বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। তাই দিন যতই গড়াচ্ছিল ততই চিন্তা বাড়ছিল সাইফুল বারী টিটুর। অবশেষে সাবেক এই ফুটবলারের চিন্তা দূর করল বাফুফে। টিটুর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফলে চলতি বছর জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য কামরুল হাসান হিলটন মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্যাকনিক্যাল কমিটির সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে সভাপতির অনুমোদনক্রমে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের তিন মাসের জন্য চুক্তি বেড়েছে।’
নারী দলের ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে দুই বছর ও পুরুষ দলের স্পেনিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার চুক্তি আরও ১৬ মাস বৃদ্ধি হয়েছে চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি। সেখানে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের মাত্র তিন মাস কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যানের উত্তর, ‘আমরা নতুন কমিটি আরও পর্যবেক্ষণ করব এ জন্যই মূলত তিন মাস। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ফুটবল ফেডারেশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। ফুটবল উন্নয়নের জন্য আমরা এই পদে বিদেশি নিয়েও ভাবছি।’ টিটুর মেয়াদ সাময়িক বৃদ্ধি পেলেও বেতন-ভাতাদি অবশ্য বাড়েনি। এ নিয়ে তার মন্তব্য, ‘সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির সভায় প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধি নয় বরং আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্টাফ না রাখার পক্ষে। সেই আলোকে বেতন বৃদ্ধি হয়নি।’ ১৭ ফেব্রুয়ারি টেকনিক্যাল কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটিতে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের বিষয়টি আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান একাধিক সদস্য। কমিটির একজন জানান, সেই সভায় আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি তবে কমিটির চেয়ারম্যানকে ফেডারেশনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সভায় এটি অবহিত করার কথা হয়েছিল। যাকে নিয়ে আলোচনা সেই টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও সেই কমিটির সভায় ছিলেন। ছাইদ হাসান কানন, সত্যজিত দাস রুপু, ইকবাল, গাউস, বিজনের মতো সাবেক জাতীয় ফুটবলার বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে থাকলেও টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে কামরুল হাসান হিলটনকে। তার কমিটিতে সাবেক দুই জাতীয় ফুটবলার মাসুদ রানা ও মিজানুর রহমান ডন ছাড়া আর তেমন কোনো টেকনিক্যাল ব্যক্তি নেই। কমিটির অনেক সদস্যই ফুটবলাঙ্গনে অপরিচিত। এই কমিটির মাধ্যমে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে জবাবদিহিতা করে টেকনিক্যাল কার্যক্রম কতটুকু হবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। তাবিথ আউয়াল বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর বড় পদগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনেননি। কাজী সালাউদ্দিনের নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের উপরই ভরসা রেখে চলছেন। সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল। ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর নির্বাহী কমিটির সভায় একাধিক সদস্য ছয় মাসের প্রস্তাব করলেও শেষ পর্যন্ত দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। সাধারণ সম্পাদক মেয়াদ বাড়ানোর মাস খানেক পর দুই বিদেশি কোচ হ্যাভিয়ের এবং বাটলারের চুক্তি বেড়েছে এক বছরের বেশি সময় করে। নির্বাহী সভায় আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় ফেডারেশনের অনেকের এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দুই কোচের কর্মকাণ্ডই এরইমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। দুই কোচের পর এবার টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের মেয়াদ বাড়ল। আধুনিক ফুটবলে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ। দেশের ফুটবলের কৌশল, রূপরেখা ও নীতি-নির্ধারণ টেকনিক্যাল ডিরেক্টরই করে থাকেন। পাঁচ-দশ বছর পর দেশের ফুটবল কোথায় থাকবে? এজন্য কোন পথে হাঁটা উচিত এ রকম রূপরেখা দেশি-বিদেশি মিলিয়ে চারজন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর কাজ করলেও কেউই করেননি। গৎবাধা কোচিং লাইসেন্স আর জুনিয়র পর্যায়ে দল পরিচালনাই বাংলাদেশের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পরিসীমা যেন। কোচিং লাইসেন্স প্রোগ্রামে ফেডারেশনের আয় আর কোচের সংখ্যাও বাড়ে। এতে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও তৃপ্ত আর ফেডারেশনও খুশি। আদতে দেশের ফুটবলে কি প্রভাব রাখে এটা সেটাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করে না ফেডারেশন। বাংলাদেশে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পদের শুরু ২০০৯ সালে কিংবদন্তী গোলরক্ষক সাবেক জাতীয় অধিনায়ক গোলরক্ষক শহিদুর রহমান চৌধুরী সান্টুর নিয়োগের মাধমে। কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সান্টুকে আমেরিকা থেকে নিয়ে এসে এই পদে বসান। বছর দেড়েক কাজের পর সান্টু আমেরিকায় ফিরে গেলে বায়েজিদ জোবায়ের আলম নিপু তার স্থলাষিভিক্ত হন। তিনি বছর পাঁচেক ছিলেন। ২০১৬-২৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে প্রায় ৬ বছর ছিলেন ব্রিটিশ পল স্মলি বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন। ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল এক বছরের জন্য সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ টিটুকে এই পদে নিয়োগ দেয় ফেডারেশন।