বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসর নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একাধিক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগ এরই মধ্যে তদন্তও শুরু করেছে। সংবাদমাধ্যমোর খবর অনুযায়ী অন্তত ১৩ জন দেশি বিদেশি ক্রিকেটার আছেন এই তালিকায়। সে তালিকায় সবার উপরে রয়েছে এনামুল হক বিজয়ের নামটা। যার কারণে তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার খবরে রীতিমত বিস্মিত জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গণমাধ্যমকে বিজয় জানিয়েছেন, এ সব সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘(অভিযোগগুলো) মিথ্যা তো মিথ্যাই, এগুলো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিব্রত, কষ্ট পাচ্ছি। এত বছর আল্লাহ দিলে (হৃদয়ে ধারণ করে) ক্রিকেট খেলছি, বিপিএল সম্মানের সঙ্গে খেলছি, সঙ্গে বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। এখনো তো অনেক সময় পড়ে আছে। বাংলাদেশ দলকে বারবার প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। তা না হলে পরিশ্রমের দরকার কী? এনসিএল, বিপিএল, প্রিমিয়ার লীগ জান দিয়ে খেলে খেলে যদি এই ধরনের কথা শুনতে হয় কষ্ট তো লাগবেই।’ বিজয় যোগ করেন ‘আমি যেটাই দেখছি, খুবই অবাক হচ্ছি এবং কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের মিডিয়া যে একটা মানুষকে হেয় করে, কি মজা পাচ্ছে ভিউয়ের জন্য! সবার তো পরিবার আছে, বন্ধু আছে, কত মানুষ দেখে তাদের। ভক্ত অনুসারীদের কথা বাদই দিলাম। কাছের মানুষ স্ত্রী আছে, বাচ্চা আছে। এই সংবাদগুলো করে আসলে কি মজা পাচ্ছে?’
রাজশাহীর হয়ে ১২ ম্যাচে ৩৯২ রান করেছেন বিজয়। সেঞ্চুরিও আছে একটি। তাকে চাপমুক্ত রাখার জন্য শেষ দিকে নেতৃত্বে বদল আনে রাজশাহী। দলটি এখন অপেক্ষায় আছে প্লে-অফের। এর মধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফিক্সিং নিয়ে সংবাদ হতে থাকে। এ সব দেখার পর থেকে বিসিবির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তিনি। তার ভাষ্য, আকসু বা বিসিবি যে কোনো বিষয়ে যে কোনো ক্রিকেটারকে ডাকতে পারে, কথা বলতে পারে। তার মানে না যে অভিযোগ প্রমাণিত। বিজয় বলেন, ‘এখন তাদের উদ্দেশ্য কী? এগুলো নিয়ে আসলে খুব কষ্ট পাচ্ছি। কেন তারা এগুলো আসলে করল কোনো ধরনের সাক্ষী-প্রমান ছাড়া? মনে করেন, যে কাউকেই ডাকতে পারে বিসিবি, শুনতে পারে কি হয়েছে বা না হয়েছে। যে কোনো মানুষের সঙ্গেই কথা বলতে পারে। এর মানে এই না যে, সে অপরাধী। দুনিয়াতে সবার সঙ্গে সবার আলোচনা হতেই পারে। বিসিবি থেকেও কোনো কিছু আমাকে জানায়নি।’
বিসিবির কারো সঙ্গে এই অস্বস্তিকর ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিজয় বলেন, ‘আমি ফাহিম স্যারের সঙ্গে কথা বললাম, যে এরকম নিউজ আসছে। কারণটা কী? আমার অপরাধটা কী বা আমি কারো ক্ষতি করছি কি না কিংবা কী করলাম যে, এরকম নিউজগুলো আসছে? স্যার বললেন- ঠিক আছে আমি বিসিবিতে যাচ্ছি, দেখি কি করা যায়।’
এদিকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার খবরও বিজয় দেখেছেন গণমাধ্যমে, ‘কেউ আমাকে কিছু জানালো না যে, দেশত্যাগ করতে পারবো না বা আমি এটার মধ্যে জড়িত। আমি আসলে দেখছি আর অবাক হচ্ছি যে, এগুলো কেনো হচ্ছে আসলে। খুবই কষ্ট পাচ্ছি।’ এ সব ষড়যন্ত্র নাকি অন্য কিছু বুঝতে পারছেন না বিজয়, ‘ষড়যন্ত্র, নাকি... কি এটা তো আসলে আমি বুঝতেই পারছি না। ষড়যন্ত্র, নাকি ভিউয়ার চাচ্ছে, নাকি মজা নিচ্ছে, তাদের প্ল্যান আমি জানি না। আসলে কারা করাচ্ছে, কেনই বা করছে... আমাকে বলত যে, ভাই আমি এই কারণে করছি তাও আমি শুনতাম যে, কেন করছে। একদমই অবাক করা বিষয়।’
গণমাধ্যমে এ সব দেখার পর আইনি পথে হাটার কথা জানিয়েছেন বিজয়, ‘শুক্র-শনি তো বন্ধ ছিল, আমি যে কোনো লিগ্যাল অ্যাকশন নিবো সেটার তো সুযোগ ছিল না। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিউজগুলো শুরু হয়। এখন তো রোববার অর্থাৎ কাল (আজ) পর্যন্ত ওয়েট করা লাগতেছে। আর আমি যাচ্ছি, আইনজীবির সঙ্গে কথা হবে। একটা বড় স্টেপ তো আমি নিবোই। কারণ যেভাবে নেগেটিভ নিউজ হয়েছে, একে পজিটিভ করা অনেক ডিফিকাল্ট। কারণ, মানুষ নেগেটিভটাই পছন্দ করে শুনতে। সেক্ষেত্রে আমার থেকে ক্লিয়ার করা জরুরি। যে ব্যাপারটা কেমন আমি কত কষ্ট পাচ্ছি বা কি হচ্ছে।’
