চলতি বছরের অক্টোবরে ভারতের মাটিতে বসতে যাচ্ছে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। আট জাতির এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে স্বাগতিক ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। সরাসরি খেলার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনেও। কিন্তু জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হারায় টিকিট কাটতে পারেনি নিগার সুলতানার দল। তাই বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে হবে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। আগামী ৯ এপ্রিল লাহোরে পর্দা উঠবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি এই বাছাইপর্বকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটি আগের দিন তার সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ ছাড়ার আগে নারী দলের কোচ সারোয়ার ইমরান তারই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।
রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে হবে ৬ দলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব। পয়েন্ট টেবিলের সেরা দুইয়ে থাকা দুটি দল জায়গা করে নেবে ভারত বিশ্বকাপে। খেলতে হবে থাইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ১০ এপ্রিল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাঠের লড়াই শুরু হবে। পাঁচটা ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দলের নতুন যুক্ত হওয়া কোচ সারোয়ার বলেছেন, ‘সেখানে (পাকিস্তানে) আমাদের পাঁচটা ম্যাচ আছে। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগিয়ে পাঁচটাই জিততে চাই।’
বাছাইপর্ব বাংলাদেশের জন্য মোটেও সহজ নয়। বাংলাদেশের মেয়েদের দ্বিতীয় ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। দিবারাত্রির ম্যাচটি হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ১৩ এপ্রিল।
একই মাঠে ১৫ এপ্রিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে তারা। দুটি কঠিন ম্যাচে ১৭ এপ্রিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১৯ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ খেলবে। দলটির কোচ এনিয়ে বলেছেন, ‘দুটি শক্তিশালী দল আছে আমাদের সঙ্গে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। অন্য দলগুলো যেমন আয়ারল্যান্ড, তাদেরও ছোট করে দেখছি না। আমরা সবার সঙ্গে লড়াই করে একের পর এক ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে উঠতে চাই।’ পাকিস্তানের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদেরও দারুণ কিছু যে করে দেখাতে হয়, সেভাবেই মিরপুরে প্রস্তুতি ক্যাম্প হয়েছে বলে জানালেন সারোয়ার, ‘আমরা এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল।
আমাদের যে ক্যাম্প হয়েছে, আমরা বিশেষ এই কাজগুলো করেছি। ব্যাটিং উইকেটে কীভাবে বোলিং করতে হবে, কীভাবে ব্যাটিং করতে হবে, স্ট্রাইকরেট কেমন হবে সেগুলো অনুশীলন করিয়েছি। ব্যাটিং উইকেট হলে এখানে (পাকিস্তানে) ২৫০-এর বেশি রানের উইকেট হবে। ব্যাটাররা পারবে বলে আমি আশা করছি।’
কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলেছেন, ‘খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট, বিসিবি সবারই প্রত্যাশা ছিল সরাসরি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। (গত জানুয়ারিতে) ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটি ম্যাচ জেতার পর আমাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাসও এসেছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সেটা করতে পারিনি। আমাদের কারণেই বড় একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপে যেতে হবে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মধ্য দিয়ে আমরা সে প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন দল হিসেবে ভালো ক্রিকেট খেলা গেলে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘কোয়ালিফাইং রাউন্ড সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ, এখানে ভুল করলে বড় সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রতিটি দলই চায় বিশ্বকাপ খেলতে। অথচ বিশ্বকাপে উন্নীত হবে মাত্র দুটি দল। সেদিক থেকে বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্ট খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমরা কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’ জ্যোতি বলেন, ‘আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভালো করলে দলের কাজে লাগবে। আমাদের পারফরমার বেরিয়ে আসা উচিত। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারে এ রকম কিছু খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে যদি পারফর্ম করতে পারি, তাহলে উন্নতি দেখতে পাবেন। তবে এ মুহূর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। না পারলে নারী ক্রিকেট নিচে নেমে যাবে। আর বিশ্বকাপ খেলতে পারলে দেশের ক্রিকেট ফোকাসে থাকবে। চাপমুক্ত থেকে আমরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।’
এ বছরের অক্টোবরে ভারতে শুরু হচ্ছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এই ছয় দল সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার টিকিট কেটেছে। বাছাইপর্ব থেকে উঠবে আরও দুই দল। আট দলের বিশ্বকাপে হবে ৩১ ম্যাচ।