জ্যামাইকায় এটিই ছিল লিওনেল মেসির প্রথম ফুটবল সফর। কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স কাপে ক্যাভালিয়ার এফসির সঙ্গে ইন্টার মায়ামির লড়াই। এমনিতে নিজেদের ম্যাচগুলি তিন হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার মাঠে খেলে থাকে ক্যাভালিয়ার। কিন্তু মেসির জন্যই এই ম্যাচ সরিয়ে নেয়া হয় জাতীয় স্টেডিয়াম কিংস্টনের ইন্ডিপেন্ডেন্টস পার্কে। মেসি খেলবেন বলে প্রতীক্ষায় ছিলেন জ্যামাইকার দর্শকরা। লম্বা সময় পর্যন্ত সেই দর্শকদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় মেসিকে ডাগআউটে বসে থাকতে দেখে। শেষ পর্যন্ত তাদের চাওয়া পূরণ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামানো হয় আটবারের ব্যালন ডি অর জয়ীকে। তিন ম্যাচ পর মাঠে নেমে গোলের দেখাও পেয়ে যান তিনি। মায়ামির জয় নিয়ে এমনিতে সংশয় খুব একটা ছিল না। মেসির গোল তাতে বাড়তি রঙের ছোঁয়া দিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স কাপের শেষ ষোলো সিরিজের দ্বিতীয় লেগে ক্যাভালিয়ার এফসিকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ আটে পৌঁছে গেছে মায়ামি। দুই লেগে ৪-০ গোলের অগ্রগামিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো তারা।
দ্বিতীয়ার্ধে বেঞ্চ ছেড়ে মেসি মাঠে নামতেই মায়ামির আক্রমণের ধার বেড়ে যায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি স্পোর্টিং কানসাস সিটির বিপক্ষে ম্যাচ খেলে প্রথমবার মাঠে নামেন তিনি। লোড ম্যানেজমেন্টের কথা ভেবে মায়ামি কোচ হাভিয়ের মাসচেরানো মেসিকে তিন ম্যাচ বিশ্রামে রাখার কথা বলেছিলেন। ৫৩তম মিনিটে তিনি লুইস সুয়ারেজের বদলি হয়ে মাঠে নামতেই কিংস্টনের ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্কের দর্শকেরা হর্ষধ্বনিতে মেতে ওঠেন। জ্যামাইকাতে প্রথমবার মেজর লিগ সকার ক্লাবের হয়ে মাঠে নেমে ছাপ রাখেন মেসি। শেষ বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে জালের বিপরীত কোণা দিয়ে বল জড়ান। বল বানিয়ে দেন ১৮ বছর বয়সী সান্টিগো মোরালেস।
এর আগে গত বুধবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মাসচেরানো মেসিকে নিয়ে জ্যামাইকা সফরের কথা নিশ্চিত করেন। তবে তাকে খেলাবেন কি না তা পরিষ্কার করে বলেননি। ম্যাচ শেষে কোচ বললেন, ‘লিও তিন-চার ম্যাচ খেলেনি। অবশ্যই আমরা তাকে খেলাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাকে মাঠে নামানোর উপযুক্ত সুযোগ খুঁজছিলাম আমরা। আমি মনে করি এটা ভালো ছিল, কারণ সে ভালোবোধ করেছে। সে গোল করলো, জ্যামাইকার লোকেরা তাকে দেখলো। তাই এই রাতটা প্রত্যেকের জন্য দারুণ।’ ক্যারিবিয়ান সফরে মেসির এই ম্যাচে খেলা ছিল প্রত্যাশিত। তাকে ও তার সতীর্থদের জ্যামাইকার ক্রীড়ামন্ত্রী অলিভিয়া গ্রাঞ্জ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ক্যাভালিয়ার সাধারণত ৩ হাজার আসনের স্টেডিয়ামে খেলে থাকে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স কাপের ম্যাচ সরিয়ে নেয় ৩৫ হাজার আসনের জাতীয় স্টেডিয়ামে।
ঘরের মাঠে প্রথম লেগে ২-০ তে জিতে এগিয়ে ছিল মায়ামি। দ্বিতীয় লেগে প্রথমার্ধে গোলমুখ খোলে তারা। আলেন্দেকে বক্সের মধ্যে ফাউল করলে পেনাল্টি থেকে গোল করেন সুয়ারেজ। ৩৭তম মিনিটে টানা দুই লেগে গোলের দেখা পেলেন উরুগুয়ান স্ট্রাইকার। মায়ামি চ্যাম্পিয়ন্স কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এলএএফসির বিপক্ষে খেলবে। এমএলএস ওয়েস্টার্ন কনফারেন্স টিম শেষ ষোলোতে হারিয়েছে কলাম্বাস ক্রুকে।
এ নিয়ে ৫১টি দেশে অফিসিয়াল কোনো ম্যাচ খেললেন লিওনেল মেসি। বিমানবন্দরে মেসিসহ পুরো মায়ামি দলকে স্বাগত জানান জ্যামাইকার সংস্কৃতি, লিঙ্গ, বিনোদন ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী।
এই ৫১ দেশের মধ্যে মেসি গোল পেলেন ৩৬ দেশেই। ২০১১ সালে ঢাকায় আর্জেন্টিনার হয়ে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট খেলেছিলেন মেসি। আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচটিতে ৩-১ গোলে জিতলেও জালের দেখা পাননি মেসি। তাতে যে ১৫ দেশের মাঠে মেসি গোল পাননি, সেই তালিকায় যোগ হয়ে যায় বাংলাদেশের নাম। মেসির ক্যারিয়ার গোল এখন ৮৫৩টি। সবচেয়ে বেশি ৬২৪টি গোল করেছেন স্পেনে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৫টি যুক্তরাষ্ট্রে। আর আর্জেন্টিনায় করেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ গোল।