কোচ পিটার জেমস বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা। পরে তাদের ছাড়াই এগুতে থাকে জাতীয় দলের কার্যক্রম। তাদের বাদ দিয়ে চলার পণ করে ফেলেন বাটলার। তৈরি হয় গভীর অচলাবস্থা। অবশেষে দীর্ঘ ৬৮ দিন পর সেই সংকট কেটেছে। স্বস্তি ফিরেছে ফুটবলাঙ্গণে। বরফ গলার আভাস পাওয়া গিয়েছিল আগের দিনই। সকল মান অভিমান ভুলে কোচ পিটার বাটলারের অনুশীলনে ফিরেছেন ‘বিদ্রোহী’ নারী ফুটবলাররা। গত বছরের অক্টোবরে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা আবাহনীর ধানমন্ডির মাঠে অনুশীলনে নামেন সানজিদা-কৃষ্ণারা। সকাল ৬টায় ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করে জাতীয় নারী ফুটবল দল। যেখানে কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা ১৮ খেলোয়াড়ের মধ্যে ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, মাতসুশিমা সুমাইয়া ও সাবিনা খাতুন বর্তমানে ভুটানে থাকায় অনুশীলনে উপস্থিত ছিলেন না। দেশটির ক্লাব পারো এফসির হয়ে লিগে খেলার জন্য সেখানে গেছেন তারা। এর বাইরে থাকা ১৪ জনের মধ্যে তহুরা খাতুনের অনুশীলনে না থাকলেও কাল ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। বাকি ১৩ জন শিউলি আজিম, মোসাম্মাৎ সাগরিকা, রুপনা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সানজিদা আক্তার, নিলুফা ইয়াসমিন, মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, কৃষ্ণা রানী, স্বর্ণা রানী মণ্ডল, সাথী বিশ্বাস ও নাসরিন আক্তার অনুশীলনে ফিরেছেন। সব মিলিয়ে আজকে অনুশীলন করেছেন ৪৪ জন নারী ফুটবলার। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে এই অনুশীলন। মিয়ানমারে হবে টুর্নামেন্টের বাছাই পর্ব।
এর আগে বিদ্রোহ করায় ১৮ ফুটবলার ছাড়াই কোচ বাটলার তরুণ দল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যান। দুই ম্যাচই বাংলাদেশ হেরে যায়। যদিও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্তারা দুই পক্ষকে দফায় দফায় বোঝান। সেই প্রেক্ষিতে দুই মাস পর সোমবার পুনরায় ক্যাম্প শুরু হলে বিদ্রোহী খেলোয়াড় ও কোচণ্ড দুই পক্ষ প্রথমবার আলোচনার টেবিলে বসে। এতে কোচ আগের সব ঘটনা ভুলে যাওয়ার অনুরোধ জানান। খেলোয়াড়েরা খানিকটা নমনীয় হন। যার ফলে অনুশীলনে যোগ দেন বিদ্রোহী ফুটবলাররা।
এদিন স্বাভাবিক পরিবেশেই অনুশীলন হয়েছে জানিয়ে গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বল জানান, অনুশীলন হয়েছে স্বাভাবিক পরিবেশেই। লম্বা সময় ক্যাম্পের বাইরে থাকা সানজিদা-নিলুফা ইয়াসমিন নীলাদের ফিটনেস নিয়ে খুব বেশি দুর্ভাবনা নেই বলেও জানালেন তিনি। ‘পাসিং ড্রিল, পজিশন এবং ফিটনেস ট্রেনিং হয়েছে। অনেক দিন পরৃ এই হিসেবে সবাই কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক ভালো করেছে। যদিও লম্বা সময় খেলার বাইরে থাকায় ফিটনেসের অবস্থা আপ টু দ্য মার্ক নয়, তবে একেবারে খারাপও নয়। দ্রুতই ফিটনেস ফিরে পাবে মেয়েরা।’ গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আরও বলেন, ‘টানাপোড়েনের কিছু নেই। যারা বিদ্রোহ করেছিল, তারাও আমাদেরই খেলোয়াড়, আমাদেরই মেয়ে। তারাও খেলতে চায় বলে ক্যাম্পে ফিরেছে। আশা করি, সবকিছু আগের মতোই চলবে।’
গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতেই অবশ্য বাফুফের নারী উইংস প্রধান মাহফুজা খাতুন কিরণ বলেছিলেন, শিগগিরই জাতীয় দলের ক্যাম্পে ফিরবেন সাবিনা খাতুনরা। ইংলিশ কোচ বাটলারের সঙ্গে গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে থেকেই দ্বন্দ্ব তৈরি হয় সিনিয়র ফুটবলারের। এই কোচকে সাফের পর আরও দুই বছরের চুক্তিতে রেখে দেয়া হলে বেঁকে বসেন সাবিনারা। গত ৩০ জানুয়ারি ইংলিশ কোচের বিরুদ্ধে ‘গালিগালাজ করা’, ‘বডি শেমিং’, ‘মানসিক নির্যাতন’-এর মতো গুরুতর অভিযোগ করে বিদ্রোহ করে ১৮ ফুটবলার। বাটলারের থাকলে ‘পদত্যাগ’-এর হুমকিও দেন তারা। এক পর্যায়ে বাটলারও বলে দেন বিদ্রোহীরা থাকলে অনুশীলন করাবেন না তিনি। তবে মাঝের সময়ে আলোচনায় সব পক্ষ নমনীয় হওয়ায় সমাধানের পথ খোলে। দলীয় সূত্রের খবর, গত সোমবারের বৈঠকে মারিয়া-রূপনাদের মতো বাটলারও বলেছেন, অতীতের বিষয়গুলো ভুলে গিয়ে নতুন করে সব কিছু শুরু করার। তবে এদিনের অনুশীলন, ক্যাম্পের আবহ নিয়ে ইংলিশ কোচ তেমন কিছু বলতে চাইলেন না।