়েদের আপত্তি। কিন্তু বাফুফের দাবি হচ্ছে, তারা বাটলারকে দিয়েই চালাবে মেয়েদের ফুটবল। এজন্য এক বাফুফে কর্তাকে দিয়ে মেয়েদের বেশ হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মেয়েদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্য ১৮ জনকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানোরও গুঞ্জন বাতাসে ভাসছে। তবে বাফুফে মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলছেন, ‘শোকজ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি পরিবেশ যেন শান্ত থাকে। মেয়েরা যেন অনুশীলনে ফেরে। আমরা যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেবো তখন আপনাদের জানাবো।’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি, একইসঙ্গে কথা চলছে বাটলারের সঙ্গেও। সারাদিন আজ (গতকাল) এ নিয়ে কাজ করেছি আমরা।’
এদিকে বাফুফে কারণ দর্শাও নোটিশের পথে হাটলে মেয়েরা আরো কঠোর সিদ্ধান্তের দিকেও যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেয়ে ফুটবলার বলেছেন, ‘আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা এটাও জানি, বাফুফে হয়তো আমাদের কারণ দর্শাও নোটিশ দেবে। কিন্তু আমরা চিন্তা করছি গণহারে অবসরে চলে যাওয়ার। এটা ছাড়া কোনো পথ দেখছি না।’ এরপর নিজেদের অবস্থান নিয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমরা এই দেশকে সাফ শিরোপা উপহার দিয়েছি দুইবার। আমাদের পছন্দণ্ডঅপছন্দের কি কোনো মূল্য থাকবে না? যে কোচের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়েছে, তাকে আমরা চাইছি না, এই তো।’